দিন দিন আমরা নানা কাজে চ্যাটজিপিটির মতো এআই ব্যবহার করছি চিঠি লেখা থেকে শুরু করে পরীক্ষার প্রস্তুতি, এমনকি রচনাও। তবে এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এক বিপদ। এমআইটি’র (Massachusetts Institute of Technology) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার এআই নির্ভর করলে আমাদের নিজস্ব ভাবনা ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে।
এমআইটি মিডিয়া ল্যাব এই গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের তিনটি দলে ভাগ করে এক দল চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে, এক দল গুগলে খোঁজ করে আর এক দল পুরোপুরি নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে (যা তারা বলেছে ‘ব্রেইন-অনলি গ্রুপ’)। সবাইকে এসএটি ধরনের রচনা লেখার কাজ দেওয়া হয়েছিল। এ সময় তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হয় ইইজি মেশিন দিয়ে।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, এআই ব্যবহারকারীরা ধীরে ধীরে ‘অভ্যাসে’ পড়ে যাচ্ছেন, যা তাদের মননশক্তিকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষক নাটালিয়া কসমিনা বলেন, “আমি আর দেরি করতে চাইনি। ভাবছিলাম, যদি ছয়-আট মাসের মধ্যে কেউ সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘শিশুদের জন্য জিপিটি কিন্ডারগার্টেন চালু করা যাক,’ সেটি ভীষণ ক্ষতিকর হবে। ছোটদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।”
এমন সময় এই উদ্বেগজনক গবেষণা সামনে এলো, যখন শিক্ষায় এআই ব্যবহারের গতি থেমে নেই। চলতি বছরের এপ্রিলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্কুলপর্যায়ে এআই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা নেন।
হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি উইল শার্ফ সে সময় বলেন, “আমরা চাই ভবিষ্যতের কর্মজীবী প্রজন্ম যেন এআই ভালোভাবে শিখে নেয়। তারা যেন প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।”
তবে এমআইটি’র এই গবেষণা নতুন এক প্রশ্ন তুলছে আমরা কি খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের চিন্তাভাবনার জায়গা প্রযুক্তির হাতে তুলে দিচ্ছি? আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি ভাবার অভ্যাস ভুলে যাচ্ছে?
এই মুহূর্তে হয়তো চ্যাটজিপিটি অনেক কাজ সহজ করে দিচ্ছে, কিন্তু নিয়মিত মস্তিষ্কচর্চা ছাড়া কি চিন্তাশক্তি টিকে থাকতে পারবে? প্রযুক্তি তো সহায়ক হওয়ার কথা, বিকল্প নয়। কাজেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করুন বুঝেশুনে, আর নিজের মননশক্তিকেও দিন সক্রিয় রাখার সুযোগ।
সূত্র:https://tinyurl.com/5n8chwep
আফরোজা
