ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু রেল সেতু

৬২ শতাংশ দৃশ্যমান

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ও শফিকুল ইসলাম শাহীন, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৭ মে ২০২৩; আপডেট: ১০:১৯, ২৮ মে ২০২৩

৬২ শতাংশ দৃশ্যমান

সেতুর মূল কাঠামো স্প্যানের ওপর রেললাইন স্থাপনের প্রাথমিক কাজ এগিয়ে চলছে

যমুনা নদীর ওপর বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দেশের বৃহত্তম এই রেলওয়ে সেতুর এখন ৬২ ভাগ দৃশ্যমান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূল কাজ শেষ হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। সেতুর সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল অংশে আগের চেয়ে কাজের গতি বেড়েছে।
সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি পূর্বপাড়ে ভূঞাপুর অংশে সংযোগ সড়কের ওপর রেল লাইন স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আলফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলেছে প্রকল্পের কাজ। ৬২ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ হবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে।

এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ হলে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে। বদলে যাবে রেলওয়ের পশিচমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন এই সেতু চালুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ খাতে সড়ক পথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন হবে, খুলে যাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনার দুয়ার। 
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেল সেতুতে ৫০টি পিয়ার এবং দুটি পিয়ারের মাঝখানে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য গড়ে একশ’ মিটার। এরই মধ্যে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জ প্রান্ত পর্যন্ত ৫০টি পিয়ারের মোট ৩০টি পিয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ২০টি পিয়ারের মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ আংশিক শেষ করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হবে। এ সেতুতে কোনো স্লিপার থাকবে না। সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজের পাশাপাশি টাঙ্গাইল প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়কে রেললাইন স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে।
এই রেল সেতু নির্মাণ শেষ হলে আন্তঃদেশীয় যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। রেল সেতু নির্মিত হলে সড়ক পথের বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পরিবহন খরচ, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। 
রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু অর্থাৎ মেগা প্রকল্প। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। এ ছাড়া ট্রেন সিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হওয়ায় সময় অপচয়ের পাশাপাশি সিডিউল বিপর্যয়ে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের  মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ  হলে ট্রেন চলবে ৮৮টি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
এর আগে ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেতুর পিলার নির্মাণের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর একযোগে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রান্তে স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর তিনশ’ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। 
তিনটি প্যাকেজে আন্তর্জাতিক সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ডব্লিউডি-১ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের ওবাইসি-আইএইচআই ও এসএমসিসি নামে তিনটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের কাজ করছে জাপানের আইএইচআইও এসএমসিসি কোম্পানি এবং ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের কাজও করছে জাপানের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্লাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

×