ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার স্বপ্নের এই প্রকল্প হবে আরেকটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ॥ বনমন্ত্রী

স্বর্ণদ্বীপকে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করছেন সেনা সদস্যরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৯ জুলাই ২০১৭

স্বর্ণদ্বীপকে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করছেন সেনা সদস্যরা

মীর শাহ আলম, নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপ থেকে ॥ নোনা পানির কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় কোথাও ধান চাষ না হলেও বঙ্গোপসাগর অববাহিকায় অবস্থিত স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় নোনা পানি সরিয়ে মিঠা পানির উৎস সৃষ্টি করে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে ধান চাষ। এ ব্যবস্থা সফল হলে এক সময় দেশের শস্য ভা-ার হিসেবে পরিণত হবে বিশাল এ স্বর্ণদ্বীপ- এমন আশা সেনাবাহিনীর। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে বনায়ন, মৎস্য চাষ, নানান প্রজাতির বন্য প্রাণী ও পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে স্বর্ণদ্বীপকে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিদর্শন করতে এসে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, স্বর্ণদ্বীপ মানেই শেখ হাসিনার স্বপ্নের দ্বীপ। স্বর্ণদ্বীপের প্রকল্পগুলো প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রিয় প্রকল্প। তিনি সব সময় এ দ্বীপের খোঁজখবর রাখছেন। তাঁর আন্তরিক সহায়তায় ও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় এ স্বর্ণদ্বীপ এক সময় আরেকটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন কুমিল্লা এরিয়া ৩৭০ বর্গকিলোমিটার স্বর্ণদ্বীপের দায়িত্ব নেয় ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি। সেনাবাহিনীর উচ্চতর প্রশিক্ষণ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ দ্বীপে ২টি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন করা হয়। পর্যায়ক্রমে এখানে এ ধরনের আরও ৩টি সেন্টার স্থাপন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত মেজর মোরশেদুল আজাদ জানান, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ১৬ লাখ টাকায় ১১৬ হেক্টর জায়গায় বনায়ন করা হয়েছে। এছাড়া স্বর্ণদ্বীপের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাংশে ২ হাজার কেজি কেওড়া গাছের বীজ কাদার সঙ্গে মিশিয়ে ছোট ছোট ‘সীড বোম্ব’ তৈরি করে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ছিটানো হয়েছে। ৬০ হাজার পবন ঝাউ গাছের চারা লাগানো হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপ রক্ষায় পরিকল্পিত বনায়নের কোন বিকল্প নেই। ৩৫টি কৃত্রিম গ্রাম তৈরি ও ২শ’ পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। দ্বীপের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে শিকারী ও গাছ চোরদের উৎপাত নেই। ফলে স্বর্ণদ্বীপ এখন বন্য প্রাণী, পশু-পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনীর ডেইরি ফার্ম সম্পর্কে মেজর সাইদুর রহমান জানান, দ্বীপের এ ফার্মে ২ শতাধিক বাফেলো, ৩শ‘ ভেড়া, ১২শ’ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, মুরগি, কবুতর রয়েছে। বাফেলোর দুধে পনির তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে একশ’ কেজি পনির উৎপাদন হয়। ৩৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকার এ স্বর্ণদীপের ১৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সেনাবাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি জলবায়ু মোকাবেলাসহ পরিবেশের উন্নয়ন করতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সেনাবাহিনীর নানান প্রকল্প হতে নিয়েছে। সেনা কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণদ্বীপের মিলিটারি ডেইরি ফার্ম থেকে উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও পনিরসহ উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী এখানকার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা সেনানিবাসে সরবরাহ করা হবে। স্বর্ণদ্বীপের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনকালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দ্বীপের ময়নামতি সেনা ক্যাম্পের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জলবায়ু সহিষ্ণু বাংলাদেশ শীর্ষক স্বর্ণদ্বীপ এলাকায় নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর এক মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এছাড়া ২নং মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টারের সামনে একটি নারকেল গাছের চারা রোপণ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, স্বর্ণদ্বীপের প্রকল্পগুলো প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার প্রিয় প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী সব সময় এ দ্বীপের খোঁজখবর রাখছেন। এ দ্বীপের উন্নয়নে অনেক অবকাশ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহায়তায় ও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় এ স্বর্ণদ্বীপ এক সময় আরেকটি বাংলাদেশে পরিণত হবে, এখানে সোনা ফলবে। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কুমিল্লা এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল রাশেদ আমিন এনডিসি-পিএসসি, ব্রিগেডিয়ার মামুন, কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনসহ নোয়াখালী জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
×