
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ এমন একটি অনুভূতির মুখোমুখি হয়েছেন কি কখনো যেখানে মনে হয়েছে আপনি মাটি ছেড়ে উপরে উঠছেন, অথচ আপনার শরীর বিছানাতেই রয়েছে? চারপাশে ডানা নেই, প্লেন নেই, তবু আপনি আকাশে ভেসে চলেছেন,এক অভূতপূর্ব হালকাভাব, যেন মাধ্যাকর্ষণ আর আপনাকে ছুঁতে পারছে না।
এই ভেসে থাকার অনুভূতি কি নিছক স্বপ্ন, না কি এর পেছনে লুকিয়ে আছে মস্তিষ্কের কোনো জটিল স্নায়বিক খেলা?
বিজ্ঞান বলছে, আমাদের ব্রেন মাঝে মাঝে এমন এক বাস্তবতার সৃষ্টি করে, যা জাগতিক জগতের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল ও জীবন্ত মনে হয়। এই ‘ওড়ার স্বপ্ন’ বিশেষত ঘুমের REM (Rapid Eye Movement) পর্যায়ে ঘটে, যখন মস্তিষ্ক থাকে চরমভাবে সক্রিয় আর শরীর পুরোপুরি নিস্ক্রিয়। ঠিক তখনই ব্রেন তৈরি করে এক অলৌকিক মানসিক মঞ্চ,যেখানে মানুষ ভেসে ওঠে নিজের কল্পনার মহাকাশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের স্বপ্ন অনেক সময় অবচেতনের প্রতীক। আমরা হয়তো মনে মনে চাই, বাস্তবতা থেকে পালাতে। মনের গহীনে জন্ম নেয় এক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। সেই আকাঙ্ক্ষাকেই ব্রেন রূপ দেয় এক অদৃশ্য উড়ানে।
কিছু গবেষক মনে করেন, এই অনুভূতি লুসিড ড্রিমিং-এর ফল,যেখানে আপনি জানেন আপনি স্বপ্ন দেখছেন, এবং আপনি নিজের ইচ্ছেমতো সেই স্বপ্নের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। এমনকি ইচ্ছা করলেই উড়তেও পারেন! একে বলা হয় নিজের মস্তিষ্কেই তৈরি এক ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি।
তবে এই অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয় না। মাঝে মাঝে ঘুমাতে যাবার মুহূর্তে হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে বসেন আপনি, মনে হয় পড়ে যাচ্ছেন। এই ঝাঁকুনিকে বলা হয় Hypnic Jerk,মস্তিষ্কের এক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরকে মুহূর্তের মধ্যে জাগিয়ে তোলে।
মজার বিষয় হলো, এই ‘ওড়ার স্বপ্ন’ বা ভেসে থাকার অনুভূতির পেছনে শুধু নিউরো-বায়োলজিক ব্যাখ্যাই নেই, রয়েছে পুরনো সময়ের নানা বিশ্বাসও। প্রাচীন মানুষদের ধারণা ছিল, স্বপ্নে উড়া মানেই আত্মার মুক্তি,এক আধ্যাত্মিক সংযোগ। আজ বিজ্ঞান তা ব্যাখ্যা করে নিউরনের মাধ্যমে, তবে প্রশ্ন রয়ে যায়,এই অনুভূতি কি নিছকই মস্তিষ্কের বাগ, না কি এটা আমাদের আত্মারও কোনো ভাষা?
আপনার পরের ঘুমে যদি আবারও নিজেকে আকাশে ভেসে যেতে দেখেন, একটুখানি থেমে ভাবুন,এটা কি শুধুই স্বপ্ন? নাকি আপনার ব্রেন বলছে, "তুমি কল্পনায় সীমাহীন, তুমি ওড়তে পারো, যদি বিশ্বাস করো।"
সূত্র:https://tinyurl.com/4yhs4rr9
আফরোজা