ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দেয়

হ্রদ পাহাড়ের শহর প্রকৃতির মায়াবী আবাহন

নয়ন চক্রবর্ত্তী

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২২

হ্রদ পাহাড়ের শহর প্রকৃতির মায়াবী আবাহন

রাঙ্গামাটির অন্যতম আকর্ষণ ঝুলন্ত ব্রিজ

পাহাড়ের শহর রাঙ্গামাটি। প্রকৃতির উজাড় করা ভালোবাসায় ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের এই জেলা। আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি সড়ক মাড়িয়ে রাঙ্গামাটির ভেদভেদি পার হওয়ার সময় হ্রদের মাঝে উঁকি দেওয়া শহরটির আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা অন্যসব পর্যটন স্পটের চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। প্রকৃতির এই আবাহন উপেক্ষা করা বেশ কঠিন।

এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা বছরের বিভিন্ন সময়ে ছুটে আসেন স্বচ্ছ লেক ও সবুজ পাহাড়ের বুকে। স্বল্পব্যয়ে রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করা যায় বলে শুধু দূরের নয়, অবসর পেলে পাশর্^বর্তী জেলা ও উপজেলার বাসিন্দারাও এই লীলাভূমিকে দেখতে ছুটে আসেন।
সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকে রাঙ্গামাটি। চট্টগ্রাম শহর থেকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় সড়ক পথে রাঙ্গামাটি পৌঁছানো যায়। তাই পর্যটকরা রাঙ্গামাটিকে সব সময়ই পছন্দের স্থানে রাখেন। ফলে পর্যটন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা পরবর্তী যেসব পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারমধ্যে এ জেলাটি অন্যতম।
বিশেষ করে পলওয়েল পার্ক, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, সুবলং ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু, আসামবস্তি ব্রিজের সঙ্গে এখন নতুন পর্যটনের দুয়ার খুলেছে বড়াদম, বেরাইন্ন্যা ও বালুখালীর নির্বাণ নগরের বৌদ্ধ মন্দির। অপরদিকে ফুরোমন পাহাড় থেকে রাঙ্গামাটি শহরকে দেখা, আরণ্যকের বুকে দাঁড়িয়ে হ্রদের বিশালতা দেখার সৌন্দর্য কেউ ছাড়তে চায় না। চোখজুড়ানো, মন ভোলানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর আরও অনেক জায়গা রয়েছে রাঙ্গামাটিতে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তরিকতার কারণে বারবার এই জেলার পর্যটনস্পটগুলোতে পর্যটন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙ্গামাটির তবলছড়ির বাসিন্দা পীযুষ চক্রবর্ত্তী জানান, চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দারা অল্প দূরত্বের মধ্যে স্বল্প খরচে রাঙ্গামাটি ঘুরে যেতে পারেন। সেজন্য পর্যটক আগমন অব্যাহত থাকে সারাবছর। এ ছাড়া রাঙ্গামাটির আদি বাসিন্দা এবং স্থানীয়রা যথেষ্ট আন্তরিক পর্যটকদের বিষয়ে। এই শহরে কোন ছিনতাই কিংবা নাজেহালের বিষয় নেই।
একই কথা জানালেন রাঙ্গামাটি সদরের আসামবস্তির বাসিন্দা মো. শওকত। তিনি জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনা বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র বেশ বেগ পেতে হলেও এই শহরের পর্যটন বেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লেকের দু’পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে বেচাবিক্রিও বেড়েছে। স্বল্প ব্যয়ে সব মৌসুমে ঝর্ণা, হ্রদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য আর কোনো জেলায় পাওয়া যায় না তাই এই শহরে ভ্রমণকারীরা বারবার ছুটে আসেন।
রাঙ্গামাটিতে ছয় ঋতুতেই সৌন্দর্যছটা বজায় থাকে। বিশেষ করে বর্ষায় পূর্ণ যৌবন ফিরে পাওয়া ঝর্ণা দেখতে হাজারো পর্যটন নৌভ্রমণ করে কাপ্তাই লেকে। ছুটে যায় সুবলং ঝর্ণার ধারায় শীতল হতে। আবার শরতে সাদা মেঘের বেলা ভাসতে দেখা যায় পাহাড়ের কোলে। আর শীতে মিষ্টিমাখা রোদের আলোর ঝলকানিতে উষ্ণতার তেজে উঁচুনিচু পাহাড়ি পথের হ্রদের সৌন্দর্য দেখতে হারিয়ে যাওয়া যায় শুধু রাঙ্গামাটিতেই।
কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আর বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়ের চাদর মোড়ানোর রাঙ্গামাটি জেলা শীতকালে যেন পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য। আসাম বস্তি ব্রিজ ও ব্রাহ্মণটিলা ব্রিজে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের ঢল নামছে এখন প্রতিদিন। সূর্যাস্তের সঙ্গে সন্ধ্যা প্রদীপের আবাহন জানিয়ে অনেক পর্যটক আবার রাতের বাসে চড়ে সোজা চলে আসতে পারেন চট্টগ্রামে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং নিরাপত্তাজনিত কোন ঝামেলা না থাকায় বাড়ছে পর্যটক।
পর্যটকদের এখন মূল আকর্ষণ রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের ‘পলওয়েল পার্ক, সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘আরণ্যক আর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের রাজবন বিহার, চাকমা রাজবাড়ি, ফিশারিঘাট বাঁধ সড়ক। আর নৌপথে সুবলং ঝর্ণা, ছোট ঝর্ণা, বালুখালী, পেদা টিং টিং। অপরদিকে আসাম বস্তি সড়ক হয়ে সিএনজি অটোরিক্সা করে রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়কে অবস্থিত বড়াদাম এখন বাংলাদেশের গ্যাংটক। একপাশে পাহাড় এবং অন্য পাশে সুবিশাল হ্রদের জলরাশি,  যেন প্রকৃতির ভিন্ন এক সম্মিলন। হ্রদঘেঁষা ও পাহাড়ের সমারোহ এই স্থানটিতে এখন পর্যটকদের সমাগম বেড়েছে।

ভ্রমণপিপাসী পর্যটকরা সকাল সকাল ভ্রমণে বের হয়ে বিকেলটা কিন্তু তুলে রাখে আসাম বস্তি, পলওয়েল পার্ক কিংবা বেরাইন্ন্যা ও বড়াদমের জন্য। বিকেল শেষে সূর্য যখন ঢলে পড়বে পশ্চিমের আকাশে, ঠিক তখনের সৌন্দর্য দেখার জন্য বেরাইন্ন্যা ও বড়াদম অন্যতম। বড়াদামে রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরু বনভান্তের জন্মস্মৃতি স্মরণে তৈরি একটি মন্দির, যেটির অবস্থান পাহাড়ি সড়কের পাশেই। আরেকটি স্মৃতিস্তভ নিয়ে মন্দির উঁকি দেয় হ্রদেই।
চট্টগ্রাম শহর থেকে গত বুধবার বেড়াতে আসা রবি দাশ জানান, পরিবার নিয়ে রাঙ্গামাটিতে এর আগেও এসেছি। তবে এবার বড়াদম ও বেরাইন্ন্যা দেখতে এসেছি। তাই বিকেলটা এখানেই কাটিয়ে রাতে শহরে চলে যাব। যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা এবং অল্প টাকায় বেড়ানো যায় তাই রাঙ্গামাটি প্রথম পছন্দ।
ব্রাহ্মণটিলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা নগরীর বাসিন্দা শ্যামল চৌধুরী জানান, হ্রদ, পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে বোটে করে যেমন ভ্রমণ করা যায় অল্প টাকায় ঠিক একইভাবে সিএনজি অটোরিক্সায় করেও ঘুরে বেড়ানো যায় নির্বিঘেœ।

×