ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

নওগাঁ-১

মনোনয়ন পেতে মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা, নানা কৌশলে প্রচার

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ২৯ আগস্ট ২০২৩

মনোনয়ন পেতে মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা, নানা কৌশলে প্রচার

ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা সংসদীয় আসন ৪৬ তথা নওগাঁ-১

নওগাঁ শব্দের উৎপত্তি ‘নও’ (নতুন) ও ‘গাঁ’ (গ্রাম) শব্দ দুটি হতে। এই শব্দ দুটির অর্থ হলো নতুন গ্রাম। অসংখ্য ছোট ছোট নদী বিধৌত এ অঞ্চল। আত্রাই নদী তীরবর্তী নদী বন্দর এলাকা ঘিরে নতুন যে গ্রাম গড়ে ওঠে, কালক্রমে তাই নওগাঁ শহর এবং পরবর্তীতে নওগাঁ জেলায় রূপান্তরিত হয়। জেলাটি আদিকাল হতেই বৈচিত্র্যে ভরপুর। কৃষিকাজের জন্য প্রসিদ্ধ।
কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে অসংখ্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এ জমিদার গোষ্ঠীর আশ্রয়েই কৃষিকাজ সহযোগী হিসেবে খ্যাত সাঁওতাল গোষ্ঠীর আগমন ঘটতে শুরু করে এ অঞ্চলে। সাঁওতাল গোষ্ঠীর মতে, এ জেলায় বসবাসরত অন্য অধিবাসীদের মধ্যে মাল পাহাড়িয়া, কুর্মি, মহালী ও মুণ্ডা বিশেষভাবে খ্যাত। নানা জাতি ও নানা ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে নওগাঁ জেলা বিখ্যাত মানব বৈচিত্র্যে। অসংখ্য পুরনো মসজিদ-মন্দির-গীর্জা ও জমিদার বাড়ি প্রমাণ করে নওগাঁ জেলার সভ্যতার ইতিহাস অনেক পুরনো।
এগারোটি উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা সংসদীয় আসন ৪৬ তথা নওগাঁ-১। পোরশা, নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৪৮ হাজার ৯০১ জন। পুরুষ ভোটার দুই লাখ ২২ হাজার ৮৯৬ এবং নারী ভোটার দুই লাখ ২৬ হাজার পাঁচজন।
এ আসনে ১৯৯১ সালে জয়লাভ করে বিএনপি। এরপর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি দখলে ছিল বিএনপির। এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম সংসদ নির্বাচনে তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় এই আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনবারের নির্বাচিত বিএনপির এমপি ডা. ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে বিপুুল ভোটে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন তিনি। দায়িত্ব পান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। দীর্ঘ তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকায় সাধন চন্দ্র মজুমদার নির্বাচনী এলাকায় করেছেন ব্যাপক উন্নয়ন। 
আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও বড় দুই রাজনৈতিক দলেই শুরু হয়েছে মাঠপর্যায়ে প্রার্থীদের প্রচার ও দৌড়ঝাঁপ। প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে এবং বিভিন্ন কর্মীসভার মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানুষের মুখে মুখে আলোচিত বিষয় হচ্ছে নির্বাচন ও প্রার্থীদের কর্মকা-। 
নির্বাচনী এলাকার সচেতন ভোটাররা জানিয়েছেন, দলের নীতিনির্ধারক থেকে ‘স্বচ্ছ ও জনপ্রিয়’ ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিতে ভুল করলে আবারও বিএনপির দখলে চলে যাবে আসনটি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। এবারে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের আশায় কুশল বিনিময় করছেন, জানান দিচ্ছেন প্রার্থিতারও। বিএনপিতেও আছে একাধিক প্রার্থী। বড় দুই দল ছাড়াও অন্যান্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর নামও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনী মাঠ দখল এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। তবে আওয়ামী লীগের খাদ্যমন্ত্রীর দখলেই আছে নির্বাচনী মাঠ।
এদিকে আওয়ামী লীগ এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকায় ভালো কাজের পাশাপাশি সমালোচনাও আছে। পাশাপাশি বিএনপিরও আছে সমালোচনা। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন কর্মকা-ে অনেক ত্যাগী নেতা নিষ্ক্রিয়। অনেকেই বহিষ্কার হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন সামনে রেখেই বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় তারা। আর বিভক্ত বিএনপি হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া।
নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আরও মনোনয়ন চান এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হাসান রানা ও খালেকুজ্জামান তোতা। অন্যদিকে, বিএনপি থেকে সাবেক এমপি ডা. ছালেক চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য শাহ্ আহম্মদ মোজামে¥ল চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে আকবর আলী (কালু) ও ইসলামী আন্দোলন থেকে মোস্তাফিজুর রহমানও তাদের দল থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে যখন নির্বাচিত হই, তখন আমার এলাকায় ১০ কিলোমিটার রাস্তাও পাকা দেখিনি। আর এখন প্রায় চারশ’ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়েছে। আগামীতে গ্রামীণ অবকাঠামোর শতভাগ উন্নয়ন করব। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। কাজেই অনেকেরই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা হতেই পারে। তবে তাদের অবশ্যই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শতভাগ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় এখন উপজেলাগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আমার চেষ্টায় ১১ উপজেলায় প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তাই শুধু আমার আসন না, জেলার ছয়টি আসনেই নৌকাকে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেব।
আওয়ামী লীগের একাধিক ত্যাগী নেতা বলেন, দলের হাইকমান্ড সংসদ নির্বাচনে এ আসনে যাকে মনোনয়ন দেবেন, নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। এ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে পছন্দের প্রার্থিতা নিয়ে মতভেদ থাকলেও নৌকা প্রতীক নিয়ে কারও বিরোধ নেই।
অপরদিকে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি ডা. ছালেক চৌধুরী বলেন, যদি শরীর ও পরিবেশ ঠিক থাকে, তাহলে অবশ্যই মনোনয়ন চাইব। আগের মতো নির্বাচন হলে চাইব না।
মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমানও একইভাবে বলেন, এর আগে দীর্ঘদিন থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গত জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে আমি থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। তাই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমার বিশ^াস। এ ছাড়া সম্প্রতি পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে নির্বাচিত শাহ্ আহম্মদ মোজামেল চৌধুরীও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তখন থেকেই মাঠে আছি। তাই আমি বিশ্বাস করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। কারণ আমি সবসময় সাংগঠনিক সকল কাজে নিয়োজিত থাকি। 
এলাকার তরুণ ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবেন, এলাকার উন্নয়ন করবেন এবং যাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করবেন তাদেরকেই তারা ভোট দেবেন।

×