ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

ভালো মানুষ গড়লেই গড়বে ভালো সমাজ, উন্নত দেশ,আলোকিত ভবিষ্যৎ

মানবিক গুণে গঠিত প্রজন্ম: সময়ের দাবি ও করণীয়

মোঃ তানভীর হাসান, কন্ট্রিবিউট রিপোর্টার, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ৩ জুলাই ২০২৫

মানবিক গুণে গঠিত প্রজন্ম: সময়ের দাবি ও করণীয়

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তবে সমাজে দিন দিন সহানুভূতি, সহনশীলতা, সততা ও নৈতিকতার সংকট স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার তরুণ প্রজন্মের উপর। কিন্তু যদি এই প্রজন্ম মানবিক গুণে সমৃদ্ধ না হয়, তবে উন্নয়নও অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি প্রজন্ম গড়ে তোলা।

একটি মানবিক প্রজন্ম গঠিত হলে সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্বশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। উন্নয়নের প্রকৃত অর্থ তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব, যখন মানুষ তার বিবেকের দ্বারা চালিত হয়। শুধুমাত্র প্রযুক্তি, চাকরি বা ডিগ্রি দিয়ে নয়। একটি সমাজ গড়ে ওঠে মনুষ্যত্ব, নৈতিকতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে।

বর্তমান সমাজে মানবিক গুণাবলির অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ পরিবারে নৈতিক শিক্ষার অভাব। অধিকাংশ পরিবারেই সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, চাকরি ও প্রতিষ্ঠা পাওয়াকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষাব্যবস্থাতেও একই প্রবণতা দেখা যায়।যেখানে পরীক্ষা ও চাকরিই মুখ্য, কিন্তু ‘মানুষ’ গড়ার দিকটি প্রায় উপেক্ষিত।
এছাড়াও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনসব কনটেন্টের প্রাধান্য, যা লোভ, প্রতিহিংসা ও অসততা উসকে দেয়। তরুণরা এগুলো দেখে প্রভাবিত হয়।অন্যদিকে রাষ্ট্র ও সমাজের বাস্তবচিত্রও শিক্ষণীয় নয়। সৎ মানুষ হয় অবহেলিত, দুর্নীতিবাজরা হয় সম্মানিত। তখন তরুণদের সামনে সত্য ও ন্যায়ের পথ অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ে।

এই অবক্ষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন পরিবার, শিক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত উদ্যোগ।
পরিবারে মানবিক গুণাবলির চর্চা শুরু করতে হবে। শিশুকে ছোটবেলা থেকেই সহানুভূতি, সততা, দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে কাজের মাধ্যমে, কেবল কথা দিয়ে নয়।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল পাঠ্য বইয়ের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। মানবিক গুণাবলি যেন বাস্তব জীবনের অংশ হয়ে ওঠে, সেজন্য ভলান্টিয়ার কার্যক্রম, পারস্পরিক সহযোগিতা ভিত্তিক কাজ, সামাজিক সচেতনতা প্রোগ্রাম চালু করা উচিত।
মিডিয়ায় ইতিবাচক, মানবিক গল্প ও সৎ মানুষদের জীবনকথা তুলে ধরতে হবে। মিডিয়াকে হতে হবে সমাজের মূল্যবোধ রক্ষার সৈনিক।

রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় সুশাসন, ন্যায়বিচার ও আদর্শের চর্চা থাকতে হবে। নৈতিক লোকদের মূল্যায়ন ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তি যেন প্রকৃতপক্ষে দৃশ্যমান হয়।
ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের দায়িত্বও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম যেন বিভক্তির নয়, বরং মানবতার শিক্ষা দেয় এই বার্তা সবার মাঝে পৌঁছে দিতে হবে।

মানবিক প্রজন্ম গঠন কোনো তাৎক্ষণিক প্রকল্প নয়, এটি একটি ধারাবাহিক চর্চা ও রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার শুরু হতে পারে একটি পরিবারের ভিতর থেকে, একটি স্কুলের ক্লাসরুমে, একটি ছোট উদ্যোগ থেকে। আমরা যদি এখনই উদ্যোগ না নিই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু প্রযুক্তিতে নয়, মনুষ্যত্বেও পিছিয়ে পড়বে।
একটি সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ের সমাজ গঠনের জন্য মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন প্রজন্ম গড়াই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় অঙ্গীকার।
 

 

রাজু

×