ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

রাতে ইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১২ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এবার নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হলো। ফলে প্রথমবারের নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়বে দেশের প্রাচীনতম এ দলটি।
সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের কক্ষে অনুষ্ঠিত এক কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ‘আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে।’
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার  এ এম এম নাসির উদ্দিনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে মিল রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নিবন্ধন স্থগিত করেছে।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে আজ  (সোমবার)  রাতের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এর আগে দুপুরে সিইসি নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন হাতে পাওয়ার পরই দলটির নিবন্ধন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।’
পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন হাতে এলে সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর পরই জরুরি বৈঠকে বসে ইসি।
এর আগে, বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সোমবার বিকেলে সরকারের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কথা জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের গেজেটের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনে যে ধরনের নির্দেশনা থাকবে আমরা সেভাবে কাজ করব।’

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। 
আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 
এসব অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহু মামলা বিচারাধীন।
এসব মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উস্কানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং ভিনদেশে পলাতক তাদের নেত্রীসহ অন্য নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে।
সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। তারা জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। 
এসব কারণে সরকার যুক্তিসঙ্গতভাবে মনে করে, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এগুলো যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন। 
তাই আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এর আগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে প্রেস বিবৃতি, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট বা জনসমাবেশসহ যে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
রবিবার রাতে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধিত খসড়াটি অনুমোদিত হয়।

×