ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

যুদ্ধ দিনের স্মৃতি : বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজাত আলী

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর থেকে

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ৯ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৪:৩৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

যুদ্ধ দিনের স্মৃতি : বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজাত আলী

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজাত আলী

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজাত আলীর গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদরের মেষ্টা ইউনিয়নের চরপাড়ায়। তার ভারতীয় তালিকা নম্বর ১৬৮৪৫। লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৩০১০২৭৫। গেজেট নম্বর ২৫৯। 

তার বাবার নাম মৃত হাসান আলী ফকির এবং মাতা হামিদা খাতুন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার বড় ভাই প্রয়াত আজাহার আলীও বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্ত্রী জাহানারা বেগম এবং এক মেয়ে এক ছেলে রয়েছে তার। তিনি জামালপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দীর্ঘদিন ডেপুটি কমাণ্ডারর ছিলেন। 

বর্তমানে তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে প্রথমে কোম্পানি কমান্ডার গোলাম মওলার অধীনে ভারতের পশ্চিম তুরা ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে তিনি কোম্পানি কমাÐার ওয়াহেদুজ্জামান বাবলু চৌধুরীর নেতৃত্বে সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ১১ নম্বর সেক্টরের কামালপুর, শেরপুর ও জামালপুর মুক্ত করার সন্মুখ যুদ্ধের জীবন্ত সাক্ষী এই মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৬৬ হলেও তিনি সুস্থ আছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। জনকণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাতকারে যুদ্ধে যাওয়ার প্রেরণা থেকে শুরু করে যুদ্ধের ভয়াবহদিনের কিছু স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলী বলেন, পাকবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন, শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে এপ্রিলের শেষের দিকে আমাদের গ্রামের নবম শ্রেণির ১০ জন সহপাঠী, আমার বড় ভাই আজাহার আলী ও আমার চাচা জালাল উদ্দিন আহমেদসহ ১৫ জন ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য মনস্থির করি। তখন হিন্দুরা ভারতে চলে যাচ্ছে। তাদের সহযাত্রী হয়ে একটি বড় নৌকায় যমুনা নদী দিয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট হয়ে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হই। শরাণার্থীসহ প্রায় ২০০ জন ছিলাম নৌকায়। সন্ধ্যার পর বাহাদুরাবাদে যাই। তখন একটা দমকা বাতাসে নৌকা প্রায় ডুবে ডুবে। সকালে রওনা দিয়ে রাতে ডিগ্রির চরের কাজিয়ার চরে গিয়ে নৌকা থামে। রাতে কিছু লোক আক্রমণ করার জন্য আসছিল। মাঝিরা নৌকায় দা বল্লম রাখতো। 

আমরা ১৫ জন সেগুলো দিয়েই তাদের ধাওয়া করি। তাদের বলি আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছি। শরণার্থীদের দিকে তোমরা আইসো না। তখন তারা নিভৃত হয়। রাতে তারাই আমাদের কিছু চিড়া মুড়ি খাওয়ায়। পরের দিন সকাল নয়টার দিকে নদীর শেষ প্রান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকি। শরণার্থীদের নিয়ে মহেন্দ্রগঞ্জের শরণার্থী শিবিরে যাই। দেখলাম লাখো মানুষ সেখানে। সেখানে সাতদিন থাকি। এরপর প্রশিক্ষণের জন্য অন্যদের সাথে আমরাও বাছাই হই। সবাইকে দাঁড় করিয়ে বুকে সিল মারলো। চূড়ান্ত প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের ১৫ জনসহ অন্তত ৫০০ ছেলেকে ইউথ ক্যাম্পে নিয়ে গেলে শুরু হয় পিটিপ্যারেড প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষক ছিলেন ভারতীয় সেনাকর্মকর্তা ধন সিং থাপা। আর বাঙালি সুবেদার মফিজ উদ্দিন আহমেদ। প্রথমে রাইফেল খোলা, লাগানো, পরিষ্কার করা শেখানো হয়। 

তারপর ইউথ ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে ১২০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি পথে উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য তুরা পাহাড়ে যাই। সেখান থেকে ঢালু সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ হেটে যাই। তুরায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নেই। সবাইকে থ্রিনটথ্রি রাইফেল, এসএলআর, এসএমজি, গ্রেনেড, মর্টার, এলএমজি চালানো শেখায়। জুন মাসের শেষের দিকে হবে। সেখানে ২৯ দিন প্রশিক্ষণ শেষে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের শপথ নেই। এরপর কোম্পানি কমান্ডার গোলাম মওলার অধীনে ১৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা পুড়াখাসি ক্যাম্পে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেই। পুড়াখাসি থেকে কোম্পানি কমান্ডার ওয়াহেদুজ্জামান বাবলু চৌধুরীর নেতৃত্বে শেরপুর, জামালপুর, সরিষাবাড়ীরসহ ১৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা যাই পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি এলাকায়। সেখানে সন্মুখ যুদ্ধ করি।

মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের পাকবাহিনীর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি বকশীগঞ্জের কামালপুর মুক্ত করার স্মৃতিচারণ করেন তিনি বলেন, তখন জুন মাসের শেষের দিকে হবে। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দু:সাহসিক যোদ্ধা ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মমতাজ কামালপুর ঘাঁটিতে আক্রমণের জন্য আমাদের ডাকলেন। পাকবাহিনীকে ধ্বংস করে সকালবেলা জামালপুরে গিয়ে নাস্তা করতে চেয়েছিলেন তিনি। যুদ্ধের কৌশল ব্রিফ করলেন। মুক্তিযোদ্ধা ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা কামালপুর আক্রমণ শুরু করি। ক্যাপ্টেন মমতাজ ক্রলিং করে কামালপুরে পাকবাহিনীর বাঙ্কারে চলে যান। 

সেখানে তিনি রাইফেলের বেয়নট দিয়ে কয়েকজন হানাদারকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন মমতাজকে সেদিন আর জামালপুরে আসতে হয়নি। সেদিন ক্যাপ্টেন মমতাজ বীর বিক্রম, টাঙ্গাইলের ফারুকসহ অনেকেই শহীদ হন। ভয়াবহ ওই যুদ্ধে প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন অনেকেই। পাকিদের তুমুল প্রতিরোধের মুখে সেদিন কামালপুর ক্যাম্প দখল করতে ব্যর্থ হই। 

এরপর ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের কামালপুর যুদ্ধের ছক আঁকেন। আমরা তুরা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে আসার পথে সন্মুখ যুদ্ধে মুহুর্মুহু আক্রমণের নির্দেশনা পাই। তখন নভেম্বর মাস। একদিন কর্নেল তাহের সীমান্ত এলাকায় পাকবাহিনীর সবগুলো বিওপিতে একযোগে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। একেকটি কোম্পানিকে একেকটি ইপিআর ক্যাম্প আক্রমণের দায়িত্ব দিলেন। কামালপুরে ছিল ইপিআরের ১৩০ জনের একটি কোম্পানি। অন্যান্য বিওপি ক্যাম্পে ছিল এক প্লাটুন, দেড়প্লাটুন করে পাকসেনা। পাকবাহিনীর কামালপুর, হলদিগ্রাম, নকশীসহ পাঁচটি ক্যাম্পে একযোগে আক্রমণের পরিকল্পনা করলেন। 

তিনি বললেন তোমরা আক্রমণ করে পাকবাহিনীকে বিভ্রান্ত করবে যাতে ওরা কামালপুর ঘাঁটিতে তাদের সেনাদের সহযোগিতা করতে না পারে। কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণের দায়িত্ব নিলেন কর্নেল তাহের নিজেই। সেখানে প্রায় ৭০০ মুক্তিযোদ্ধা এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২০০ থেকে ৩০০ সৈনিক অংশ নেন। আমরা বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে নকশিতে আক্রমণ করলাম। অন্যরা ভায়াডাঙ্গা, হলদিগ্রাম বিওপিসহ সবগুলো ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। কামালপুরের যুদ্ধে একটা সেলের আঘাতে কর্নেল তাহেরের ডান পা উড়ে যায়। তখন কমপক্ষে ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নেত্রকোণার শহীদ, ধনবাড়ির কামালসহ অনেক সহযোদ্ধা সেদিন শহীদ হন। কিন্তু গুরুতর আহত কর্নেল তাহের তখনো লড়াই করার নির্দেশ দেন। সেদিনও আমরা কামালপুর মুক্ত করতে পারি নাই। 

কামালপুর যুদ্ধে ক্যাপ্টেন মমতাজের মৃত্যু এবং কর্নেল তাহেরের পা হারানো নিয়ে রণাঙ্গণের সবাই উত্তেজিত। তখন আমাদের ক্যাপ্টেন আব্দুল মান্নান আবার কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন। একই সাথে আমাদের কোম্পানির ওপর দায়িত্ব পড়লো ভায়াডাঙ্গা হয়ে কামালপুর আক্রমণের। কামালপুর ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু হয় চারদিক থেকে। প্রথমে ২০ নভেম্বর। এরপর ২৯ নভেম্বর কামালপুর আক্রমণ করি। তখন প্রশিক্ষিত কমপক্ষে পাঁচ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয় সেই যুদ্ধে। 

আমাদের সাঁড়াশি আক্রমণে তারা অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। ডিসেম্বরের তিন তারিখে যৌথবাহিনীর নির্দেশে পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বকশীগঞ্জের বছির উদ্দিনকে (বীর প্রতীক) দিয়ে কামালপুর ক্যাম্পে পত্র পাঠানো হয়। তারা প্রথমে নাকচ করে। তখন সেল মেরে চারদিক থেকে কামালপুর ক্যাম্প ঘিরে ফেলি। তখন তারা ১৩৭ জন পাকসেনা ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করায় কামালপুর মুক্ত হয়।      

তিনি বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম কামালপুর এলাকা স্বাধীন করেছে। তারপর শুরু হয় জামালপুর শহরের পিটিআইয়ে ইপিআরের প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণের পালা। কোম্পানি কমান্ডার ওয়াহেদুজ্জামান বাবলু চৌধুরীর নেতৃত্বে আমরা ১৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা তিন প্লাটুনে ভাগ হয়ে কামালপুর থেকে শেরপুরের দিকে যাই। শেরপুর মুক্ত হয় ৫ ডিসেম্বর। এরপর জামালপুরে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণে রওনা হই। পাকবাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদের জামালপুর অংশে ব্যারিকেড দিয়েছে। নদীর ওপারে ব্যারিকেড ছিল না। শ্রীবর্দীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম মুন্সীকে (বীর প্রতীক) দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে চিঠি পাঠানো হয় আত্মসমর্পণের জন্য। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করে না। তখন ৯ ডিসেম্বর রাতেই আমাদের কোম্পানিসহ অন্যান্য কোম্পানির হাজারো মুক্তিযোদ্ধা জামালপুর শহরের চারদিক থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। পাথালিয়া এলাকায় তাদের সাথে তুমুল লড়াই হয়। সেখানে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা মারা যান। সহযোদ্ধা বন্ধুদের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। তাদের পেছনে ফেলেই পিটিআইয়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যাই। প্রতিরোধের মুখে রাতেই পাকবাহিনী শহরের বেলটিয়া দিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে তুমুল সন্মুখ লড়াই হয়। শহীদ হন শেরপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মুহতাসিম বিল্লাহ খুররম (বীর বিক্রম)। ওই লড়াইয়ে অনেকেই মারা গেছেন। গুলিতে কে কোথায় পড়ে আছে তা জানার উপায় ছিল না। ওই রাতেই পাকবাহিনির অনেক কর্মকর্তা ও সৈনিকরা বিভিন্ন স্থানে দিগবিদিক পালিয়ে যায়। পথ ভুলে গ্রামেও যায়। যেখানে গেছে সেখানেই জনতার পিটুনি খেয়ে মরেছে। আমাদের গ্রাম মেষ্টাতেও যায় তারা। সেখানে গ্রামবাসী তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। তারাও সেখানে গুলি করে তিনজন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল। ১০ ডিসেম্বর ভোরে জামালপুর মুক্ত হয়। এরপর আমরা পিটিআই ক্যাম্পে যাই। সেখান থেকে আহত ২০০ পাকসেনাকে উদ্ধার করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। 

রাজাকার আলবদরদের অত্যাচার নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে গিয়ে শুনেছি আমার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা, বড় ভাই ও এক চাচা মুক্তিযুদ্ধে যাবার কারণে পাকবাহিনী আমাদের এলাকায় ব্যাপক অত্যাচার করে। আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। গ্রামবাসীদের বাড়ি লুটতরাজ করে পুড়িয়ে দেয়। গরু ছাগল সবকিছু লুট করে। এসব শুনেই পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জেদ বাড়ে। জামালপুরে রাজাকার আলবদরদের ঘাঁটি ছিল। কুখ্যাত রাজাকার আলবদর আশরাফ, মান্নান তাদের নেতৃত্বে সবচে বেশি নির্যাতন হয় আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল ও সাধনা ঔষধালয়ের টর্চার সেলে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের স্বজনদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন ও হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে। সদরের তিতপল্লা ইউনিয়নের হায়দর আলী চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা নুরুকে ধরে নিয়ে জবাই করেছে। ছোটভাইয়ের লাশ দেখে হায়দর আলীও সেখানেই হার্টফেল করেন। খুবই করুণ ছিল ঘটনাটি। 

রণাঙ্গণে খাবার খাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে প্রশিক্ষণের সময় আর্মিদের মতোই খাবার পাই। যুদ্ধের সময় যে ক্যাম্পে থাকতাম সেই ক্যাম্পেই রেশন পাঠাতো। রণাঙ্গণে কখনো না খেয়েও থাকতে হয়। গ্রামবাসীরা খাবার দিয়ে, পানি দিয়ে সহযোগিতা করেছে। একবার বিশাল এক শামুককেচা পাখি ধরি। ২২ কেজি মাংস হয়। ক্যাম্পের সবাই রান্না করে খাই। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা ক্যাম্পে গরু দিতো জবাই করে খাওয়ার জন্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও খাবার সরবরাহ করেছে। সেই স্মৃতিগুলো আজো মনে পড়ে।     

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে সুজাত আলী বলেন, পাকহানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করার লড়াইয়ে দেশ একদম শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, রেলাইন সমস্ত ধ্বংস। বাড়িঘর ধ্বংস। গ্রামের পর গ্রামের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেই পোড়া বাংলাদেশটাকে সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ শুরু করলেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু জামালপুরে এসে জিলা স্কুল মাঠে ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু যার যার কাজে ফিরে যেতে বললেন। ওনার আদেশ শুনে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগ দেই। আমি আজো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করি। 

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অত্যাচার নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হুলিয়া দিয়ে জেলখানায় পুরা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়ে উপলব্ধি করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। প্রথমেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০০ টাকার ভাতা প্রর্বতন করেন। 
মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের রীতি চালু করেন। যা আগে কখনোই হতো না। যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধা দিলেন। বীর প্রতীক, বীর উত্তম যারা তাদেরকে সম্মানী ভাতা দেওয়া শুরু করলেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে সবই আবার ম্লান হয়ে যায়। 

২০০৮ সালে শেখ হাসিনা আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০ হাজার টাকা করেছেন। বীরনিবাস করে দিচ্ছেন। দুই ঈদ, বিজয় দিবস ও পহেলা বৈশাখেও ভাতা পাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধারা ডিজিটাল পরিচয়পত্র ও ডিজিটাল সনদ পেয়েছেন। তার প্রতি আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। 

এসআর

×