ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে মেসির ৮০০

​​​​​​​স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২৪ মার্চ ২০২৩

বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে মেসির ৮০০

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবার মাঠে নামল আর্জেন্টিনা। শুক্রবার পানামার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের শেষে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ট্রফি হাতে লিওনেল মেসি

বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছে আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে নিজ দেশের রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে পানামার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছে লিওনেল মেসির দল। ম্যাচে - গোলে জয় পেয়েছে আলবিসেলেস্তাররা। ম্যাচের শেষের দিকে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল দুটি করেন উঠতি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার থিয়াগো আলমাডা অধিনায়ক লিওনেল মেসি।

বিশ্বকাপের পর এটাই প্রথম ম্যাচ হওয়ায় আর্জেন্টিনা সেজেছিল সাজ সাজ রবে। ম্যাচ শুরুর আগেই আতশবাজির বিচ্ছুরণে আবেগময় উৎসব শুরু করেন আর্জেন্টানইন সমর্থকরা। ১৫ লাখ টিকেট প্রার্থীদের মাঝ থেকে মাত্র ৮৩ হাজার ভাগ্যবান দর্শক ম্যাচটি সরাসরি উপভোগ করার সুযোগ পান। মেসি, কোচ লিওনেল স্কালোনি অধিকাংশ খেলোয়াড় তাদের সন্তানদের নিয়ে মাঠে এসেছিলেন। ম্যাচটি আরও রাঙিয়ে দিয়েছেন মহাতারকা অধিনায়ক মেসি। তিনি তার ক্যারিয়ারের ব্যক্তিগত ৮০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তবে প্রথমবারতিন তারকাখচিত জার্সি পরে খেলতে নেমে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ে আর্জেন্টিনা। প্রথম মিনিট থেকে পানামার দুর্গে আক্রমণের ঢেউ বইয়ে দিয়েও তারা পাচ্ছিল না জালের দেখা। মেসির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পোস্ট। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আটকানো যায়নি খুদে জাদুকরকে। তাইতো মেসির ইতিহাস গড়ার রাতে জয়োৎসব করেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রিকিকে লক্ষ্যভেদ করার পর পেশাদার ক্যারিয়ারে ক্লাব আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে মেসির গোল হয়েছে ৮০০টি। সবচেয়ে বেশি ৮৩০ গোল করে চূড়ায় আছেন তার দীর্ঘ সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। বর্তমানে জাতীয় দলের জার্সিতে ১৭২ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা ৯৮টি। আরেক হিসেবে গোল ৯৯টি।

ম্যাচকে ঘিরে এক সপ্তাহ আগে থেকেই বুয়েন্স আয়ার্সে উৎসবের আবহ শুরু হয়। ম্যাচের আগে তা রূপ নেয় ভালোবাসার জোয়ারে। স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেয়া হয় ম্যাচ শুরুর পাঁচ ঘণ্টা আগে। কোনোরকম ঝামেলা এড়াতে কড়া নিরাপত্তায় ফুটবলারদের মাঠে আনা হয় ঘণ্টা আগে। আর্জেন্টাইনরা এই ম্যাচকে নিয়েছিল জাতীয় বীরদের অভিবাদন জানানোর মঞ্চ হিসেবে। মেসিরাও তাতে শামিল হন সবটুকু আবেগ নিয়ে। জাতীয় সংগীতের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মেসি। গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের গাল বেয়ে নামে জল, ডাগআউটে কোচ লিওনেল স্কালোনির চোখেও দেখা যায় পানি। দলের প্রত্যেককে দিন উপহার দেয়া হয় বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা। উদযাপনকে ভিন্ন মাত্রা দেয় পরিবার নিয়ে সবার হাতে উঁচিয়ে ধরা সেই ট্রফি। ম্যাচের পর মেসির প্রতিক্রিয়ায় ফুটে ওঠে সেই অনুভূতিগুলোই। ম্যাচ শেষে মেসি বলেন, আমি সবসময় এই মুহূর্তটির স্বপ্ন দেখেছি, আমার দেশ আর্জেন্টিনায় আপনাদের সঙ্গে বিশ্বের সেরা জিনিসটি  উদযাপন করা, তা হলো বিশ্বকাপ। আমরা যা করে আসছি, তা চলতে থাকুক এবং উপভোগ করতে থাকি। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই এই জয়ের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।তিন তারা উদযাপন করতে থাকুন শুধু বিশ্বকাপই নয়, কোপা আমেরিকা জয়ের পর থেকেই আপনাদের যে ভালোবাসা সম্মান, সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা কথা দিয়েছিলাম যে এই ট্রফির জন্য নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দেব।

তবে এই উৎসবেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চে মার্টিনেজের অশ্লীল উদযাপন নিয়ে কম কথা হয়নি। একের পর এক সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামতেই সব হাওয়া। বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আসর সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারগোল্ডেন গ্লোভস নিতে মঞ্চে উঠেছিলেন মার্টিনেজ। পুরস্কারটি নিয়ে তা ঠিক কোমরের সামনের অংশে ধরে উদযাপন করেন মঞ্চেই। যা নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকেই। পরেফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীকে মার্টিনেজ বলেছিলেন, ‘আসলে এমন কিছু বিষয় আছে যা আমি দ্বিতীয়বার কখনো একইভাবে করতে চাইব না। সতীর্থদের সঙ্গে মজা করতে ওটা করেছিলাম। কোপা আমেরিকাতেও করেছি। এমনকি মেসি নিজেও আমাকে ওটা করতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমি ওদের জন্যই করেছি।

মার্টিনেজ নিজের কথা রাখতে পারেননি। সেই বিতর্কিত উদযাপন আবারো করেছেন। অবশ্য পানামার বিরুদ্ধে জয়ের পর বিতর্কিত সেই উদযাপন মার্টিনেজ একা করেননি; তার সঙ্গে যোগ দেন আরও চার সতীর্থ। পাঁচজন মিলে বিশ্বকাপের রেপ্লিকা ট্রফি কোমরের সামনের অংশে উঁচিয়ে ধরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে উদযাপন করেন। নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে বিতর্ক।

×