
পরিত্যক্ত পোল্ট্রি খামারে বন্ধ স্কুল। ডানে- স্যাঁতসেতে ঘরে মাদুর বিছিয়ে পড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের
রাস্তার ধারে একটি টালির ঘরের দেয়ালে ঝুলানো রয়েছে ঘোষপাড়া উপানুষ্ঠানিক স্কুলের সাইনবোর্ড। স্কুলঘর খুঁজতে বাড়ির মালিকের গেট খুলে তিনটি ঘর পেরিয়ে পুকুরের পাশে মিলল কথিত উপানুষ্ঠানিক স্কুল। বাড়ির মালিক জুলফিকার হায়দার জানালেন তার পরিত্যক্ত পোল্ট্রি ঘরটি এখন মাসিক ৭শ’ টাকায় এই প্রকল্পে স্কুল ঘর হিসেবে ভাড়া নিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সাস। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেতে। তালাবদ্ধ ঘরে কাঠের বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় একটি ব্লাকবোর্ডের ওপর রাখা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। সোমবার সকালে ও বিকেলে দেখা যায় ঘরটি তালাবদ্ধ। আশপাশে কোন শিক্ষার্থী নেই।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা (পিডিবি-৪) প্রকল্পে ড্রপআউট শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মধ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারীভাবে ২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শিক্ষা প্রকল্প চালু করা হলেও এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে চিত্র ভিন্ন। বেশিরভাগ স্কুল চলছে কাগজে কলমে। ঘর থাকলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নেই। নামমাত্র শিক্ষক থাকলেও তাদের হাজিরা নেই। আবার ৬টি উপজেলায় ৩০ জন সুপারভাইজার থাকলেও তাদের তদারকি নেই।
তালার ভায়ড়া, বারুইহাটি, আটারই, নলতা, ধুলান্ডা গ্রামের কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোন শিক্ষার্থী নেই, নেই কোন প্রশিক্ষক ও সহায়ক-সহায়িকা। পড়ে আছে পরিত্যক্ত ঘর। একই চিত্র সদর ও কলারোয়া উপজেলাতেও। সাইনবোর্ডসর্বস্ব স্কুল, শিক্ষার্থী না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ৪টি উপজেলার ২৬৭টি স্কুল বাস্তবায়নকারী সংস্থা সাসের পরিচালক ইমান আলি বলেন, উপানুষ্ঠানিক প্রকল্পের শিক্ষার্থীদের এ্যাসেসমেন্ট করেছে সরকার। যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই সেখানে আমরা কি করব। প্রকল্পের জেলা প্রোগ্রাম অফিসার কামরুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, শিক্ষক, স্টাফ ও ঘর ভাড়া মিলছে না।
স্কুলগুলো চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই প্রকল্পের সাতক্ষীরার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, এই প্রকল্পের স্কুলগুলো দেখভাল করার জন্য ভেরিফিকেশন টিম রয়েছে। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই স্কুলগুলো চলে থাকে। এই প্রকল্পের আইভিএর (ইনডিপেনডেন্ট ভেরিফিকেশন এজেন্সি) সভাপতি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই শিক্ষা প্রকল্প কার্যকরী করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি কিছু তদারকি করেছেন বলে জানান।
প্রকল্পের মেয়াদ ৪২ মাসের হলেও করোনার কারণে দু’বছর এই প্রকল্প চালু হয়নি। জেলার তালা, কলারোয়া, সদর ও দেবহাটা উপজেলায় ২৬৭টি উপানুষ্ঠানিক স্কুল বাস্তবায়ন করছে বেসরকারী সংস্থা সাস। আর কালিগঞ্জ ও আশাশনি উপজেলায় বাস্তবায়ন করছে ইডা ও উপো নামের দুটি বেসরকারী সংস্থা। প্রতিটি স্কুলে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী থাকা বাধ্যতামূলক থাকলেও এগুলোর বেশিরভাগ স্কুলেই প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী নেই।
বেশিরভাগ স্কুল সাইনবোর্ডসর্বস্ব। এই প্রকল্পে কোহট ও মাল্টিগ্রেড পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের কথা থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ স্কুল বন্ধ থাকছে। প্রকল্পে প্রশিক্ষক ও সহায়ক-সহায়িকাদের দেখিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা নয় ছয় করার ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।