ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

এইচআইভি প্রতিরোধে নতুন যুগের সূচনা: বছরে দুইবার ইনজেকশনেই সুরক্ষা

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৪ জুন ২০২৫

এইচআইভি প্রতিরোধে নতুন যুগের সূচনা: বছরে দুইবার ইনজেকশনেই সুরক্ষা

ছবি: সংগৃহীত

এইচআইভি প্রতিরোধে এক নতুন যুগের সূচনা করল যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)। চলতি বছরের ১৮ জুন সংস্থাটি অনুমোদন দিয়েছে এমন এক ইনজেকশনের, যা বছরে মাত্র দু’বার নিলেই এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মিলবে সুরক্ষা। নতুন এই ওষুধের নাম লেনাক্যাপাভির (Lenacapavir), বাজারে পাওয়া যাবে Yeztugo নামে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এইচআইভি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি ‘মাইলফলক’, যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক এইচআইভি মহামারি প্রতিরোধে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

বর্তমানে এইচআইভি প্রতিরোধে ব্যবহৃত ‘প্রি-এক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস’ (PrEP) নামের ওষুধগুলো প্রতিদিন খেতে হয়। ফলে অনেকেই নিয়মিত সেবন করতে পারেন না, যা কার্যকারিতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। এর বিপরীতে, লেনাক্যাপাভির ছয় মাসে একবার শরীরে প্রবেশ করলেই তা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকরভাবে কাজ করে।

দুইটি গবেষণায় দেখা গেছে, লেনাক্যাপাভির সিসজেন্ডার নারীদের ক্ষেত্রে শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। আর সমকামী পুরুষ ও লিঙ্গ-পরিচয় বহুবিধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ ওষুধের কার্যকারিতা ৯৬ শতাংশ।

কোলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. ডেভিড হো বলেন, ‘এইচআইভি প্রতিরোধে শুধু লেনাক্যাপাভির ব্যবহার একটি বড় অগ্রগতি। এটি মহামারিকে রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’ তবে আন্তর্জাতিক এইডস সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, মার্কিন সহায়তা ফান্ড কমে যাওয়ার কারণে অনেক দেশেই এর পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে।

২০২২ সালে প্রথমে লেনাক্যাপাভিরকে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার অনুমোদন দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, এই ওষুধ দীর্ঘ সময় শরীরে সক্রিয় থাকে এবং ভাইরাসের পুনরুৎপাদনের একাধিক স্তরকে বাধা দেয়। এর ফলে এটিকে প্রতিরোধমূলক ইনজেকশন হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

লেনাক্যাপাভির কোনো টিকা নয়, তবে এটি শরীরে এমনভাবে সক্রিয় থাকে যেন ভাইরাস প্রবেশের আগেই তা প্রতিহত করতে পারে। ফলে গবেষকরা বলছেন, এটি কার্যত টিকার মতোই কাজ করছে। ৪০ বছরের গবেষণার পরও এখনো কার্যকর এইচআইভি টিকা তৈরি হয়নি, যেখানে লেনাক্যাপাভির ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে কার্যকারিতা।

‘গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইচআইভি, টিবি অ্যান্ড ম্যালেরিয়া’ এর সরবরাহ পরিচালক হুই ইয়াং বলেন, ‘প্রতিরোধমূলক প্রোগ্রামে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ছয় মাস অন্তর ইনজেকশন ব্যবহারের সুযোগ সেটিকে অনেকটাই সহজ করবে।’

তবে সমস্যা হলো, ইনজেকশনটি বর্তমানে স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রতিবার প্রয়োগের আগে এইচআইভি নেগেটিভ কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়। যা স্বল্প ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

Gilead এখনো লেনাক্যাপাভিরের দাম ঘোষণা করেনি, তবে জানিয়েছে এটি বাজারে থাকা অন্যান্য ব্র্যান্ডের PrEP ওষুধের দামের কাছাকাছিই থাকবে। এটাই সবচেয়ে বড় শঙ্কার জায়গা। কারণ যারা এই ওষুধের সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে পারেন—নিম্ন আয়ের মানুষ—তাদের পক্ষে এটি ক্রয় করা কঠিন হবে।

amfAR-এর সিইও কেভিন ফ্রস্ট বলেন, ‘আমরা হয়তো বিশ্বের সেরা উড়োজাহাজ তৈরি করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সব রানওয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। যদি বিতরণব্যবস্থাই না থাকে, তাহলে এমন ওষুধও ব্যর্থ হতে বাধ্য।’

Gilead ইতোমধ্যে ছয়টি জেনেরিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, যাতে ১২০টি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে royalty-free ভিত্তিতে লেনাক্যাপাভির তৈরি ও সরবরাহ করা যায়। তবুও USAID ও PEPFAR-এর মতো প্রকল্প সংকুচিত হয়ে পড়ায় সেই ওষুধ আদৌ এসব দেশে পৌঁছাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিজ্ঞানী, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লেনাক্যাপাভিরকে এইচআইভি প্রতিরোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে এর সফলতা নির্ভর করছে সুলভ দামে ও কার্যকরভাবে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে এটি পৌঁছে দেওয়ার ওপর।

 

সূত্র: টাইম ডট কম।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×