
.
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়াসহ ১৮ পয়েন্ট এবং বান্দরবানের নাইয়াড়িসহ সীমান্তের ১০টি স্থান দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। দেশের নানা সীমান্ত থেকে ইয়াবাসহ কমপক্ষে ২৯ ধরনের মাদক বাস-ট্রেন, অ্যাম্বুলেন্স, নৌযান এমনকি বিমানেও মাদক পরিবহন হচ্ছে। সবচেয়ে নিরাপদ মাদক রুট দেশের অরক্ষিত ৭১০ কিলোমিটারের বিশাল সমুদ্র উপকূল ও নৌপথগুলো। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, মাদক প্রবেশে বাংলাদেশের জল ও স্থল কোনো সীমান্তই নিরাপদ নয়। যদি এমনটি চলতে থাকে, অচিরেই পথ হারাতে পারে বাংলাদেশ। আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনই ভাবতে হবে আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার বিষয়টি।
দেশে মাদক বাণিজ্যে যুক্ত আছেন প্রায় এক হাজার ২০০ জন, যাদের অধিকাংশ স্থানীয় রাজনৈতিক রাঘব-বোয়াল। এদের মধ্যে রাজনৈতিক বড় নেতারাও রয়েছেন। দেশে প্রতিটি সরকারের আমলেই কম-বেশি মাদকের বিস্তার ঘটেছে। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে সাড়ে ১৫ বছরে সংসদের কোনো কোনো এমপির বিরুদ্ধে মাদকবাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগ সংবাদপত্রের কল্যাণে দেশবাসী জেনেছে। মিয়ানমার-কক্সবাজার-বান্দরবান হয়ে মাদক ঢুকছে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে মাদক চলে যায় দেশের নানা গন্তব্যে। এ ক্ষেত্রে জলপথ তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ নৌপথে নজরদারি টহল খুবই কম। এছাড়া কুমিল্লা, ফেনীসহ পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামে গাঁজা, ফেনসিডিল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসছে চোলাই মদ। ভারত ও মিয়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভূখ-ে ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের কারখানা খোলা হয়েছে, সেই দেশগুলোর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়, এমন সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বারবার।
বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর- এই পাঁচ সংস্থা কাজ করে। তাদের তথ্য মতে, বিগত ১৬ বছরে (২০০৯-২০২৪) ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৫টি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৯ জন। জব্দের তালিকায় ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৫ পিস ইয়াবা, ৪ হাজার ৫২৮ কেজি হেরোইন, ১৯৫ কেজি কোকেন এবং ৩৬৯ কেজি আফিম রয়েছে। মামলা, গ্রেপ্তার ও জব্দের গাণিতিক সংখ্যা বাড়লেও মাদক বাণিজ্যের জৌলুস চলেছে কৌশলে, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক কারবারিদের পাকড়াও করে জেলে দিয়েছে। যে ক’দিন তারা জেলে থাকে, বিভিন্ন অঞ্চলের অপরাধীদের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ তৈরি হয়। এরপর আইনের ফাঁকফোকড় গলিয়ে তারা জামিনে বের হয়ে আবারও মাদক বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। নতুন বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনকে দেশের তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে প্রায়োগিক কৌশল নিয়ে, এমনটিই আশা আমাদের।
প্যানেল