ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থের বরকত কমে যাওয়ার কারণ

অনেকেই অভিযোগ করেন যে, আয় বাড়লেও টাকা-পয়সার বরকত থাকছে না। মাসের শুরুতেই যে আয় আসে, তা যেন মাসের শেষ পর্যন্ত টিকে না। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় কম আয়েও সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল। ইসলামের আলোকে অর্থের বরকত কমে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে, যা আমাদের জানা দরকার।

১. হারাম উপায়ে উপার্জন
ইসলামে অর্থ উপার্জনের বৈধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো ব্যক্তি সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, জালিয়াতি বা হারাম ব্যবসার মাধ্যমে আয় করে, তবে তাতে বরকত থাকে না।
আল্লাহ বলেন: "আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন।" (সূরা আল-বাকারা: ২৭৬)

২. নামাজ ও ইবাদত থেকে গাফিলতি
যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে না বা আল্লাহর স্মরণে উদাসীন, তাদের জীবনে অর্থের বরকত কমে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: "যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল আল্লাহর জিকির করে, তার রিজিক বৃদ্ধি পায়।" (তিরমিজি)

৩. কৃপণতা ও জাকাত না দেওয়া
ইসলামে দান-সদকা ও জাকাত অর্থের বরকত বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। যদি কেউ জাকাত না দেয় বা দান-সদকা করতে কৃপণতা করে, তবে অর্থের বরকত কমে যায়।
রাসুল (সা.) বলেন: "তোমরা দান করো, আল্লাহ তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি করবেন।" (বুখারি, মুসলিম)

৪. মিথ্যা, প্রতারণা ও অসদাচরণ
ব্যবসা বা কাজের ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে, মিথ্যা বলে বা অসদুপায় অবলম্বন করে, তবে তার আয় থেকে বরকত উঠে যায়।
রাসুল (সা.) বলেন: "সৎ ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকবেন নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণ।" (তিরমিজি)

৫. হারাম খরচ ও অপচয়
অপ্রয়োজনে টাকা খরচ করা, বিলাসিতা বা হারাম কাজে অর্থ ব্যয় করা বরকত কমিয়ে দেয়।
আল্লাহ বলেন: "অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।" (সূরা আল-ইসরা: ২৭)

৬. পিতা-মাতার অবাধ্যতা
যদি কেউ বাবা-মায়ের প্রতি অবাধ্য হয়, তাদের অসম্মান করে, তাহলে তার জীবনের বরকত নষ্ট হয়।
রাসুল (সা.) বলেন: "যে ব্যক্তি তার আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তার রিজিকে বরকত থাকে না।" (বুখারি)

৭. অন্যের হক নষ্ট করা
অন্যের প্রাপ্য অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ করা, শ্রমিকের ন্যায্য পারিশ্রমিক না দেওয়া—এসব কারণে বরকত কমে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: "কেউ যদি কারও হক নষ্ট করে, কিয়ামতের দিন তাকে এর হিসাব দিতে হবে।" (মুসলিম)

বরকত শুধু টাকার পরিমাণে নয়, বরং সেই অর্থে শান্তি, সুস্থতা ও কল্যাণ থাকাই বরকতের লক্ষণ। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সৎ উপায়ে উপার্জন, দান-সদকা, ইবাদত-বন্দেগি, অপচয় এড়িয়ে চলা ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করলে অর্থের বরকত ফিরে আসবে।