ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে

কদর কমেনি পদ্মা পারে শিমুলিয়া ঘাটের

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:৫২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কদর কমেনি পদ্মা পারে শিমুলিয়া ঘাটের

ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি শিমুলিয়া ঘাটে নানা স্বাদের খাবার গ্রহণ করেন অতিথিরা

জৌলুস হারালেও দর্শনার্থীদের কাছে কদর কমেনি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটের। প্রতিদিন পর্যটকদের কম-বেশি আনাগোনা লেগেই আছে। বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা হলেই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। শুধু দেশী পর্যটকই নয়, এখানে বিদেশী পর্যটকদেরও দেখা যায়।

পদ্মা পারের নির্মল বাতাস, ইলিশের জন্য বিখ্যাত ঘাটের রেস্টুরেন্টপাড়া আর সেই সঙ্গে পদ্মা পারে গড়ে ওঠা দেশীয় পিঠা-পুলি, পানিপুরি, তান্দুরী চা, নাগরদোলাসহ নানা কিছু উপভোগ করতে পর্যটকরা এখন ছুটে আসছেন শিমুলিয়া ঘাটে। এই ভ্রমণকে স্মরণ করে রাখতে অনেকেই স্বজনদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন।
গত শুক্রবার সরেজমিনে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের আগমনে সরগরম শিমুলিয়া ঘাট। পদ্মা সেতু চালুর পর এ ঘাট তার আগের জৌলুস হারিয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি পারাপার, ফেরি ও লঞ্চ চলাচল, পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যস্ততাসহ সবকিছুই যেন এখন স্মৃতি হয়ে আছে। জৌলুস হারিয়ে ঘাট পরিণত হয়েছে কোলাহল মুক্ত একটি জনপদে। তবে জৌলুস হারালেও এর কদর কিন্তু কমেনি দর্শনার্থীদের কাছে।

দিনের বেলায় এখানে দর্শনার্থীদের তেমন পদচারণা না থাকলেও সন্ধ্যার পর এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এসব দর্শনার্থী বা পর্যটকের আনাগোনাকে কেন্দ্র করে শিমুলিয়া ৩নং ফেরিঘাটের কাছে গড়ে উঠেছে দেশীয় লোকজ মেলা। এখানে বিক্রি হয় গরম গরম ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, আস্ত আলুর গরম তেলে ভাজা চিপস, মৌড়কা পিঠা, ভারতীয় আদলে পানি পুরি, তান্দুরী চা, কচি ডাব, শিশুদের খেলাধুলার নানা খেলনা, দেশীয় গরুর দুধের চা, সেই সঙ্গে প্রায় শত প্রকার মসলা দিয়ে পান। আর রাতের ডিনারের জন্য রেস্টুরেন্টপাড়ায় ইলিশের ভাজা খেতে ভিড় জমান এসব দর্শনার্থী।
শিমুলিয়া ঘাট বা মাওয়ার রেস্টুরেন্টের ইলিশ ভাজার কথা ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। সেই সঙ্গে ঘাটে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় পদ্মার নির্মল বাতাস, স্বচ্ছ পানি আর পদ্মা সেতু। ঢাকার সিসাযুক্ত বাতাস হতে একটু মুক্তি পেতেই পর্যটকরা ছুটে আসেন এই শিমুলিয়া ঘাটে। 
কেউ আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা আসেন প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে আবার অনেকেই আসেন বন্ধুবান্ধব মিলে।

এরা ঘাটের কাছে পদ্মা পারে দাঁড়িয়ে পদ্মার নির্মল বাতাস শরীরে লাগিয়ে নেন। হাফ ছেড়ে  উপভোগ করেন এক অন্যপদ স্বাদ। ৩নং ঘাটের কাছে ঘুরে বেড়ান দেশীয় লোকজ মেলায়। এখানে পানি পুরি, তান্দুরী চা, গরুর দুধের চা, রকমারি মসলার পান, পিঠা-পুলিসহ নানা কিছু খেয়ে ঘুরে ফিরে বেড়ান তারা। আনন্দ উপভোগ করেন নৌকা আকৃতির নাগরদোলায় চরে। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদেরও দেখা যায় এখানে।

বিদেশ থেকে কারও বাড়িতে কেউ বেড়াতে আসলে তাদের এখানে নিয়ে আসা হয় আনন্দ উপভোগ করতে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা হয় পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. আসোয়াদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ভারতের গুজরাট থেকে তার এক আত্মীয় বেড়াতে এসেছে তার বাসায়। তাদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন এই শিমুলিয়া ঘাটে। তিনি বলেন মাওয়ার ইলিশ ইতোমধ্যেই বিখ্যাত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তাই এই ঘাটে তাদের নিয়ে এসেছেন ইলিশ খাওয়াতে ও পদ্মার বুকে রাতের পদ্মা সেতুর দৃশ্য দেখতে। গুজরাটি ওই পর্যটক পানি পুরি খেতে খেতে বলছিলেন, ভারতের পানি পুরির থেকে এখানকার পানি পুরি স্বাদে ও মানে খুবই ভালো। অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। খেতে বেশ মজা। তা ছাড়া জায়গাটিও বেশ ভালো।
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান খান বেড়াতে এসেছেন তার স্বজনদের নিয়ে। তিনি জানালেন, কাজের চাপে অনেক দিন স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে চলা হয় না। তাই আজ সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি শিমুলিয়ার এই পদ্মা পারে। এখানে এসে বেশ ভালো লাগছে। দেশীয় পিঠা-পুলি খেলাম, তান্দুরী চা ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে খাবারের স্বাদ। পানি পুরির দোকানে বেশ ভিড়। সকলেই দেখছি পানিপুরি খেতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমরাও ভাবছি পানিপুরি খাব।

আর রাতে রেস্টুরেন্টে ইলিশ ভাজা খেয়ে বাড়ি ফিরব। ব্যতিক্রম ভালোবাসার গাল-গপ্প পানিপুরির দোকানি আরাফাত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। এ তিন দিন তার বেচাকেনা বেশ ভালো যায়। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয় ওই তিন রাতে।
তান্দুরী চায়ের দোকানদার জানালেন, তার কাছে ৩০ থেকে ৯৫ টাকা দরের চান্দুরী চা রয়েছে। মাটির কাপে চা পুড়িয়ে এই চা খেতে পর্যটকরা ভিড় করে। টাকার কথা তেমন একটা ভাবে না তারা। পান দোকানদার আলতু মিয়া জানালেন, ১০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকার পান রয়েছে তার কাছে। প্রায় শত পদের মসলা দিয়ে তৈরি করা হয় তার এ পান। সৌখিন লোকজন শখ করেই এই পান খান। নিয়মিত পান খাওয়ার লোকজন এখানে তেমন একটা আসেন না। পর্যটকরাই এ পানের মূল ক্রেতা।
ঘাটের বর্তমান চিত্র দেখে বলা যায়, জৌলুস হারালেও পর্যটকদের কাছে কদর কমেনি শিমুলিয়া ঘাটের। আর এই পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে এখানে কাজ করছে পর্যটন পুলিশসহ সরকারের গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল আউয়াল জানান, ঘাটে এখন ফেরি পারাপার না থাকলেও পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। 
রেস্টুরেন্টসহ ঘাটে পর্যটনকেন্দ্রিক বেশ কিছু দোকানপাট গড়ে উঠেছে। স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে ঘাটের পদ্মা পারে কোন দোকানপাট বসতে দেওয়া হয়নি। উন্মুক্ত রাখা হয়েছে পদ্মা পার। পর্যটকদেরও নিরাপত্তায় পর্যটন পুলিশসহ প্রশাসন কাজ করছে।

×