ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে উপকূলের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে উপকূলের মানুষ

পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে তলিয়ে যাওয়া মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরছেন কৃষক

বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয় উপকূলীয় মানুষের। জলবায়ু পরিবর্তনে তিন শতাধিক ছোট-বড় প্রবহমান খাল ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। দিন দিন কৃষিজমি অকৃষিজমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ফসলি মাঠের মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটভাঁটিতে। নদীগর্ভ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এ সকল প্রতিকূলতা মেনে নিয়ে জীবন-সংগ্রামে তবুও থেমে নেই এ উপজেলার মানুষ।
টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো, অস্তিত্ববিহীন হারিয়ে যাওয়া খালগুলো পুনঃখনন, প্রবহমান খালের উৎসমুখে স্লুইসগেট, পর্যাপ্ত মিনি পুকুর নির্মাণ করা হলে লবণাক্ততা কাটিয়ে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা। বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত চার যুগে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের হয়েছে অভিবাসন। এক হাজার ৫৫ হেক্টর ফসলি জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। তিন শতাধিক ছোট-বড় খাল তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে অধিকাংশ বেদখল ও মিশে গেছে ফসলি জমির সঙ্গে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৫ কিলোমিটার দুটি খাল ও বিএডিসির মাধ্যমে ১৮ কিলোমিটারের আটটি খাল পুনঃখনন করেছে যাতে বৈরী আবহাওয়ার প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠায় অপ্রতুল। 
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় জানান, উপজেলার বিশেষ করে জিউধরা, বহরবুনিয়া, নিশানবাড়ীয়া ও পঞ্চকরন ইউনিয়নে আট হাজার ৭৫০টি গলদা ঘের ও ১২শ’ ৭৬টি বাগদা চিংড়ি ঘের। এ ছাড়াও তিন হাজার ৭৬টি বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে চাষিদের প্রতিবছর আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে না।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন,  এ উপকূলীয় অঞ্চলে অগভীর নলকূপে আর্সেনিক ও গভীর নলকূপে লবণাক্ততা ও আয়রন অতিরিক্ত মাত্রায়।

২০২২ সালে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের জরিপে ২২% আর্সেনিক পাওয়া যায়। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে বিকল্প ব্যবস্থায় রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং পদ্ধতিতে (বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ) পানির চাহিদা পূরণ করতে সরকারিভাবে তিন হাজার পরিবারের মাঝে তিন হাজার লিটার পানি ধারণকারী ট্যাঙ্ক বিতরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ ও লবণসহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে গ্রামীণ অবকাঠামো, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।   
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাবির বলেন, এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ২৮৫টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে। তার মধ্যে ৫৩টি স্কুল কাম সাইক্লোন ভবন রয়েছে। নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোতে নতুন সাইক্লোন ভবন নির্মানের প্রস্তাবনা দেওয়া রয়েছে।

×