ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০

জয় দিয়ে শুরুর আশা আজ ব্রাজিলের

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:১২, ২৪ নভেম্বর ২০২২

জয় দিয়ে শুরুর আশা আজ ব্রাজিলের

সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা

নান্দনিক ফুটবলের পূজারি ব্রাজিল। রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মনোমুগ্ধকর পারফরমেন্স দেখার জন্য গোটা দুনিয়া উন্মুখ হয়ে থাকে। কাতার বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০ নভেম্বর ২২তম বিশ্বকাপের পর্দা ওঠার পর প্রথম চারদিন মাঠে নামেনি সেলেসাওরা। অবশেষে হেক্সা অর্থাৎ ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের মিশন শুরু করছে বিশ্ব ফুটবলের সেরা সাফল্যের দলটি। শুরুর মিশনে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ইউরোপের লড়াকু দল সার্বিয়া।

কাতারের দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ‘জি’ গ্রুপের ম্যাচটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায়। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও সার্বিয়া। ২৭ জুন মস্কোতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পাউলিনহো ও থিয়াগো সিলভার গোলে ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল পেলের দেশ। বিশ্বকাপ ছাড়া আর একবারই একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলেছে এই দুই দল। ২০১৪ সালে ওই প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। অর্থাই দুইবারের দেখায় একবারও সেলেসাওদের জাল খুঁজে পায়নি সার্বিয়ানরা।

এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইউরোপ অঞ্চলে নিজেদের গ্রুপে অপরাজিত ছিল সার্বিয়া। সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের বিরুদ্ধে বাছাইয়ের শেষ ম্যাচে ৯০ মিনিটে ফরোয়ার্ড আলেক্সান্দার মিত্রোভিচের করা গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতে সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় সার্বিয়া। ওই হারে পর্তুগালকে খেলতে হয়েছিল ভাগ্যনির্ধারণী প্লেঅফ। এই তথ্য জানান দিচ্ছে, অধিনায়ক ডুসান টাডিচের দল থিয়াগো সিলভা, নেইমার, ভিনিসিয়াসদের ছেড়ে কথা বলবে না।

দলটির কোচ ড্রাগান স্টোকোভিচ তেমন আভাসই দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ছেলেরা সেরাটা দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ সাতটি ম্যাচে দাপুটে জয়ে ব্রাজিল আত্মবিশ^াস নিয়ে মাঠে নামবে। এই ম্যাচগুলোতে ২৬ গোল করার পাশাপাশি তিতের দল হজম করেছে মাত্র দুই গোল। ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগের তিন বিশ^কাপেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সার্বিয়ার।

এবার প্রথমবারের মতো বিশ^কাপের নকআউট পর্বে খেলার স্বপ্ন নিয়েই কাতারে এসেছে তারা। বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৫তম স্থানে থাকা ‘দ্য ঈগলস’রা ইউরোপের বাছাইপর্বে আট ম্যাচে ছয় জয় ও দুটিতে ড্র নিয়ে শীর্ষ দল হিসেবে কাতারের টিকিট পেয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের শুরুতে ড্রাগান স্টোকোভিচের দল উয়েফা নেশন্স লিগের লিগ ‘এ’ গ্রুপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

এই আসরে ছয় ম্যাচে তারা চারটিতে জয় ও দুটি ড্র করেছে। সবধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ ষোলো আন্তর্জাতিক ম্যাচে সার্বিয়া হেরেছে মাত্র দুটিতে। এসব তথ্যই জানান দিচ্ছে, সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটা ব্রাজিলের জন্য সহজ হবেনা। তাছাড়া সৌদি আরবের কাছে হট ফেভারিট আর্জেন্টিনার হারও এসব দলকে অনুপ্রাণিত করছে।
এসব মাথায় রাখছেন দলটির কোচ তিতে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জানি। তাদের সাম্প্রতিক পারফমেন্স বেশ ভালো। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলব। শিষ্যদের বলেছি চাপমুক্ত থেকে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে। বরাবরের মতো হট ফেভাারিটের তকমা গায়ে লাগিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করছে ব্রাজিল। হেক্সা মিশনে প্রত্যাশার চাপ থেকে বেরিয়ে ভারমুক্ত থেকে ভালো খেলা উপহার দিতে চায় তিতে বাহিনী। সেলেসাওদের তাঁবুতে একঝাঁক তরুণ প্রতিভা থাকলেও সমস্যাও আছে কিছুটা।

কেননা দলের ১৬ জন খেলোয়াড়েরই এর আগে বিশ^কাপ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। দারুণ প্রতিভাবান এই নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রডরিগো, রাফিনহা, এডার মিলিটাও, বুনো গুইমারায়েস, অ্যান্টোনির মতো তরুণ তুর্কিরা। ইউরোপ জুড়ে এলিট ক্লাবগুলোতে খেলে ইতোমধ্যেই এসব তরুণেরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
এই তরুণদের সঙ্গে দলের সুপারস্টার নেইমারের নামটা চলে আসে সবার আগে। ২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হারের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ ম্যাচে ৩৭ জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এই সময়ের মধ্যে তারা শুধু ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে পরাজিত হয়েছে। ২০০২ সালে সবশেষ বিশ^কাপ জিতেছে ব্রাজিল।

এরপর ২০ বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। বিশ^ র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে এবার কাতারে শিরোপা পুনরুদ্ধার করাই একমাত্র লক্ষ্য ব্রাজিলের। বরাবরের মতো এবারও পেলের দেশকে নিয়ে উন্মাদনা চরমে। এখন মাঠের পারফরমেন্সে সেই চাওয়ার বাস্তবায়ন ঘটানোর পালা। এই মিশনে প্রথম ম্যাচে কোচ তিতে পুরোপুরি ফিট একটি স্কোয়াড হাতে পাচ্ছেন।

অ্যান্টনি, গুইমারায়েস ও অ্যালেক্স টেলাস সামান্য চোট সমস্যায় থাকলেও তা কাটিয়ে উঠেছেন। ৪-১-৪-১ অথবা ৪-২-৩-১ ফর্মেশনের যে কোনো একটিতে খেলতে পারে ব্রাজিল। অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার সঙ্গে রক্ষণভাগের তিন পজিশনে থাকবেন ডানিলো, মারকুইনহোস ও অ্যালেক্স সান্দ্রো। লিভারপুলের তারকা গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার সামলাবেন গোলপোস্ট। কাসেমিরো ও লুকাস পাকুয়েটা সেন্টার মিডফিল্ডে খেলার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। সামনে নেতৃত্ব দিবেন দলের প্রাণভোমরা নেইমার।

সম্পর্কিত বিষয়:

শীর্ষ সংবাদ: