ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হজের পর করণীয়: নতুন জীবনের সূচনা করার সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দিক

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১০ জুন ২০২৫

হজের পর করণীয়: নতুন জীবনের সূচনা করার সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দিক

ছবিঃ সংগৃহীত

 

হজ—ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মুসলমান এই মহান ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেদের আত্মসমর্পণ করেন। হাদিসে এসেছে, হজ পালন করলে মানুষ তার পূর্বের সব গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে ফেরে, যেন সদ্যোজাত শিশু। তবে শুধু হজ পালন করলেই যথেষ্ট নয়, বরং হজের মাধ্যমে অর্জিত আত্মিক শিক্ষা ও পরিবর্তনকে সারা জীবনের পথপ্রদর্শক বানানোই একজন হজযাত্রীর আসল সফলতা।

ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতে, হজের পরে একজন মুসলমানের জীবনযাত্রা ও চিন্তাধারায় একটি আমূল পরিবর্তন আসা উচিত। নিচে হজের পর একজন মুসলমানের জন্য সাতটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো:

১. তাওহিদের দৃঢ়তা ও শিরকমুক্ত জীবনযাপন

হজের প্রতিটি রুকনই আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহিদের শিক্ষা দেয়। তাই হজ শেষে হাজিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও একনিষ্ঠতা বজায় রাখা এবং শিরকের সব ধরনের কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা।

কোরআনের বার্তা: “আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সুরা আনআম: ৭৯)

২. নিয়মিত সালাত ও ইবাদতে অভ্যস্ততা

হজ শেষে একজন হাজির উচিত নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, যা মুসলমানের জীবনের ভিত্তি। নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রধান মাধ্যম এবং পাপ থেকে দূরে রাখার কার্যকর উপায়।

৩. সত্যবাদিতা ও সদাচরণ চর্চা

হজের শিক্ষা একজন মানুষকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক করে গড়ে তোলে। সমাজে একজন আদর্শ চরিত্রের মানুষ হিসেবে হাজির পরিচিতি গড়ে তোলা উচিত। প্রতিটি কাজে নৈতিকতা বজায় রাখা এবং মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা হজের অন্যতম বাস্তব অনুসরণ।

৪. আত্মশুদ্ধি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ

হজে গমন একটি আত্মিক জার্নি, যার পর একজন মানুষ নিজের ভেতরের খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। অহংকার, হিংসা, লোভ, অসততা ইত্যাদি ত্যাগ করে বিনয়ী ও আত্মনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন হজের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে।

৫. সন্তান-পরিবার ও সমাজে ইসলামের চর্চা

একজন হাজির উচিত নিজের পরিবার ও সমাজে ইসলামের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া। সন্তানদের নামাজ, সততা, পবিত্রতা ও নৈতিকতা শেখানো এবং সমাজে শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছানো হজের শিক্ষা বাস্তবায়নের অংশ।

৬. হারাম থেকে দূরে থাকা ও হালাল জীবিকা অর্জন

হজের পর জীবনধারায় হালাল-হারামের পার্থক্য আরও বেশি গুরুত্ব পায়। একজন হাজির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি বা উপার্জনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল থাকা জরুরি। সুদ, প্রতারণা, মিথ্যা প্রভৃতি থেকে দূরে থাকা হজের প্রতিফলন।

৭. নিয়মিত তাওবা ও আল্লাহর স্মরণ

হজের পরও আল্লাহর প্রতি ভয়, ভরসা এবং ক্ষমা প্রার্থনার মনোভাব জারি রাখা উচিত। দৈনন্দিন জীবনে জিকির, দোয়া ও কোরআন তেলাওয়াতকে অভ্যাসে পরিণত করা গেলে আত্মা হবে শান্তিপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ হবে সহজতর।

 

হজ শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা একজন মুসলমানের জন্য আত্মিক শুদ্ধি ও পরিবর্তনের সূচনা। হজের পর এই সাতটি বিষয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলে একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে “হাজি”র মর্যাদা লাভ করতে পারেন এবং একজন আল্লাহভীরু, মানবিক ও দায়িত্বশীল মুসলিম হিসেবে সমাজে অবদান রাখতে পারেন।

পৃথী

×