ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প-ঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাকি হার্প দিয়ে আমেরিকার আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ!

প্রকাশিত: ১০:১২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১০:১২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প-ঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাকি হার্প দিয়ে আমেরিকার আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ!

সম্প্রতি ঘনঘন ঘটে চলা ভূমিকম্প, হারিকেন, ও নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে একধরনের সন্দেহ তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক পর্যায়ে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুসারীরা প্রশ্ন তুলছেন এসব কি প্রকৃতিই ঘটাচ্ছে, নাকি প্রযুক্তির আড়ালে চলছে কোনো সুপরিকল্পিত কারসাজি? আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হার্প’ নামের একটি গোপন প্রকল্প।


২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরে আঘাত হানে হারিকেন ক্যাটরিনা। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। শহরটি পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে একটি অদ্ভুত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব,এই হারিকেন আসলে কোনো সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এর পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোপন প্রকল্প ‘হার্প’।

হার্প আসলে কী?
হার্প-এর পূর্ণরূপ ‘হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাকটিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম’। কথিত আছে, এটি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজাইন করা একটি গোপন গবেষণা প্রকল্প। ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিশ্বাসীরা দাবি করে, হার্প দিয়ে শুধু ঝড় বা বৃষ্টিই নয়, ভূমিকম্পও সৃষ্টি করা যায়। এমনকি মানুষের মনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তারা বিশ্বাস করে।

রহস্যময় আলো ও হার্প তরঙ্গ: ষড়যন্ত্রের প্রমাণ?
তাদের যুক্তি, বড় বড় দুর্যোগের আগে আকাশে অস্বাভাবিক মেঘ, আলোর ছলকানি বা রহস্যময় আলো দেখা যায়। ইন্টারনেটে এই ধরনের ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যা তারা বলে হার্প থেকে নিঃসৃত রেডিও তরঙ্গের প্রভাব। এমন অভিযোগের মধ্যে ২০১০ সালের হাইতির ভূমিকম্প, ২০১১ সালের জাপানের তুহুকু ভূমিকম্প এবং পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যার মত ঘটনাগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের মতে, হার্পের গোপন পরীক্ষার ফলেই এসব বিপর্যয় ঘটে। ২০২৪ সালের হারিকেন হেলেন এবং মিল্টন নিয়েও একই ধরনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে।

হার্প প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক দিক ও ব্যবহার
হার্প আসলে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অবস্থিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প, যা মূলত বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার নামক একটি বিশেষ স্তরের উপর গবেষণা করে। এই স্তরে সূর্যের রশ্মি এবং মহাজাগতিক কণার প্রভাবে গ্যাসগুলো আয়নে পরিণত হয়। বিজ্ঞানীরা জানতে চেয়েছিলেন—কিভাবে এই স্তরের রেডিও তরঙ্গগুলো আচরণ করে।
আয়নোস্ফিয়ার স্যাটেলাইট যোগাযোগ, সামরিক রেডিও সিগনাল এবং সাবমেরিনের রেডিও যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে হার্পের গবেষণা চালানো হচ্ছে, যাতে এসব যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত না হয়। সূর্যের সক্রিয়তা বা মহাজাগতিক বিকিরণ যেসব সমস্যা সৃষ্টি করে, সেগুলো মোকাবিলা করতেই হার্পের রেডিও তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়।

আস্থা না সন্দেহ? হার্প নিয়ে বিতর্ক
হার্পে শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ প্রেরণের ক্ষমতা নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তাদের যুক্তি—যতটা শক্তিশালী তরঙ্গ আকাশে ছোড়া হয়, ততটাই শক্তি দিয়ে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের কিছু গোপন প্রকল্প যেমন ‘এম কে আল্ট্রা’, যা মানুষের উপর গোপনে পরীক্ষা চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল, তা হার্প নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমনকি অনেকের দাবি, হার্প প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ভয়ঙ্কর কৃত্রিম শক্তি অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে, যা প্রকৃতি ও মানুষের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: ষড়যন্ত্রের পক্ষে নেই প্রমাণ
তবে বিজ্ঞানীরা এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি দেন। তাদের মতে, ভূমিকম্প বা বড় ঝড়ের আগে আকাশে রহস্যময় আলো দেখা যায়—এটি সত্য। কিন্তু সেগুলি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, ভূমিকম্পের আগে ‘আর্থক লাইটস’ নামে পরিচিত বৈদ্যুতিক চার্জ সৃষ্টির ফলেই এমন আলোগুলো দেখা যায়।

জনগণের সন্দেহ কি দূর হবে?
তবুও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অনুসারীরা থেমে থাকে না। তাদের দাবি, সরকার আসল তথ্য গোপন করছে। তারা আরও বলেন, হার্প প্রকল্পের সাহায্যে মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলা সম্ভব, এমনকি তাদের আবেগও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদিও এটির পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তথাপি মানুষের সন্দেহের দানা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

হার্প কি শুধুই গবেষণা, নাকি গোপন অস্ত্র?
বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, হার্প প্রকল্প সম্পর্কে সরকার সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। এমনকি তাদের ওয়েবসাইটও সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিশ্বাসীরা দাবি করেন এখানে যা দেখানো হয় তা আসল নয়। সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই গোপন রাখা হয়।


শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যায়,আসলেই হার্প কি? এটি কি শুধুই একটি নিরীহ গবেষণা প্রকল্প, নাকি গোপনে শক্তিশালী কোনো অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া?
প্রকৃতি যদি আজ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে, আর তার পেছনে যদি থাকে মানুষের হাত, তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে,আমরা কি প্রকৃতির সঙ্গে খেলছি? নাকি গড়ে তুলছি এক বিপজ্জনক ভবিষ্যৎ?


সূত্র:https://tinyurl.com/4e43pcum

আফরোজা

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার