ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ

বিএনপির ওপর হামলাকারীদের খোঁজার নির্দেশ

উত্তম চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিএনপির ওপর হামলাকারীদের খোঁজার নির্দেশ

বিএনপির ওপর হামলাকারীদের খোঁজার নির্দেশ

নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে সতর্ক অবস্থায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সংঘর্ষে জড়িয়ে বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পাতা ফাঁদে পা দিতেও নারাজ তারা। বরং সকল দলকে নির্বাচনমুখী করে তুলতে এবং সামনের দিনগুলোতে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলে সারাদেশেই একটা নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ চায় না- ভোটের আগে কোনভাবেই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক।

এ কারণে নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হচ্ছে বিরোধী পক্ষের কোন ধরনের উস্কানিতে পা না দিতে। তবে আওয়ামী লীগের এই নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা কিংবা পরিকল্পিতভাবে বিএনপিসহ তাদের সমমনারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে সেক্ষেত্রে কোনরূপ ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
এমন পরিকল্পনা থেকেই দলীয় পরিচয়ে অনুপ্রবেশকারী বা সুযোগসন্ধানীরা অতিউৎসাহী হয়ে বিরোধী প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বদনাম করে রাজনীতির মাঠ ঘোলাটে করতে না পারে সেজন্য সারাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ইতোমধ্যেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, নোয়াখালীসহ কয়েকটি স্থানে বিএনপির ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের  খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় একাধিক নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিউৎসাহী হয়ে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিরোধী প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় জড়ালে যে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না- সেই সতর্ক বার্তাও পৌঁছে দেয়া হয়েছে সারাদেশের তৃণমূল নেতাদের কাছে। মাঠে সতর্ক অবস্থায় থেকে শত উস্কানিতেও ধৈর্য ধরে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন মেসেজ পাঠানো হয়েছে তৃণমূলে। তবে সুযোগ নিয়ে বিরোধী পক্ষ রাজপথ দখলে না দিতে পারে সেজন্য এখন থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচীর মাধ্যমে রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকারও নির্দেশনা গেছে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হামলার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বিএনপির ওপর হামলার কোন নির্দেশনা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেয়নি জানিয়ে কোন ধরনের সংঘর্ষে না জড়াতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। কাউকে আমরা লেলিয়ে দেইনি। এসব করে সরকারের ওপর এসে দায় পড়বে এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ কাউকে লেলিয়ে দেয়নি, দলের প্রধানও (প্রধানমন্ত্রী) কোন খারাপ কাজ সহ্য করেন না, কাউকে রেহাই দেননি এবং আগামীতেও দেবেন না।
আওয়ামী লীগের যৌথ সভাতেও এ ব্যাপারে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয় সারাদেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে। সভায় বিরোধী দলের কর্মসূচী রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে সাংঘর্ষিক কর্মসূচীতে না জড়ানোর কড়া নির্দেশনা দেয়া হয় বৈঠক থেকে। দলটির শীর্ষ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা এবং তাদের ফাঁদ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সতর্ক করে দেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করারও সিদ্ধান্ত হয় যৌথ সভায়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বিএনপির কোন কর্মসূচীতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। শান্তিপূর্ণভাবে যে কেউ চাইলে কর্মসূচী পালন করতেই পারে। কিন্তু বিএনপি চায় পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে। আমরা ইতোমধ্যে সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে কড়া বার্তা দিয়েছি, বিএনপির ফাঁদে পা না দিতে। দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কেউ তাদের কর্মসূচীতে বাধা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দেশের রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এবং থাকবে। আওয়ামী লীগের এই নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র বা অতীতের মতো নাশকতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিকভাবেই তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্বৃত করে দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নেত্রী স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন কারও কর্মসূচীতে বাধা দেয়া বা হামলা চালানো যাবে না। কেউ কোন হামলায় জড়ালে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। কারণ বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা এসব উস্কানি দিয়ে একটা ঘটনা ঘটানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বে একটা মেসেজ দিতে চাইছে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। বিরোধীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, বিরোধীদের ওপর হামলা মামলা নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার। তাই তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি- কাদের ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজপথ কোন রাজনৈতিক দলের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। রাজপথ বিএনপির পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, রাজপথ জনগণের। এই রাজপথ ঢাকাবাসীর। রাজপথ কোন দলকে ইজারা দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর লালবাগস্থ নবাবগঞ্জ পার্কে আয়োজিত লালবাগ থানা এবং ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
‘রাজপথ এখন থেকে বিএনপির দখলে থাকবে’-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন করতে চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে আন্দোলন করুন। আন্দোলনের নামে কোন ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। আপনারা ফাঁকা মাঠে আন্দোলন করবেন, আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে বসে আঙ্গুল চুষবে- তা হবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলন করার জন্য কিছু লোক নামিয়েছে। কারা, কত দিন থাকে আমরাও  দেখব।

গতবার নির্বাচনের সময়ে ২২ দলের অবস্থা ছিল জগাখিচুড়ি। এখন তাদের অবস্থা আষাঢ়ের তর্জন-গর্জন সার। রাজপথে আন্দোলন করুন, শান্তিপূর্ণভাবে আসুন। মোকাবেলা হবে রাজপথে। রাজপথে খেলা হবে। লাফালাফি করবেন না, বাড়াবাড়ি করবেন না। ২২ দলীয় জোট গতবারও ছিল। সেই ২২ দলের অবস্থা জগাখিচুড়ি, ছত্রভঙ্গ অবস্থা। এবারও ২২ দলীয় জোটের অবস্থান আষাঢ়ের তর্জন-গর্জন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা জানে না শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতো পিছু হটতে জানেন না, ভয় পান না। যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকেন, বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না। এরা জানে না তিনি হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা হেরে যাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হেরে যাবে।
লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আইনবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

×