ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্কুলে যেতে নৌকাই ভরসা

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

স্কুলে যেতে নৌকাই ভরসা

নৌকায় চড়ে স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

এতটা পথ সরু আইল আর ডোবা-নালার পাড় দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। মাঝে মধ্যেই পা ফসকে কাঁদা পানিতে পড়ে বই-খাতা নষ্ট হয়। পোশাকও ভিজে যায়। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় তাদের খুব কষ্ট হয় এমন করুণ সুরে শেখপাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরাইয়া পারভিন, রুপালি, সৌরভ হাসান, ছানি আহমেদ, ওলি উল্লাহ, ইয়াছিন আলীরা জানায়, ঝড়-বৃষ্টি উপক্ষো করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই তাদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়।

বর্ষা মৌসুমে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন দুর্দশা দেখার কেউ নেই।  চারদিকে থৈ থৈ পানি। তবুও চলছে পাঠদান। শিক্ষার্থীরাও থেমে নেই। অদম্য স্পৃহা নিয়ে স্কুলে যায়। এই ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়ার জন্য বর্ষায় নৌকা একমাত্র ভরসা। শুকনো মৌসুমে সরু আইল আর ডোবা-নালার পাড় দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।

তাড়াশ উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেখপাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সগুনা ইউনিয়নের সান্দুরিয়া, প্রতিরাম চরকুশাবাড়ি কাটাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নৌকায় পারাপার করতে হয়। আর জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন গুনতে হয় ১০ টাকা।

স্থানীয় কয়েক অভিভাবক জানান, উপজেলার মাগুড়াবিনোদ সগুনা ইউনিয়নের ছয়টি বিদ্যালয়ের শিশুদের যাতায়াতের এমন করুণ অবস্থা কয়েক যুগ ধরেই। ঝড়-বৃষ্টি উপক্ষো করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই কোমলমতি শিশুরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ম্যাগনেট জানান, ইতোমধ্যে আমি হামকুড়িয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। এখন তো ব্রিজ করা সম্ভব নয়। তবে পানি কমলে সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নিয়মিত যেন চলাচল করতে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  

প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন খান বলেন, উপজেলার ছয়টি প্রতিষ্ঠান চলনবিলের মধ্যে অবস্থিত। যার ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৌকায় পারাপার হতে হয়।

মাদারীপুরে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান

নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নির্মাণের সাত বছরের মধ্যেই নতুন স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপরেও জরাজীর্ণ দুটি ভবনে চলছে পাঠদান। ছাড়াও বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক, সীমানা প্রাচীরসহ রয়েছে নানা সমস্যা। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন ভবনের দাবি তুললেও তা এখনো নির্মাণ হয়নি।

জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেই ভবনেই চলছে পড়াশুনা। দুটি কক্ষ থাকলেও ক্লাসরুমের সংকট থাকায় একটি রুমের মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সিহাব বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ভবনের পাশে বসেই আমরা খেলছিলাম। তখন ভবনের সানশেড থেকে পলেস্তারা খসে আমাদের পাশে পড়েছিল, তখন আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম।পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা বলেন, এই ভবনের দরজা জানালা নেই। তাই একটু বৃষ্টি হলে আমাদের বইপত্রও ভিজে যায়। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান হাওলাদার বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবনের যে অবস্থা, তাতে যে কোনো মুহূর্তেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি অনুরোধ করব, এই ভবনটি যেন নতুন ভবন করা হয়। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষই জরাজীর্ণ, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্লাস করতে পারছে না।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আবুল বাসার বলেন, বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন জরুরিভাবে দরকার। ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দাতুন্নেসা রূপা বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। তাই এর মেরামত নতুন ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×