ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

তারুণ্যের ভাবনায় বাংলাদেশ

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের যুগান্তকারী আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সন্নিবেশ

মাহবুব নাহিদ,রাজনৈতিক বিশ্লেষক

প্রকাশিত: ২২:০৪, ৭ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:০৪, ৭ মে ২০২৫

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের যুগান্তকারী আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সন্নিবেশ

ফাইল ছবি

দেশের নানাবিধ কাজে আমরা এখনও পুরোপুরিভাবে তরুণদের যুক্ত করতে পারি না। অথচ দেশের জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ, যারা রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বলা যায় তরুণরাই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ। যে সব তরুণরা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সাহস করে, তাঁদের হাতেই মানুষ দেখতে চায় উন্নয়নের ঝান্ডা। তরুণদের নিয়ে ভাবতে হবে, তরুণরা দাঁড়ালে দাঁড়িয়ে যাবে প্রিয় স্বদেশ। বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে যে “তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ” কেন্দ্রিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই আয়োজন নিশ্চয়ই একটি মাইলফলক; এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উদ্যোগ, যা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অভিনব নেতৃত্ব এবং নির্দেশনার উজ্জ্বল স্মারক। এই উদ্যোগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিত্বদের সাথে আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণদের সংযোগের মাধ্যমে আগামীর পথচলার দিক খুঁজে পাওয়া যাবে।

তরুণ সমাজের বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন—যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল—২০২৫ সালের মে মাসজুড়ে চারটি বৃহৎ বিভাগীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগের জন্য, ৯ ও ১০ মে। এখানে ৯ মে হবে “কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা” শীর্ষক সেমিনার এবং ১০ মে “তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ”।

চট্টগ্রাম পর্বের সেমিনারে আলোচনা করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আব্দুল্লাহ্-আল-মামুন; শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান; কর্নেল ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্ক-এর ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন-এর লেকচারার ড. জামাল উদ্দিন; বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পাঠাও-এর সিইও ফাহিম আহমেদ; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাহরীন আই খান; চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মাবরুর রশিদ বান্নাহ ওরাকল; ইউএসএ-এর সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার মুনতাসির মুনীর; কলেজ অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ডালাস, টেক্সাস-এর শিক্ষক এবং স্যানট্যান্ডার ব্যাংকের সিনিয়র ডিরেক্টর শাফকাত রাব্বী এবং ফ্রিল্যান্স ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট, হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক সাইয়েদ আবদুল্লাহ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজ্ঞজনদের অংশগ্রহণে এই সেমিনার হয়ে উঠবে এক প্রাণবন্ত পাঠশালা।

দ্বিতীয় কর্মসূচি ১৬–১৭ মে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ মে আলোচনা হবে “শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা”, এবং পরদিন থাকবে সমাবেশ।
তৃতীয় কর্মসূচি বগুড়ায় ২৩–২৪ মে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জন্য। সেখানে ২৩ মে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার “কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা”। ২৪ মে সমাবেশের মাধ্যমে তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বার্তা দেওয়া হবে।
চতুর্থ ও চূড়ান্ত আয়োজন হবে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহে ২৭–২৮ মে। এই আয়োজন ঘিরে ২৭ মে আলোচনা হবে “তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি” বিষয়ক সেমিনারে, পরদিন ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তর বিভাগীয় সমাবেশ।

প্রারম্ভিকভাবে চট্টগ্রামে যে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই আয়োজন সফল করার জন্য সকলের সাথে সমন্বয় করে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন। চট্টগ্রাম পর্বে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু এবং বিএনপি নেতা সাঈদ আল নোমান। এই আয়োজন সফল করার লক্ষ্যে আয়োজনের স্থানসমূহ সফর করাসহ সাংগঠনিক কাঠামোকে উজ্জীবিত এবং সর্বাত্মক প্রচারণার জন্য অবিরত কাজ করছেন যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।

এই সেমিনারগুলোতে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রকামী সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার তরুণ প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, উদীয়মান চিন্তাবিদ, তরুণ বক্তা ও উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, নগরায়ণ, প্রযুক্তি ও রাজনৈতিক অধিকারসহ নানা বিষয়ে তরুণদের ভাবনা ও প্রস্তাব উঠে আসবে এই সংলাপে। মূল লক্ষ্য হবে তারুণ্যের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক, মানবিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ নির্মাণের পথ অনুসন্ধান। এটি হবে একটি উন্মুক্ত ও যুক্তিনির্ভর সংলাপের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মতবিনিময় হবে গঠনমূলক, পর্যালোচনামূলক ও ভবিষ্যতমুখী। সংলাপের ভিত্তি হবে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলসমূহ ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রদত্ত দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক দর্শন, যা বাংলাদেশকে একটি কার্যকর গণতন্ত্র, শক্তিশালী রাষ্ট্র ও অংশগ্রহণমূলক সমাজব্যবস্থার পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে।

আমাদের দেশের বৃহৎ তরুণ সমাজের অবশ্যই বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা উচিত বিএনপির এ উদ্যোগকে। এই উদ্যোগ রাজনৈতিক প্রথাগত ধারা থেকে বের হয়ে সকল শ্রেণির তরুণদের যুক্ত করার একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। যখন অধিকাংশ দলই তরুণদের কেবল ভোটার হিসেবে গণ্য করে, বিএনপি তখন তাদের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি একদিকে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে তরুণদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলছে, অন্যদিকে তরুণদেরও রাজনীতিতে আগ্রহী ও সম্পৃক্ত করছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় এই আয়োজন বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং প্যারাডাইম শিফটের ইঙ্গিত দেয়। তিনি নিশ্চিতভাবে নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে সক্ষম একজন সুদূরপ্রসারী চিন্তার অধিকারী। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রে আছে তরুণদের ক্ষমতায়ন, সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় নীতি প্রভাবিত করার ক্ষমতা।

এই আয়োজন হতে পারে ভবিষ্যতের এক অনন্য মডেল—যেখানে রাজনীতি হবে যুক্তির দীপ্ত আলো, উদ্দীপনার স্পন্দন আর সৃজনশীলতার উন্মেষস্থল। এখানে তরুণদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ, তাদের ঐক্য, প্রত্যয় ও আকাঙ্ক্ষা মিলিত হয়ে সৃষ্টি করবে এক নতুন প্রত্যয়—ফ্যাসিবাদ যেন আর কোনোদিন এই ভূখণ্ডে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে; ১৬ বছরের মানবাধিকার লঙ্ঘন আর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার যেন দ্রুত বিচার হয়; এই প্রিয় স্বদেশে যেন জনগণের স্বাধীনচেতা মনন ও স্বপ্ন বাস্তব রূপ পায়। বিএনপি বিশ্বাস করে, একটি সাম্য, ন্যায়বিচার ও মর্যাদাভিত্তিক সমাজ, যেখানে প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে; আর সেই পরিবর্তনের কাণ্ডারি হবে এই সময়ের সাহসী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ প্রজন্ম। আর সেই এগিয়ে যাওয়ার পথের সারথি হবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

এসএফ

আরো পড়ুন  

×