মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণকে সংগঠিত করে তীব্র আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক দল আয়োজিত ‘আধুনিক কৃষি, অভিন্ন নদীর পানি আগ্রাসন এবং জলবায়ু ভারসাম্যহীনতা রোধে জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য যেমন করে হোক বর্তমান সরকারকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এর জন্য পথ একটাই, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। তাই সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতে নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যাশা করছি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনপ্রত্যাশাকে ভারতের নতুন সরকার মর্যাদা দেবে। ভারত নিঃসন্দেহে আমাদের প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ।
আমরা ভারতের নতুন সরকারের কাছে একটাই আশা করব যে, যেভাবে ভারতের জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে সেভাবে আমরাও যেন করতে পারি।
আমরা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে সেই লক্ষ্যেই যুদ্ধ করেছিলাম, সেই লক্ষ্যেই আমরা এখানে কাজ করে গণতন্ত্রকে সেভাবে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের প্রত্যাশা ভারতের সরকার বাংলাদেশের জনগণের যে প্রত্যাশা সেই প্রত্যাশাকে তারা মর্যাদা দেবেন, সেভাবেই তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।
আওয়ামী রীগ সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, অভিন্ন নদীর হিস্সা আদায়, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধে বর্তমান সরকার ব্যর্থ। এ সরকার পরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে বাংলাদেশকে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
ফখরুল বলেন, রবিবার একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো। সে এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। সে তখন ছাত্রলীগের নেতা ছিল, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগও করেছে, এমপিও হয়েছে। এখন প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে আর রাজনীতির কাছাকাছি নেই।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি রাজনীতি করছ না কেন? সে বলে, কোন রাজনীতি করব? আমি বললাম, আওয়ামী লীগ করবা। সে বলল, আওয়ামী লীগ কি আওয়ামী লীগ আছে, এটা তো এখন আজিজ আর বেনজীরের আওয়ামী লীগ। এই যে, আওয়ামী লীগের একজন নেতার উপলব্ধি যে, সে রাজনীতি থেকে চলে গেছে, এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ নেই। যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল, সেই আওয়ামী লীগে নেই যারা আমাদের সঙ্গে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছিল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তাদের রসায়নে পরিবর্তন শুরু হয়। সেই পরিবর্তনটা এখন সর্বগ্রাসী হয়ে যাচ্ছে।
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, দেশে এত উন্নয়ন করেছে যে, ঢাকা শহরে আর লোক থাকতে পারছে না। তারা চলে যাচ্ছে গ্রামে। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য, গ্রামে ফিরে গিয়েও তাদের কর্মসংস্থান নেই, কাজ পাচ্ছে না। কোথায় কাজ পাবে? দেশে তো কোনো কাজ নেই। আজকে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারেই শেষ পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে। সরকার যে বাজেট দিয়েছে তা হচ্ছে তাদের লুটপাটের বাজেট।
ফখরুল বলেন, দেশে বিচার নেই, কোথাও কোনো ব্যবসা করতে গেলে তার কোনো সুযোগ পাওয়া যায় না, টাকা দিতে হবে, টাকা ছাড়া ঘুষ ছাড়া কেউ কথা বলে না। শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররা আবার মাঠে নেমেছে। আমাদের সবচেয়ে বড় যে সংকট তা হচ্ছে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। কিন্তু ভোটের অধিকারটা এ সরকার কেড়ে নিয়েছে। দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক শাহাদত হোসেন বিপ্লব। দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি নাসির হায়দার, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আনম খলিলুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুর রহমান টিপু, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামসেদ আলী রিপন প্রমুখ।