ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, বখাটে কাওছার গ্রেপ্তার 

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা 

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ৩ মে ২০২৩

স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, বখাটে কাওছার গ্রেপ্তার 

গ্রেপ্তার কাওছার ও নিহত মুক্তি বর্মণ।

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুড়া গ্রামের স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণকে (১৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত বখাটে কাওছারকে (১৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

বুধবার (৩ মে) বিকেলে প্রেমনগর ছালিপুড়া গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। 

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে দশম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি বর্মণকে কুপিয়ে আহত করে বখাটে কাওছার। পরে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, প্রেমনগর ছালিপুড়া গ্রামের নিখিল চন্দ্র বর্মণের মেয়ে মুক্তি বর্মণ প্রেমনগর ছালিপুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তাকে প্রায় সময় প্রেম নিবেদন ও উত্যক্ত করতো একই গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে কাওছার মিয়া। কিন্তু মুক্তি কখনও তাতে সাড়া দেয়নি। উপরন্তু সে বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানালে অভিভাবকরা কাওছারের মা-বাবার শরণাপন্ন হোন। এর জেরে মঙ্গলবার বিকেল পৌণে ৩টার দিকে স্কুল থেকে ফেরার পথে মুক্তিকে দা দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে কাওছার। এ সময় সময় মুক্তির সঙ্গে তার আরও কয়েক সহপাঠী ছিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় তারা দৌঁড়ে চলে যায়। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

মুক্তি বর্মণের কাকা লিটন চন্দ্র বর্মণ জানান, ‘আমরা কাওছারের বিষয়ে তার অভিভাবকদের কয়েকবার জানিয়েছি। কিন্তু তারা কাওছারকে কোনো বাধা দেয়নি। উল্টো কাওছার আমাদের প্রতি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়েটার জীবনটাই শেষ করে দিল।’
 
প্রেমনগর ছালিপুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের আকন্দ বলেন, ‘মুক্তির পরিবার খুবই দরিদ্র। ছয় বোনের মধ্যে মুক্তি ছিল চতুর্থ। তার অপর দুই বোন কলেজে পড়ে। আরেক বোন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। মুক্তি খুবই শান্ত এবং মেধাবী ছিল। ঘটনাটি খুবই নৃশংস এবং দুঃখজনক। আমরা বখাটে কাওছারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ 

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের বারহাট্টা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সুরজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘মুক্তি স্থানীয় উয়ুথ গ্রুপের সদস্য ছিল। সে বাল্যবিয়ে এবং ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল।’

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত কাওছারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। সে ওই গ্রামের ধান ক্ষেতের পাশের একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। সেখান থেকে ডিবির সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।’ 

এদিকে, কিশোরী মুক্তি বর্মণ হত্যায় জড়িত কাওছারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার সকাল ১১টায় বারহাট্টা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষার্থীরা ছাড়াও হাজারও মানুষ যোগ দেন।
 

এমএইচ

×