ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইটের ভাটায় পোড়ছে কাঠ, ধোঁয়ায় কমছে ফসলের উৎপাদন

সংবাদদাতা, মধুপুর, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২০:০০, ২৪ নভেম্বর ২০২২

ইটের ভাটায় পোড়ছে কাঠ, ধোঁয়ায় কমছে ফসলের উৎপাদন

ইটভাটা

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ইটভাটায় অবৈধভাবে জ্বালানি কাঠ দিয়ে এবারও ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর অতিরিক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের জমিতে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। এবং হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। পাশের এলাকা মধুপুর গড় বনাঞ্চল হওয়ায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ সহজলভ্য হিসেবে ইটভায় জ্বালানি হিসেবে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে। 

অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলকে উৎকোচ দিয়েই ইট প্রস্তুত করে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা। যদিও প্রশাসনের ভাষ্য, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের দাবি সচেতন মহলের। 

অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটার অধিকাংশ মালিকরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং প্রভাবশালী। এ কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি। অনেকে ভাটা থেকে মোটা দাগে মাসোহারা পাচ্ছে। কাঠ পোড়ানো প্রকাশ্যে একর্ম যজ্ঞ জনমনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন? শুধু তাই নয়, এক শ্রেণির দালাল চক্র কৃষকদের ফাঁদে ফেলে কৃষি জমির উর্বর মাটি ভাটায় দিতে মরিয়া। কৃষকরা এতে আরও ক্ষতির মুখে পড়েছে। চলতি মৌসুমে কোনো ভাটাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়নি। 

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের সূত্র মতে, ধনবাড়ীতে ইটভাটার সংখ্যা ১৭টি। এরমধ্যে পৌর এলাকায় হীরা ব্রিকর্স, মালঞ্চ ব্রিকর্স ও একতা ব্রিকস্ রয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, চিঠি পেয়ে পরবর্তীতে পৌর শহরের টাকুরিয়ায় স্থাপনকৃত মমিন নামের ভাটাটি ভেঙে ফেলেন মালিক পক্ষ। 

অভিযোগ ও সরেজমিন ঘুরে গতকাল দেখা গেছে, ইটভাটার মৌসুম হওয়ায় ইটভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত থেকে পুড়ানো কাজ চলছে পুরো দমে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি জমির মাটি ও ট্রাক বোঝাই কাঠ ঢুকছে এসব ভাটায়, কয়লার দেখা মিলছে না ভাটায়। কাঁচা ইট পোড়াতে সাঁজিয়ে রাখা হয়েছে শতশত মণ জ্বালানি কাঠ। কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগীতায় নেমেছে ভাটা মালিকরা। 

প্রতিটি ভাটায় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফসলি জমির ওপর ইটভাটা গড়ে ওঠায় কৃষকের ফসলের হচ্ছে সর্বনাশ, ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, আশপাশের গাছপালাগুলোর অবস্থা শোচনীয়। এসব দেখেও প্রশাসনের কোনো নজর নেই। কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে কাজ সেঁরে নিচ্ছে ভাটা মালিকরা।  

উপজেলার সোনালী ব্রিকর্স ও নবাব ব্রিকর্স, এনএস ব্রিকর্স সহ বিভিন্ন  ইটভাটার বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলে এবারও স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যমহলদের মেনেজ করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। একটি ইটভাটায় একবারে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ইট পোড়াতে ২২-২৫ দিন সময় লাগে। 

যা কমপক্ষে ১১ হাজার মণ জ্বালানির প্রয়োজন। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি মৌসুমে পাঁচ-ছয়বারে ৪৫-৫০ লাখ ইট পোড়ানো যায়। এ পরিমাণ ইট পোড়াতে ৬৫ থেকে ৬৬ হাজার মণ কাঠ লাগে। এ হিসাবে ১৭টি ভাটায় প্রায় ১১ লাখ ২২ হাজার জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হয়।

কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো বিষয় জানতে চাইলে দৈনিক জনকণ্ঠ কে রাজীব ব্রিকসের মালিক রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘এবার ইট খুবই চমৎকার বের হচ্ছে। কয়লার দাম বেশি থাকায় কাঠ ও কয়লা দিয়ে ইট পোড়া হচ্ছে। 

সোনালী ব্রিকসের মেনেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার সব ইটভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছে। আগামীবার কয়লা দিয়ে পোড়া হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানোর বিষয় সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও ভূইয়া ব্রিকসের মালিক শাহজাহান আলী ভূইয়া দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এবার কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। তাই বাধ্য হয়েই কাঠ  দিয়ে ইট পোড়াচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠ কে বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগ ‘টপ সয়েল’ যদি কৃষকরা বিক্রি করে দেন তাহলে ওই জমিতে আগের মতো ফসল উৎপাদন হয় না। আমরা কৃষকদের সচেতন করে যাচ্ছি।’ 

উপজেলার সহাকারী কমিশনার (ভূমি) ফারাহ ফাহিতা তাকমিলা বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে শিগগরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন দৈনিক জনকণ্ঠ কে বলেন, ইট পোড়াতে জ্বালালি কাঠ ব্যবহারে কোনো বিধান নেই। যদি জ্বালানী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এসআর

×