শাহজাহান ওমর। ফাইল ফটো
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপি।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর ) সকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ঝালকাঠি জেলা বিএনপি সহ কেন্দ্রীয় বিএনপি আজ জঞ্জাল মুক্ত হয়েছে। তিনি দলের জন্য কখনোই কাজ করেন নাই। ব্যক্তি সুবিধা পেতে দলে ছিলেন। দলের মন্ত্রী এমপি থাকাকালীন দলের পদ পদবী ব্যবহার করে নানা ফায়দা লুটেছেন এবং সকল সময় দলের মধ্যে বিবেদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। সে নৌকার মাঝি হওয়ায় ঝালকাঠিবাসী তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা ঝালকাঠি জেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দলের শত্রু আজ চিহ্নিত হয়েছে। দলের সাথে বেইমানি করায় নেতাকর্মীরা তারপ্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য (দপ্তরের দায়িত্ব থাকা) অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিন বলেন, দলের নেতাকর্মীদের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত করেছেন তিনি। ১৫ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে লড়াই সংগ্রামে দমন-পীড়নকারীদের নৌকার মাঝি হওয়ায় সকল শ্রদ্ধা সম্মান বিসর্জন দিয়েছে।
এদিকে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে উপজেলার বাগরি এলাকার তাঁর বাসভবনে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বক্তব্যে শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার তীব্র প্রতিবাদ এবং বিএনপিতেই দলীয় নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জানান।
প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দী থাকার পর গত বুধবার দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর। তিনি বলেন, ঝালকাঠি–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। এরপর তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।
শাহজাহান ওমর নৌকার প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে রাজাপুরসহ রাজাপুর জেলা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শীর্ষ কয়েকজন নেতা কোন ধরনের মন্তব্য করেনি। তারা তাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী যা ভাল বুঝেছেন সেই ধরনের কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে তারা কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে রাজি হন নাই। তবে দুই একজন ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন আওয়ামী লীগের এমন দুঃসময় আসেনি যে শাহজাহান ওমরকে নমিনেশন দিয়ে দলে আনতে হবে এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে দল থেকে চলে এসে আওয়ামী লীগে যোগদান করায় বিশ্বাসঘাতক মনে করেন।
নির্বাচনে যে কয়দিন সময় আছে সেই সময়ের মধ্যে বিপরীতমুখী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে কীভাবে টানবেন এটাই দেখার বিষয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন শাহজাহান ওমরের অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এবং তারা সেই জায়গার ক্ষত মুছে ফেলে আন্তরিকভাবে শাহজাহান ওমরের জন্য কাজ করবেন কিনা সেটা সময়ের অপেক্ষা।
এসআর