ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সেই মেলবোর্নেই জোকোভিচের ইতিহাস

আয়ান আব্রাজ

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সেই মেলবোর্নেই জোকোভিচের ইতিহাস

নোভাক জোকোভিচ

দীর্ঘ পনেরো বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেই জীবনের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ। ২০০৮ সালে মেলবোর্নে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিলেন সার্বিয়ান তারকা। নিজের প্রিয় কোর্টে আরও একবার বাজিমাত করলেন জোকোভিচ। রবিবার ফাইনালে গ্রীক তারকা স্টেফানোস সিসিপাসকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। 
মেলবোর্নের ফাইনালে জোকোভিচ ৬-৩, ৭-৬ (৭/৪) এবং ৭-৬ (৭ /৫) গেমে পরাজিত করেন সিসিপাসকে। আর তাতেই ছেলেদের টেনিসে সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী রাফায়েল নাদালের রেকর্ডে ভাগ বসালেন তিনি। শুধু তাই নয়? বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটাও পুনরুদ্ধার করলেন ৩৫ বছর বয়সী এই তারকা। করোনা প্রতিষেধক না নেওয়ায় গত বছর মেলবোর্নে আটক হয়ে দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল জোকোভিচকে। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেই এবার জিতলেন রেকর্ড দশম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন।

একক কোনো গ্র্যান্ডস্লামে সর্বোচ্চ ১৪বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির রয়েছে কেবল রাফায়েল নাদালেরই। ফ্রেঞ্চ ওপেনে স্প্যানিশ টেনিস তারকার পর জোকোভিচই দশবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফিতে চুমো খাওয়ার রেকর্ড গড়লেন এবার। পক্ষান্তরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জোকোভিচের কাছে গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারালেন সিসিফাস। এর আগে ২০২১ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে ‘জোকার’ খ্যাত এই সার্বিয়ান তারকার কাছে হেরেই হৃদয় ভেঙেছিল ২৪ বছর বয়সী গ্রীক তারকার। এবার বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্লামে হারায় প্রধান কোনো ওপেনে ট্রফি উঁচিয়ে ধরার স্বপ্নটা আরও একবার ধাক্কা খেল সিসিপাসের।

করোনার সার্টিফিকেট দেখাতে না পারার কারণে গত বছর তাকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতেই দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়? অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার জন্য শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্তও যেতে হয় সার্বিয়ান তারকার। জোকোভিচের অনুপস্থিতিতে সেবার বাজিমাত করেছিলেন রাফায়েল নাদাল। কিন্তু এবার তাকে খেলার সুযোগ দেয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সুযোগ পেয়েই যেন নিজের জাত চেনালেন এই তারকা। শুরু থেকেই দাপুটে পারফর্মেন্স উপহার দেন মেলবোর্নের রাজা। গ্রিগর দিমিত্রোভ, আন্দ্রে রুবলেভ, টমি পলের মতো খেলোয়াড়দের হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেন তিনি।

শিরোপার লড়াইয়ে সিসিপাসকেও উড়িয়ে দেন সরাসরি সেটে। এর ফলে ২০১৮ সালের পর মেলবোর্নে কোনো ম্যাচে হার দেখেননি সার্বিয়ান তারকা। গড়েন টানা ২৮ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড। এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে জোকোভিচ প্রমাণ করলেন মেলবোর্নে তাকে থামানোর পথ কেবল একটাই; তা হলো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে! এমন পরিস্থিতিতেও দাপুটে পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না জোকোভিচের।

বিশেষ করে শেষ চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের কথা ম্যাচের শেষেই আলাদা করে তুলে ধরেছেন তিনি। জোকোভিচ বলেন, ‘গত বছর না খেলা এবং এক বছর পর আবারও এখানে ফিরে আসাটা আমার জন্য ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। সত্যি বলতে পরিস্থিতি বিবেচনায় এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন টুর্নামেন্ট। বিশেষ করে গত চার-পাঁচ সপ্তাহ যেভাবে পার করেছি তা কেবল আমার পরিবার এবং টিমই জানে।’
ছেলেদের টেনিসের ত্রি-মূর্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় নাদাল-ফেদেরার-জোকোভিচকে। সবার আগে ২০ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ড গড়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ফেড এক্সপ্রেস। গত বছর টেনিসকে বিদায়ও বলে দিয়েছেন সুইস কিংবদন্তি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দশম শিরোপা আর রেকর্ড ২২ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জয় করায় জোকোভিচের প্রশংসা করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রজার ফেদেরার।

ইনস্টাগ্রামে সংক্ষিপ্ত এক বার্তায় ২০ গ্র্যান্ডস্লামজয়ী ফেদেরার লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত প্রচেষ্টা, আবারো। অনেক অনেক অভিনন্দন।’ মেলবোর্নে সর্বোচ্চ দশবারের শিরোপাজয়ী জোকোভিচের ঝুলিতে এখন রয়েছে সাতটি উইম্বলডন, তিনটি ইউএস ওপেন এবং দুটি ফ্রেঞ্চ ওপেনের ট্রফি। ফেদেরার অবসরে চলে যাওয়ায় এখন লড়াইটা কেবলই নাদাল-জোকোভিচের। এই মুহূর্তে দুজনের অবস্থানও একই বিন্দুতে। তবে জোকোভিচ এ বয়সেও যেভাবে খেলছেন নাদালকে ছাড়িয়ে যাওয়াটা যেন তার জন্য কেবলই সময়ের ব্যাপার।

সেই উত্তর এখন সময়ের হাতে। তবে নিজের রেকর্ডে ভাগ বসানোর পর জোকোভিচকে অভিনন্দন জানাতে মোটেও ভুল করেননি রাফায়েল নাদাল। স্প্যানিশ টেনিস তারকাও সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ইন্সটাগ্রামের স্টোরিতে জোকোভিচের ২২তম গ্র্যান্ডস্লামজয়ী একটি ছবি পোস্ট করেন। যার ক্যাপশনে রাফা লিখেন, ‘এটা তোমার বিস্ময়কর অর্জন নোভাক জোকোভিচ। সেজন্য তোমাকে এবং তোমার দলকে অভিনন্দন। যোগ্য হিসেবেই এই ট্রফি জিতেছো তুমি।

এখন উপভোগ করার সময়।’ ইন্সটাগ্রামের সেই স্টোরি পরে জোকোভিচও শেয়ার দিয়েছেন তার নিজের স্টোরিতে। সেইসঙ্গে রাফায়েল নাদালকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। ক্যাপশানে লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ, রাফা।’  নাদালেরই স্বদেশী কার্লোস আলকারাজ। ইউএস ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও অভিনন্দন জানিয়েছেন জোকোভিচকে। তিনি লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয় এবং বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থান দখল করার জন্য নোভাক জোকোভিচকে অভিনন্দন। আশা করি কোর্টে খুব শীঘ্রই মুখোমুখি হব।’ নিক কির্গিওস তো এক টুইটে লিখেই দিয়েছেন যে, ‘সে (জোকোভিচ) খুব সহজেই ২৮টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতবে। এটা তার পক্ষে সম্ভব।’

×