ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

পথশিশু: সমাজের উপেক্ষিত আকাশের তারা

রেজমিন নাহার মুক্তা

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ২০ জুন ২০২৫

পথশিশু: সমাজের উপেক্ষিত আকাশের তারা

শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাট, ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন কিংবা উন্মুক্ত পার্ক—এইসব স্থানেই আমাদের চোখে পড়ে কিছু ছোট ছোট শিশু, যাদের মুখে নেই কোনো নির্ভরতার হাসি, গায়ে নেই পরিপাটি জামা, হাতে নেই বই-খাতা, কিন্তু আছে অসীম বেঁচে থাকার লড়াই। এটাই তাদের পৃথিবী।

কেউ হয়তো জন্ম থেকেই জানে না বাবার নাম, কেউ হয়তো হারিয়ে গেছে কোনো ভয়াবহ রাতে।
তাদের কাছে সকাল মানে ভিক্ষা, বিকেল মানে অনাহার, আর রাত মানে ফুটপাতে ঠাণ্ডায় কাঁপা।

তবুও, এক টুকরো পাউরুটি পেলে হাসে তারা।
একটা ফাঁকা মাঠ পেলে বল খেলে খুনসুটিতে মেতে উঠে ।
একটা মায়ের মতো স্পর্শ পেলে বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

তারা পথশিশু—সমাজের এক এমন বাস্তবতা, যাকে আমরা প্রতিদিন দেখি, তবু চোখ বুজে থাকি।

পথশিশুরা সাধারণত পারিবারিক অবহেলা, দারিদ্র্য, বিচ্ছিন্নতা কিংবা কোনো দুর্যোগের কারণে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তাদের কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই, নেই কোনো সুরক্ষা, নেই ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। ছোট থেকেই তারা খুঁজে বেড়ায় খাদ্য, পরনের কাপড়, আর একটুখানি ভালোবাসা। জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও তারা বঞ্চিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক বিকাশ—এসব যেন শুধুই বিলাসিতা তাদের কাছে।

একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে তার শিশুদের হাত ধরে। তাহলে এই পথশিশুরা কি আমাদের সেই ভবিষ্যৎ নয়?
তারা কি জন্ম নিয়েছে শুধুই অবহেলার জন্য?

আমরা যারা আজ সমাজের ‘সভ্য’ নাগরিক, আমাদের কি কোনো দায় নেই এই শিশুদের প্রতি?
কোনো রাষ্ট্র, কোনো সমাজ বা ধর্মই শিশুদের এমন অনিশ্চিত জীবনে ফেলতে শেখায় না। অথচ বাস্তবে আমরা এদের প্রতি দয়া দেখাই, করুণা করি, কিন্তু কখনো দায়িত্ব নিই না।

পথশিশুদের পুনর্বাসন, শিক্ষা, পুষ্টি এবং মানসিক সুরক্ষার ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। শুধু সরকার নয়, নাগরিক সমাজ, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সর্বোপরি আমাদের প্রতিটি ব্যক্তির কিছু করণীয় রয়েছে। হতে পারে সেটি ছোট—কিন্তু ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কিংবা একটি নির্ভরতার হাত বাড়িয়ে দেয়াও এক বিরাট পরিবর্তনের শুরু হতে পারে।

একটি শহর তার গ্লাস টাওয়ার দিয়ে নয়, তার শিশুর নিরাপত্তা দিয়ে মূল্যায়িত হয়।

চলুন, একটু দাঁড়াই।
একটু ভাবি।
এবং এই পথশিশুদের জন্য এমন একটি পৃথিবী গড়ি, যেখানে তাদের জীবন হবে শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়—মনের মতো বাঁচার জন্য।  


লেখক:রেজমিন নাহার মুক্তা। 
শিক্ষার্থী : এলএলবি অনার্স ৪র্থ বর্ষ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।

রাজু

×