
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি স্বাধীনতার আগে থেকেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই আসন থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ। তিনি আমৃত্যু এই আসনের এমপি ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে এই আসনে একটা শূন্যতা দেখা যায়।
ওই সময়ে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ না নেওয়ায় এই আসনে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মো. শাহীনুর পাশা। পরে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রবাসী অধ্যুষিত আসনটিতে নির্বাচিত হন এম এ মান্নান। বর্তমানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী।
ওয়ান-ইলেভেনের পট পরিবর্তনের পর থেকেই এম এ মান্নান বারবার নির্বাচিত হয়ে আসনটিকে পুনরায় নৌকার শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানই এগিয়ে রয়েছেন।
তবে প্রয়াত জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ (ডন) পিতার এই আসনে প্রার্থী হতে এবং নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য দলের রাজনৈতিক অঙ্গনে লড়ে যাচ্ছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম নয়।
এই দুই হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিপরীতে রয়েছেন আশির দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। তিনি তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তুখোড় এই ছাত্রনেতা ১৯৮৬ সালে স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত তিনি দেশে আসছেন। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, পৌর শহরের পাড়া মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। তিনিও এবার দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন।
বিগত সময়ের বিভিন্ন বন্যা ও করোনাকালে তিনি ত্রাণ-সাহায্য নিয়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে বিএনপি-জামায়াত জোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑ বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। দেশের রাজনীতির এমন পরিস্থিতিতে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে হচ্ছে অন্য এক হিসাব-নিকাশ।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর থেকে বা এর আগে থেকেই এ আসনে দলের নিজস্ব কোনো নেতাকে মনোনয়ন দিচ্ছে না বিএনপি। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে বিভিন্ন যৌক্তিক দিক চিন্তা করে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নিজেদের দলীয় ব্যক্তির হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন এই দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শে বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন তারা। কিন্তু বিনিময়ে নিজের দলের কোনো সংসদ সদস্য তারা পাননি। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ওই সময়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা শাহীনুর পাশা। এরপরের প্রতিটি নির্বাচনে জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন তিনি। এবার জোটে জমিয়ত না থাকায় নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীদের আগ্রহ বেশি। তাই অন্য দল থেকে ব্যক্তি এনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য দলের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের মধ্যে জোরালো দাবি উঠেছে।
বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে তারেক রহমানের সব সময় কাছাকাছি থাকা যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান কর্নেল (অব) আলী আহমদ, আলহাজ মালেক খান ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ। তারা সবাই দলীয় প্রতীক ধানের শীষের জন্য লবিং করে চলছেন লন্ডনসহ দলের হাইকমান্ডে।