ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই

মাসুম বিল্লাহ নোমানী

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ৩ জুলাই ২০২৫

গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই

বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গুজব যেন আমাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। চায়ের দোকান, বাজার, রাস্তা, অফিস, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম। কোথাও এর প্রভাব নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দায়। মানুষ কোনো খবর শোনামাত্রই যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করে। গ্রামের কৃষক থেকে শহরের একজন চাকরিজীবীÑ সবাই এই মানসিকতার শিকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার, দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহ এবং আবেগপ্রবণ মানসিকতা আমাদের এমন এক অবস্থায় নিয়ে গেছে, যেখানে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুজব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে বা জনমত প্রভাবিত করতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো যেন এখন একটি সাধারণ রাজনৈতিক কৌশল। এর ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় এবং অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সমাজে অশান্তি, বিভাজন ও সহিংসতার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। সমাজে বেরিশরভাগ মানুষই কোনো খবর বা ঘটনা শোনামাত্রই যাচাই না করে শেয়ার করে ফেলেন। বিশ্লেষণের বদলে আবেগের বশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখান। এতে নিজেরা যেমন বিভ্রান্ত হন, তেমনি আশপাশের মানুষকেও বিভ্রান্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজবের বিস্তার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। একটি পোস্ট, ভিডিও বা অডিও ক্লিপ মুহূর্তের মধ্যে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। অনেকেই যাচাই না করে তা শেয়ার করতে থাকেন। যেন ‘আমি সবার আগে জানালাম’ এই মানসিকতা এখন এক ধরনের গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই প্রবণতা সমাজকে ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বাঙালিরা কেন গুজবে এত সহজে বিশ্বাস করে? এর পেছনে রয়েছে বিশ্লেষণী মনোভাবের ঘাটতি, অতিরিক্ত আবেগ এবং সচেতনতার অভাব। আমরা তথ্যের উৎস যাচাই না করে মনের আনন্দে সেটি শেয়ার করি। এই অভ্যাস সামাজিক অস্থিরতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং হিংসা-বিদ্বেষকে ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। কখনো কখনো তা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়। একটি গুজব ছড়াতে খুব বেশি সময় বা কৌশল লাগে না। প্রথমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা বিনোদনের জন্য মিথ্যা তথ্য তৈরি করে। এরপর তা ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মানুষ সেটিকে সত্য ভেবে আরও বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে থাকে। অল্প সময়ে তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আর মানুষ সেই মিথ্যা খবরের ফাঁদে পড়ে আতঙ্কিত হয় এবং বিভ্রান্তির শিকার হয়।
গুজবের ভয়াবহতা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজে সহিংসতা, হিংসা-বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা এবং সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দেয়। মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়, একে অপরের প্রতি আস্থা কমে যায়। এখনই সময় গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য বিশ্বাস না করা বা শেয়ার না করা। এই অভ্যাস আমাদের নিজেদের এবং সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিটি তথ্যের উৎস যাচাই করে, সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমাজ গড়ে তুলতে হবে। সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই আমরা ভয়াল গুজবের ছোবল থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]

 

প্যানেল

×