ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

নিষিদ্ধ থাকবে তিন চাকার যান ও মোটরবাইক

বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে যাবে ২৯ অক্টোবর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে যাবে ২৯ অক্টোবর

কর্ণফুলী তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেল

নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার পর চালু হওয়ার জন্য প্রস্তুত কর্ণফুলী তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেল। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করবেন। পরদিন থেকেই এ পাতাল পথ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলবে চারলেন বিশিষ্ট এ টানেল ধরে। তবে তিন চাকার যানবাহন ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে টানেলে। এর মাধ্যমে ওয়ান সিটি টু টাউনে উন্নীত হওয়ার পথে বড় একটি ধাপ এগিয়ে যাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। 
বঙ্গবন্ধু টানেলে নিরাপত্তা ও সতর্কতার বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। টানেল এলাকায় গেলে যদি কারও কাছে এফএম রেডিও চালু থাকে, তাহলে আটটি এফএম রেডিও চ্যানেলে টানেল ব্যবহারের নির্দেশনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকবে। এ ছাড়া টানেল নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা ও গুজব ছড়ালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী টানেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর জনসাধারণের জন্য টানেল খুলে দেওয়া হবে। টানেলের প্রি-কমিশনিং শেষ। এখন সেইফটি ড্রিল হবে। এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এটি সুন্দর রাখা সকলের দায়িত্ব। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) খেয়াল রাখবে। তাদের  বেশ কিছু দায়িত্ব আছে। টানেলের সুফল পেতে এন্ট্রি ও এক্সিট সহজ করা জরুরি। এই টানেলে গাড়ি চলবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে। তবে শুরুতে গতি কিছুটা কম রাখতে হবে, যাতে সবাই অভ্যস্ত হতে পারে। তবে মোটরসাইকেল বা অটোরিক্সার মতো তিনচাকার বাহন (থ্রি হুইলার) এ টানেলে চলবে না। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে টানেল করা হয়েছে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের যেসব মেগা প্রকল্প চলমান, সেগুলোর সুফলের জন্য। জনসাধারণের জন্য বাস সার্ভিস থাকবে।
টানেল এলাকায় এফএম রেডিওতে স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনা চলার কথা জানিয়ে সেতু সচিব বলেন, টানেল এলাকায় গেলে আপনার গাড়িতে যদি এফএম রেডিও চালু থাকে, তাহলে আটটি এফএম রেডিওতে টানেল ব্যবহারের নির্দেশনা চলতে থাকবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুইতীরের চিত্র পাল্টে যাবে। এখানকার অর্থনৈতিক কর্মকা-ের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে সরকার আশা করছে জানিয়ে সচিব বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে যুক্ত করবে এই সুড়ঙ্গপথ। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।
প্রস্তুতি সভায় বেশ কিছু কাজ শেষ করার তাগাদা এসেছে। টানেল উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে আসায় আনোয়ারা প্রান্তে কক্সবাজারমুখী সড়ক সম্প্রসারণ, পতেঙ্গা গোল চত্বরে সড়ক ব্যবস্থাপনা, পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার স্টেশন নির্মাণ এবং ডাম্পিং এরিয়া নির্ধারণের কাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, আনোয়ারা অংশে চাতরী থেকে শিকলবাহা পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শেষ না হলে মানুষ কষ্ট পাবে। উদ্বোধনের পরদিন থেকে ট্রাফিক হবে অনেক বেশি। প্রচুরসংখ্যক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করার প্রস্তুতি রাখতে হবে। মানুষ যেন কষ্ট না পায়। 
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, থানার প্রস্তাব কেবিনেটে আছে। আপাতত ক্যাম্প করতে হবে। ডাম্পিং খুব জরুরি। ওয়ে মেশিনে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি আসলে সরানো বা রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। পতেঙ্গা গোলচত্বর এলাকায় এন্ট্রি উদ্বোধনের পর কলাপ্স করবে। এত গাড়ির লোড নিতে পারবে না। বড় যানবাহন ঘুরতে গেলে সব গাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে। আন্ডারপাস ওভারপাসসহ স্ট্রাকচার পর্যাপ্ত না হলে গাড়ি ফ্লো স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। আউটার রিং রোডের দুই পাশে টার্মিনাল। সেখান থেকে গাড়ি সরাসরি মূল রোডে উঠছে। এপ্রোচ রোড তাদের নেই। সেসব গাড়িও গোল চত্বরে চলে যাবে। প্রচুর স্ট্রাকচারাল চেঞ্জ দরকার।  
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, চউকের নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ভোগান্তি আরও বাড়বে। চট্টগ্রাম বন্দর আইনেও আছে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাইভেট অফডক থাকবে না। কিন্তু হয়েছে। এটা যত দ্রুত সম্ভব রিমুভ করতে হবে। না হলে বিমানবন্দর সড়কে এত বেশি ট্রাফিক কনজেশন হবে যে পরে আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এসব বিষয়ে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। 
টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, পুলিশ ক্যাম্পের কাজ ডিসেম্বরে  শেষ হবে।

টানেলে কনস্ট্রাকশন ও মেনটেইনেন্স দুটি ভাগ। সিভিল কাজ শেষ। ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজ চলছে। এটা চ্যালেঞ্জিং। টানেলে বায়ু প্রবাহ ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমসহ সাতটি সিস্টেমের কাজ করতে হয়েছে। ট্রায়ালও করেছি নরমাল মুডে। এবার ইমার্জেন্সি মুডে ট্রায়াল করব। এ মাসের শেষে সেটা করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনি বলেন, শুরুতে তেমন সমস্যা হবে না। চ্যালেঞ্জিং ছিল ক্রস প্যাসেজিং, সেটাতে সফল হয়েছি ।
টানেল নিয়ে গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নিয়ে কোনো গুজব ছড়ানো হলে কিংবা নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার  মো. তোফায়েল ইসলাম।
মঙ্গলবার প্রস্তুতি সভায় তিনি বলেন, টানেল আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটা নিয়ে কেউ গুজব ছড়ালে বা প্রপাগান্ডা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। গণমাধ্যমের কর্মীদেরও অনুরোধ, এটা আমাদের জাতীয় অর্জন। আশা করি আপনারা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন। 
যে ৭ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সামনে রেখে টানেল ॥ চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীরে ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিতকরণ, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়াতে এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, ঢাকা চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে নতুন একটি শহরকে ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে তোলা এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান দুটি সেতুর ওপর  যানবাহনের বাড়তি চাপ কমানো।

×