
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৪
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আগাম গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন। তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। টাঙ্গাইলের অন্যসব সংসদীয় আসনের মতো টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে ওই প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ আগে থেকে গণসংযোগ শুরু করেছেন। বড় দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার ও লিফলেট সেঁটে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। তৃণমূল নেতাদের সমর্থন ও কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেতে ব্যাপক লবিংও চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী।
টাঙ্গাইল-৪ আসনটি বরাবরই ভিআইপি আসন হিসেবে চিহ্নিত। এ আসনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের অন্যতম সংগঠক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তবলিগ জামায়াত নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে মন্ত্রিত্ব হারান, দল থেকে বহিষ্কৃৃত হন এবং সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।
টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আভাস দিয়েছেন তার কাছের লোকজন। তিনি কোনো কারণে নির্বাচনে অংশ না নিলে তার সহধর্মিণী সাবেক এমপি বেগম লায়লা সিদ্দিকী নির্বাচন করবেন- এমন আলোচনাও চাউর রয়েছে। সংসদ থেকে পদত্যাগের পর তিনি নিয়মিত সস্ত্রীক এলাকায় যাতায়াত করছেন। কাছের লোকদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তিনি নির্বাচনী মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্যই বড় বাধা বলে মনে করেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ও তার দলের প্রার্থী এ আসনে বড় ভূমিকা রাখবেন। আগামী নির্বাচনে যদি কাদের সিদ্দিকীর দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আসনের বর্তমান হিসেব-নিকেশ বদল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এই আসনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নিজেই প্রার্থী হতে পারেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের স্থানীয় সভা, সমাবেশগুলোতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই ও টাঙ্গাইল করটিয়া সা’দত কলেজের সাবেক ভিপি শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী সুকৌশলে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।
এদিকে ‘সিদ্দিকী পরিবার’ সমর্থিত কালিহাতীর স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, সিদ্দিকী পরিবারের পক্ষ থেকে মুরাদ সিদ্দিকীকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই। তিনি আমাদের অনুরোধে কালিহাতীতে নিয়মিত গণসংযোগ ও মতবিনিময় করে চলেছেন। বর্তমানে কালিহাতীর জনগণের মধ্যে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার মতো কর্মীবান্ধব একজন জনপ্রতিনিধি কালিহাতীবাসীর প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে আমি আওয়ামী লীগ ও এই পরিবারের সঙ্গেই সবসময় আছি, থাকব। কালিহাতী আমাদের পৈতৃক বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে কালিহাতীবাসী অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। কালিহাতী উপজেলার নেতাকর্মী ও ভক্ত অনুসারীদের অনুরোধে কালিহাতীতে আমি নিয়মিতভাবে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছি। টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নসহ বিভিন্ন কারণে স্থানীয় নেতারা কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। অভ্যন্তরীণ কোন্দল না মিটিয়ে বরং একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলেছেন তারা।
স্থানীয় এমপি হাসান ইমাম সোহেল হাজারির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন অপর প্রার্থীরা। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম গণসংযোগ শুরু করেছেন। দলের মধ্যেই এবার বর্তমান এমপিকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে।
কালিহাতী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তর্কোন্দল সীমাহীন। এই আসনে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করতেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের পর উপনির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন সোহেল হাজারি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে সোহেল হাজারি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে এমপি সোহেল হাজারির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলামের সম্পর্ক যেন সাপে-নেউলে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সোহেল হাজারি এমপি হওয়ার পর থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। এছাড়া সোহেল হাজারী বিএনপি সমর্থিত লোক নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা করেন। তার পিএস আজাদ হিরার বিরুদ্ধেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
বর্তমান এমপি সোহেল হাজারী আগামী সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন। নির্বাচনী এলাকা ও দলে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। মনোনয়নও তিনিই পাবেন- এমন বিশ্বাস তার কর্মী-সমর্থকদের। সোহেল হাজারী সপ্তাহের অন্তত ৪-৫ দিন এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন। সময়-অসময়ে নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন, কুশল বিনিময় করেন। প্রতিপক্ষ এমপির কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা অপবাদ ছড়াচ্ছে বলে জানান তার অনুসারীরা।
এসব বিষয়ে সোহেল হাজারী এমপি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার ও মিথ্যাচার প্রতিপক্ষ করছেন, তা সবই মিথ্যা। এসব কথার কোনো সত্যতা নেই। দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। স্বাধীনতার পর তিনিই কালিহাতীর সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন বলে দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রী ও দল এসব কাজের মূল্যায়ন করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক কর্মকা-ে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান।
এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠা-ু দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। সাংগঠনিক দক্ষতা ও আওয়ামী লীগের প্রতি তার বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। উপজেলার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যে কোনো সদস্য তো বটেই, আওয়ামী পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যও তার পরিচিত। দলের নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে তিনি পাশে দাঁড়ান। সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন।
এছাড়া এফবিসিসিআইর পরিচালক ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবু নাসের দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত তিন মেয়াদে মনোনয়নবঞ্চিত হলেও দমে যাননি। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তিনি জনহিতকর কাজে অংশ নিয়ে এলাকার মানুষের মন জয় করতে পেরেছেন। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক তৎপরতায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সমাজের শিক্ষিত শ্রেণির একটি বড় অংশ তার প্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আবু নাসের বলেন, দলীয় এমপির বিভিন্ন কর্মকা-ে দল বিব্রত। তার ব্যর্থতার কারণে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কালিহাতীর অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করতে এই জনপদের একজন মানুষ হিসেবে আমি প্রার্থী হতে চাই। আমার বিশ্বাস দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
তিনি আরও বলেন, কালিহাতীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা আমার লক্ষ্য। এই উপজেলায় শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা কাজে লাগিয়ে শিল্পায়নে করে কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এছাড়া কালিহাতীতে তাঁতপল্লী প্রতিষ্ঠা, নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াই হবে আমার প্রধান কাজ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই সুশিক্ষিত, মার্জিত, পরীক্ষিতদের এই আসনে মনোনয়ন দেবেন। আমি শতভাগ আশাবাদী নেত্রী আমাকে সুবিবেচনা করবেন।
এ ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিণী সাবেক এমপি বেগম লায়লা সিদ্দিকীও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। তিনি শুধু জানান, আমরা রাজনৈতিক পরিবার। রাজনীতির বাইরে নই। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। অপেক্ষায় রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশ দেবেন তা মেনে চলব।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল-৪ সংসদীয় আসনে ১৩টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় মোট ভোটার তিন লাখ ১২ হাজার ৪১৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৯ এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৬ জন।
১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তিনবার, বিএনপি প্রার্থী তিনবার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার, জাসদ (সিরাজ) প্রার্থী একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়লাভ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে যিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর দলই সরকার গঠন করেছে- এজন্য এ আসনকে ‘শুভ আসন’ হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে।
এদিকে উপজেলা বিএনপিতেও রয়েছে অস্বস্তি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মতিন ২০০৮ সালে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এলাকা ছেড়েছেন। কদাচিৎ এলাকায় এলেও দলীয় কর্মকা-ে তেমন তৎপরতা নেই। এ কারণে প্রার্থী সংকটে ভুগছে বিএনপি। ২০০৮ সালে শাহজাহান সিরাজ জেলহাজতে থাকায় এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিনকে। তিনি আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকেই উপজেলা বিএনপির অন্তর্কোন্দল চরমে।
বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান মতিন ও বেনজীর আহম্মেদ টিটোরও রয়েছে নিজ নিজ গ্রুপ। বিগত নির্বাচনের পর থেকেই এখানে দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন নেতারা। সরকারবিরোধী কোনো কর্মকা-ে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে পাশে পান না। ফলে আন্দোলন-সংগ্রামে মামলা-হামলার শিকার নেতাকর্মীরা এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র শাফী খানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে জেলা বিএনপি নেতা শাফী খান তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রিয়পাত্র।
তাছাড়া আগে থেকেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিনের সঙ্গে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের সহধর্মিণী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম রাবেয়া সিরাজের দ্বন্দ্ব রয়েছে। উপজেলা বিএনপির একটি অংশ মনে করে, শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন ব্যবসায়ী হলেও কালিহাতী বিএনপির রাজনীতিতে তার প্রয়োজন রয়েছে। উপজেলা বিএনপির এই কোন্দলের মধ্যে দলের হাল ধরেন সাবেক ছাত্রদল নেতা বেনজির আহমেদ টিটো। তিনি এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। এ আসনে জেলা বিএনপির এক নম্বর সদস্য বেনজীর আহমেদ টিটো একজন শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বেনজির আহমেদ টিটো বলেন, লুৎফর রহমান মতিন দলীয় সভাপতির পদে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ না নিয়ে দলকে দুর্বল করেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে তরুণ নেতৃত্ব চাচ্ছেন তারা। ছাত্র রাজনীতি থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছি। বর্তমান সরকারের সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। মনোনয়ন পেলে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনব, ইনশাআল্লাহ।
এছাড়া মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান বাদল ও কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শুকুর মাহমুদ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। শুকুর মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকারের সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। মনোনয়ন পেলে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনব।
এদিকে কালিহাতী আসনে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের মেয়ে ব্যারিস্টার সরোয়াত সিরাজ শুক্লা (শুক্লা সিরাজ) প্রয়াত বাবার অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি কালিহাতীতে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যোগ দিচ্ছেন। শুক্লা সিরাজ কালিহাতীর অবহেলিত জনপদ ও নদীভাঙা মানুষের পাশে থেকে কাজ করে চলেছেন। ঢাকার গুলশান সোসাইটি ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি শুক্লা সিরাজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন এমনটাই মনে করছেন প্রয়াত শাজাহান সিরাজের অনুসারীরা। মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক প্রয়াত শাজাহান সিরাজের অনুসারীরা কার্যত ব্যক্তি শুক্লা সিরাজের পক্ষে কাজ করছেন। তবে আগামী নির্বাচনে বেগম রাবেয়া সিরাজের মেয়ে শুক্লা সিরাজ কোন দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন তা এখন প্রকাশ করেননি তিনি বা তার সমর্থকরা।
এছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী মনোনয়ন চাইবেন। বিভিন্ন এলাকায় দু’হাতে দান-খয়রাতও করছেন। বিশেষ করে গতবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী বলেন, এদেশে যত উন্নয়নমূলক কাজ হযেছে তার বেশিরভাগই এরশাদ সরকারের সময়ে। এরশাদ সরকারের সেই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে কালিহাতীর মানুষ জাতীয় পার্টিকে চায়। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আমি কালিহাতীর সাধারণ মানুষের পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই।