নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ
নয়াপল্টন এলাকায় রাজপথ ও অলিগলি সর্বত্র পুলিশের সতর্ক পাহারা। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে একাধিকবার ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওই এলাকায় প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে পুরো এলাকা কঠোর নজরদারিতে রাখে পুলিশ।
তবে বিকেল ৪টা থেকে রাস্তা থেকে আংশিক বেরিকেড তুলে নেওয়ায় যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের চলাচল শুরু হয়। তবে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে যে কোনো সময় আবারও রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে পুলিশ জানায়। এ পরিস্থিতিতে নয়াপল্টনে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টন এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তবে বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফখরুল জানান, বিএনপির পূর্বনির্ধারিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক খোলা থাকলেও দলের কোনো নেতাকর্মী সেখানে যাননি। এমনকি দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সারাদেশের সকল মহানগর ও জেলায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিও রাজধানীর কোথাও পালন করতে দেখা যায়নি। সকালে নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী মিছিল করে নয়াপল্টন এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করলেও রাস্তায় বেরিকেড থাকায় এবং পুলিশের বাধায় তারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি।
পরে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান। এক পর্যায়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নয়াপল্টনে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাকে দলীয় কার্যালয়ে যেতে পুলিশ বাধা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি আরও বলেন, আমি নিজের অফিসেই যদি প্রবেশ করতে না পারি। তাহলে কিভাবে একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন কাজ করবে।
ফখরুল বলেন, সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য, মানুষের অধিকার ধ্বংস করার জন্য, আমাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার জন্য কাজ করেছে। আমি যদি আমার নিজের অফিসে যেতে না পারি তাহলে কি করে একজন মানুষ রাজনৈতিক কাজ করবে। তিনি বলেন, বিএনপি অফিসে কোনো বিস্ফোরক ছিল না।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নস্যাৎ করতে সরকারের হীন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, মানুষের অধিকারকে ধ্বংস করার জন্য পুলিশ এসব বোমা রেখেছে। তিনি ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে করতে সরকারের সহযোগিতা চান। এ ছাড়া তিনি অবিলম্বে বিএনপি অফিস খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
নাইটিঙ্গেল মোড় দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখান থেকে বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আগের দিন নয়া পল্টনে পুলিশের গুলিতে নিহত পল্লবী থানার ৫ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেনের মরদেহ দেখার পর তার পরিবারকে সান্ত¦না দেন এবং বিএনপির পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময়ে তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা পল্টনেই সমাবেশ করব, ১০ ডিসেম্বর যা হবে তা সবাই দেখতে পাবেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা পল্টনের কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করব। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সমাবেশের আগেই যেন আমাদের অফিস পুলিশ ছেড়ে দেয় ও বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার ব্যবস্থা করে দেয়।
১০ ডিসেম্বর জনগণই বলে দেবে জনগণ কি চায়। তবে আমরা সমাবেশ করতে পল্টনে যাব। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সোহরাওয়ার্দী বা নয়াপল্টনের পরিবর্তে বিএনপিকে সমাবেশ করতে গ্রহণযোগ্য বিকল্প স্থান দিলে বিবেচনা করে দেখা হবে।
বুধবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা সরকার ও প্রশাসনের এহেন অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী, সংবিধানবিরোধী কর্মকা- থেকে বিরত থাকা ও এ ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। আর অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব নেতাকর্মীর মুক্তি ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বুধবার পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন। এ ছাড়াও অসংখ্য নেতাকর্মী এবং পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। যাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা যায়নি। তিনি বলেন, পুলিশ আমাকেও আমার অফিসে প্রবেশ করতে দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাত বোমা নিয়ে যায় এবং সেখানে রেখে আসে।
ফখরুল বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ন্যক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচ তলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তচনচ করে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ ও অফিস কক্ষের দরজা অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে প্রবেশ করে। পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের সব আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি তচনচ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স এমনিকি দলীয় সদস্যদের দেওয়া মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত নথিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায়।
ফখরুল বলেন, পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। অথচ আইন হচ্ছে- কোনো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত এ ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্স ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বুধবার সমগ্র ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের কর্মীরা পাড়া-মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার পরিজনের ওপর হামলা করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওয়ারী থানার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মাহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মিল্লাত হোসেনকে বেদম প্রহার করে। যার ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
বিএনপি অফিসে বোমা ও ককটেল পাওয়ার বিষয়টি নাটক বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধারের নামে নাটক সাজায় ও মিথ্যাচার করে। আমার সামনেই পুলিশ বিএনপি অফিসের সামনে অসংখ্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, ডিবি, সোয়াট বাহিনী এবং আওয়ামী লোকেরাও এ কাজে অংশ নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ।
অচউট ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুল ॥ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উদারপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম এশিয়া প্যাসিফিক ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের (অচউট) প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি শহরে এ নির্বাচন হয় বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে দলের দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।