
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের হাওয়া বইতে শুরু করেছে সারাদেশে
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের হাওয়া বইতে শুরু করেছে সারাদেশে। এর প্রভাব পড়েছে নওগাঁ-২ আসনেও (ধামইরহাট-পত্নীতলা)। এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি নওগাঁ-২ আসন গত প্রায় ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে। পরিণত হয়েছে নৌকার শক্ত ঘাঁটিতে।
নওগাঁ-২ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মো. শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু। তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপির আব্দুর রউফ মান্নানকে হারিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মো. সামসুজ্জোহা খানকে পরাজিত করে নৌকা প্রতীকে পুনরায় বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও বিজয়ী হন শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু।
২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর এক নাগাড়ে ক্ষমতায় থাকার কারণে তিনি ধামইরহাট ও পত্নীতলায় সংসদীয় এলাকায় একটি নির্দিষ্ট বলয় তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
এলাকায় ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারলেও দলের এক সময়ের বলিষ্ঠ ও ত্যাগী নেতাদের কৌশলে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে তাদের কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে। কোণঠাসা নেতাদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য নিজে সরাসরি অনৈতিক কর্মকা-ে হস্তক্ষেপ না করলেও তার পরিবারের সদস্য ও নির্ধারিত কিছু নেতাকর্মী এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
এমপি শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু নিজের আসন পাকাপোক্ত করার জন্য দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের কৌশলে দূরে রেখে অনুগতদের নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেছেন বলে অভিযোগ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকর্মীর। আর এ কারণে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপি বাবলুর দুরত্ব বেড়েছে। তাদের মধ্যে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভ থেকেই এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বেশ কয়েকজন নেতা। তবে বর্তমান এমপির একনিষ্ঠ সমর্থকরা এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এমপি শহীদুজ্জামান সরকার বাবলুর ব্যাপক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই এসব কথা বলা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এমপি শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আমিনুল হক, পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পত্নীতলা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গাফফার এবং জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. শাহেদ রফি পাভেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
এ আসনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুনের নির্বাচন এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সামসুজ্জোহা খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও মামলা-হামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। এ নিয়েই খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে প্রথম মতবিরোধ তৈরি হয়। এর পরই দুজন পত্নীতলা ও ধামইরহাটে আলাদাভাবে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সেই বিবাদ বিদ্যমানই আছে। এরপর বিএনপি হতে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি।
সাবেক এমপি শামসুজ্জোহা খানের কারণে এই আসনে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় এ আসনে বিএনপির পরাজয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলা বিএনপি। সাবেক এমপি মো. সামসুজ্জোহার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এবং বর্তমান পতœীতলা থানা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল পৃথকভাবে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উভয় গ্রুপ আলাদাভাবে এলাকায় মিটিং ও সভা সমাবেশ আয়োজন করে। কার্যত এই সংসদীয় এলাকায় বিএনপির রাজনীতিতে কোনো সমন্বয় নেই। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যার্শী হিসেবে মো. সামসুজ্জোহা খান ও খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যেই মনোনয়ন লড়াই হবে।
তবে সাবেক এমপি মো. সামসুজ্জোহা খানের বিরুদ্ধে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ দেওয়া এবং দলীয় পার্টি অফিস করার নামে নেতাকর্মীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে দলের নামে জমি না কিনে নিজের নামে কেনার অভিযোগ রয়েছে। তাই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাতে মনোনয়ন না দেওয়া হয়, এমনটিই প্রত্যাশা বিএনপির ত্যাগী দলীয় নেতাকর্মীদের।
এ ক্ষেত্রে বংশগতভাবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ত্যাগী নেতার পাশে সব সময় থাকা খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর জনপ্রিয়তা বেশি বলে জানান তারা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ আসনে আবার বিএনপিকে নিয়ে আসার চেষ্টায় রয়েছে নেতাকর্মীরা। তাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে ক্ষমতাসীনদের।
এ ছাড়াও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন ও জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জানা গেছে।