
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরপরই প্রকাশিত একটি ব্যঙ্গচিত্র ঘিরে তুরস্কে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের মহান নবীদের অবমাননার অভিযোগে দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় ব্যঙ্গ পত্রিকা লেমান-এর কার্টুনিস্ট দোগান পেহলেভানসহ চারজনকে বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বুধবার দেওয়া এক রায়ে আদালত জানিয়েছে, পেহলেভান ও তার তিন সহকর্মীর বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো’ ও ‘রাষ্ট্রপতির অবমাননা’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিতর্কিত কার্টুনটি এমন এক সময় প্রকাশিত হয়, যখন পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতি উত্তপ্ত। কার্টুনটিতে দেখা যায়, আকাশে দুজন বৃদ্ধ পুরুষ—‘মোহাম্মদ’ ও ‘মোজেস’ নামধারী—করমর্দন করছেন, নিচে চলছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। অনেকেই এটিকে ইসলাম ধর্মের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং ইহুদি ধর্মের নবী হযরত মুসা (আ.)-কে অসম্মান করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নিজেই কার্টুনটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে "ঘৃণ্য উসকানি" বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, "আমাদের প্রিয় নবী এবং অন্যান্য নবীদের যাঁরা অবমাননা করবেন, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।" প্রেসিডেন্টের দল একে পার্টিও কার্টুনটির বিরুদ্ধে সরব হয়ে একে ইসলামবিদ্বেষমূলক ঘৃণার অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তবে আদালতে দেওয়া এক বিবৃতিতে কার্টুনিস্ট দোগান পেহলেভান বলেন, তার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের শিকার সাধারণ মানুষদের যন্ত্রণার প্রতিফলন ঘটানো। “আমি যদি নবীদের কথা বলতে চাইতাম, ‘প্রবেট’ (নবী) শব্দটি সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করতাম,” বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, ‘মোহাম্মদ’ ও ‘মোজেস’ নাম দুটি তুরস্কে বহুল ব্যবহৃত এবং এর মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরতে চেয়েছেন, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নয়। “এই কার্টুন শান্তির আহ্বান জানায়,” উল্লেখ করেন পেহলেভান।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি তিনজন হলেন লেমান পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং প্রশাসনিক পরিচালক। তারাও একই ধরনের অভিযোগের মুখে রয়েছেন।
পত্রিকার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কার্টুনটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বেসামরিক মানুষের দুঃখ তুলে ধরা, ধর্ম বা নবীদের অবমাননা নয়।
তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এবং বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে তুরস্কে এই ঘটনাটি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র:রয়টার্স
আফরোজা