ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের টালবাহানা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি: পাটওয়ারী

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৩ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:২১, ১৩ মে ২০২৫

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের টালবাহানা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি: পাটওয়ারী

ছ‌বি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ — এটি জনতার বিজয়ের প্রথম পর্ব।”

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, শুধু এ পর্যন্ত থেমে থাকা যাবে না। অতীতে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের টালবাহানা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। একইসঙ্গে, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর গণহত্যা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, এবং ‘জুলাই গণহত্যা’র মতো ঘটনায়ও আওয়ামী ঘাতকদের বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।”

নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন, “যেখানে দ্রুত বিচার হওয়া উচিত ছিল, সেখানে আমরা দেখেছি আহত ও বিপ্লবী জুলাইযোদ্ধাদের থানায় মামলা গ্রহণ করতেই গড়িমসি করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং এমনকি রাজধানীতেও জুলাইযোদ্ধারা এখনো হামলার শিকার হচ্ছেন আওয়ামী ঘাতকচক্রের হাতে।”

তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যকর পদক্ষেপ সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জনতার পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে দ্রুত সংস্কার করতে হবে। প্রতিটি বিভাগে ট্রাইব্যুনালের শাখা অফিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে তৃণমূলের নাগরিকরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা সহজে পেতে পারেন।”

নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী আরো বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আওয়ামী গণহত্যাকারীদের সাংস্কৃতিক, মিডিয়া ও অর্থনৈতিক ফ্রন্টগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান আন্দোলনকে ভিলিফাই করতে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফ্রেমে উপস্থাপন করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি শহিদদের মানবিক মর্যাদার প্রতি চরম অবমাননা।”

তিনি দাবি করেন, “আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পলাতক ঘাতকদের অর্থের জোগান এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে, তাদের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করে জনকল্যাণে ব্যবহারের দাবি জানাই আমরা।”

আওয়ামী লীগ ও এর ১৪ দলীয় জোটকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে যারা ভোট ডাকাতি ও নাগরিক অধিকার হরণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।”

তিনি জানান, সরকার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়নের জন্য ৩০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। তবে অতীতে যে টালবাহানা ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা গেছে, তা এই সময়সীমার যথার্থতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি করেছে।

নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “ঘোষণাপত্রে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিবরণ, জুলাই গণহত্যার শিকারদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা, এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনের ঘোষণার আগে বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণাও আবশ্যিক। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। এখনই সময় এই ঐক্যকে নবায়নের, এবং উপরে উল্লিখিত তিনটি দাবির যথাযথ বাস্তবায়নে সরকার ও রাজনৈতিক পক্ষগুলোর ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নিশ্চিত করার।”

এম.কে.

×