বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকাস্থ ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রবিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এবি পার্টি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যে শক্তি দেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই শক্তিকে যদি পরাজিত করতে হয়, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে অক্ষুণœ রাখতে হবে।
জনগণ দেশের মালিকানা ফিরে পেয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, দেশটা আমারÑ এটা এখন প্রত্যেকে বলতে পারি। এখন সময় বদলে গেছে। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার যে দেশের মালিকানা কেড়ে নিয়েছিল, জনগণ সেই মালিকানা ফিরে পেয়েছে। এখন যারা দেশের মালিক তারাই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে।
আমীর খসরু বলেন, যারা নিজের জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, গুম হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, বাড়িঘর ছেড়েছে তাদের ত্যাগকে স্বীকার করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ কী ভাবছে? তাদের প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা কী? আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের তা জানতে হবে। এটা যারা বুঝবে না, আগামীদিনের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তারা খুব বেশি এগোতে পারবে না।
খসরু বলেন, যারা দেশের মালিক তারাই এখন সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ কিভাবে চলবে। আর আমরা যারা রাজনীতি করি আমরা তাদের কাছে গিয়ে বলব আমরা তাদের জন্য কী করতে চাই, আমরা কী পরিবর্তন চাই। তিনি বলেন, এখন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, কেমন আছেন? জবাবে বলতে পারি এক মাস তিনদিন আগের চেয়ে ভালো আছি। আসলে এক মাস তিনদিন আগে তো আমি জেলের মধ্যে ছিলাম।
আজকে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ করে কেন জানি মনে হলো, আমি কি এখন জেলে আছি কিনা, আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখেছি জেলের রুমে একটা রশিতে আমার টাওয়াল, প্যান্ট-শার্টটা ঝুলত ওইগুলো আছে কিনা। তখন মনে হয়, আমি আসলে আমার বাসার বেডরুমে আছি।
আমীর খসরু বলেন, দুঃস্বপ্ন আমরা সবাই কাটিয়েছি। আমাদের যে ভোগান্তি, এটা ১৭ বছরের ভোগান্তি। এত সেক্রিফাইজের পর আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, একটি মুক্ত দেশ পেয়েছি, একটা মুক্ত আবহাওয়ায় কথা বলতে পারছি এবং কারো কোনো শঙ্কা নেই, সাংবাদিকদেরও শঙ্কা নেই। এই যে মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা পলায়নের পর দেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে সেটা আমাদের বুঝতে হবে। এই মনোজগত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া। তিনি বলেন, দেশের মানুষ মুক্ত অবস্থায় বাঁচতে চায়, দেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ চায়।
আমীর খসরু বলেন, ১৭ বছরে সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনসহ ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছে, যারা রক্ত দিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা চাকরি হারিয়েছে, যারা ব্যবসা হারিয়েছে, যারা বাড়িঘরে থাকতে পারেনি, যারা ধানক্ষেতে থেকেছে, বেড়িবাঁধে থেকেছে, সীমাহীন কষ্টে ছিল, তাদের প্রতি সম্মান জানাই।
এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিশের নেতা অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী আকন্দ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত আব্দুল কাইয়ুম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান প্রমুখ।