
মুরগির খামার
একজন সফল উদ্যোক্তা পোল্ট্রি খামারি শহীদুল ইসলাম সাবু। বেড়ে উঠা গাইবান্ধা সদরের বোয়ালী ইউনিয়নে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল খুব একটা ভালো হয়নি। লেখাপড়ার ফল নিয়ে খুব বেশি দূর এগোনো যাবে না, নিজের মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরি হয় শহীদুল ইসলামের। তাই লেখাপড়ার আনুষ্ঠানিক পাঠ চুকিয়ে মনোনিবেশ করেন ক্ষুদ্র কৃষি খামারে।
এর আগেও অন্য আর একটা গল্প রয়েছে। বেশি টাকা আয়ের নেশায় ১৯৯৩ সালে কৃষিকাজ বন্ধ রেখে চলে যান ঢাকায় চাকরি করতে । সেখানে এক মাস ১৭ দিন চাকরি করে ফিরে আসেন নিজ জেলায়। এসেই পুরোদমে শুরু করেন মুরগি পালন।
বর্তমানে প্রায় ১০০ শতাংশ জায়গায় গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির খামার। সেখানে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি লেয়ার জাতীয় মুরগি পালন করা হয়। ৫০ হাজার টাকায় শুরু করা ফার্ম থেকে এখন প্রায় লাখ টাকা ইনকাম করছেন। ১০ থেকে ১৫ জন বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
সফল উদ্যোক্তা শহীদুল ইসলাম জানান, ব্যবসার শুরুটা ছিলো আমার স্বপ্নের মতো। শত বাঁধা আর প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি দমে যাইনি, নিরাশ হইনি। যেখানে আমি বেকারত্ব নিয়ে দিশেহারা ছিলাম, সেখানে আজ আমি ১০ থেকে ১৫ জন যুবকের বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আরও কিছু জায়গায় অন্যন্য ফার্ম দিতে ইচ্ছা পোষণ করছি। ব্যবসায় সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথাও জানান তিনি ।
তিনি বলেন, একটা সময়ে এ ব্যবসায় অনেক বেশি লাভ করা যেত। এ ব্যবসার আয় দিয়ে সংসার চালিয়ে তিন ছেলেকে লেখা-পড়া করাচ্ছি। শহরে বাড়ি করেছি। বর্তমানে পশু-প্রাণির খাবার ও ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। কোন কোন মাসে লাভের বদলে লোকসানও গুনতে হচ্ছে। বাজারে ডিম দাম কম হওয়ায় লাভের পরিমাণও কম হচ্ছে।
তিনি বলেন, বড় বড় উদ্যোক্তাদের কারণে আমাদের মতো মাঝারি বা ছোট উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বাজার দখলে নিয়েছেন। তারা বেশি উৎপন্ন করে কম দামে বেশি বেশি সেল করে পুষিয়ে নেন। আমাদের মতো ক্ষুদ্র বা মাঝারি উদ্যোক্তাদের চাহিদা কম। আমরা কম উৎপন্ন করছি, কিন্তু বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি না।
গত ১০ বছর ধরে এ খামারেই কাজ করছেন বেলাল ও হেলাল নামের দুই ভাই। তারা বছরে দুই একবার বাড়িতে গেলেও এ খামারই যেন তাদের আসল বাড়ি। এ খামারের পশুদের সঙ্গেই তাদের বেশি সখ্যতা। নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করে আসছেন খামারের গাভীদের। মুরগীর অসুখ-বিসুখে চিকিৎসক ডাকা, সময় মতো ওষুধ খাওয়ানো, ইঞ্জেকশান দেয়াসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন বেলাল ও হেলাল।
এর সবাই ব্যস্ত থাকেন বিভিন্ন কাজে। কেউ খাবার তৈরি করছেন, মুরগীর ফার্ম থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, মালিকের অনুপস্থিতে আমরাই খামার দেখাশোনা করি। এ খামারই আমাদের বাড়ি-ঘর, এখানেই থাকা-খাওয়া। মাসের পাঁচ থেকে ১০ তারিখের মধ্যেই বেতন-ভাতা পাই। তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ সব সময়ই উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শহীদুল ইসলাম আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। তাকে দেখে অনেকের শিক্ষা নেয়া উচিত। চাকরির পেছনে না ঘুরে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে খামারির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের খামারেই শত শত বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।
এসআর