
ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া রেলস্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল লোহার জলাধারটি এখন কেবল একটি পুরনো কাঠামো নয়, এটি হয়ে উঠেছে ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী।
প্রায় তিনতলা সমান উচ্চতার এই গোলাকৃতি পানির ট্যাংক একসময় ছিল স্টিম ইঞ্জিন চালিত ট্রেনগুলোর পানির প্রধান উৎস। তখন প্রতিটি ট্রেন এখানে থেমে পানি নিত, চারপাশে তৈরি হতো ব্যস্ততা আর কোলাহল। আজ সেটি নির্বাক, জং ধরা, গাছপালা ও লতায় আচ্ছাদিত। তবু তার শরীর জুড়ে লেখা আছে রেলওয়ের এক প্রাণবন্ত অধ্যায়ের গল্প।
ট্যাংকটির কাঠামো পুরোটাই লোহার তৈরি। চারপাশে পেঁচিয়ে ধরেছে গাছের শিকড় আর লতা, যেন প্রকৃতি নিজ হাতে এটিকে ঢাকা দিয়ে রেখেছে। উপরের দিকে উঠে যাওয়া লোহার সিঁড়ি, নিচে থাকা পাইপলাইন ও কনট্রোল ভালভগুলো আজও জানান দেয় এটি ছিল রেল ব্যবস্থার 'লাইফলাইন'।
পাকিস্তান আমলের একজন প্রবীণ নারী, স্থানীয় স্টেশন স্টাফ ‘টালিবাবু’র স্ত্রী (বয়স ৯০), স্মৃতিচারণ করে বলেন, “এই ট্যাংকের চারপাশে সব সময় লোকজনের ভিড় থাকত। ট্রেন থামলেই পানি ভরত, মাল নামত, মানুষ উঠতো। রুহিয়া তখন সত্যি সত্যিই এক বন্দর হইছিল।”
আজ সে দৃশ্য আর নেই। ট্যাংকটির চারপাশ এখন ঝোপঝাড়ে ঢাকা, কাঠামোটি জংয়ে ক্ষয়ে গেছে, আর রেললাইনের সেই ব্যস্ততা রূপ নিয়েছে শূন্যতার সুরে।
এমন লোহার জলাধার এখন বাংলাদেশে হাতে গোনা মাত্রই রয়েছে। অথচ কোথাও নেই পরিচিত ফলক, নেই সংরক্ষণের উদ্যোগ।
স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকদের মতে, এটি ঘিরে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি ‘রেলওয়ে হেরিটেজ জোন’ বা ছোট একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হতে পারে জীবন্ত ইতিহাসের শ্রেণিকক্ষ।
রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু বলেন, “রুহিয়ার এই লোহার জলাধার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তি যতই বদলাক, অতীতকে স্মরণ ও সংরক্ষণ করাটাই ভবিষ্যতের প্রতি সম্মান।”
গাছপালায় আচ্ছাদিত এই পানির ট্যাংক যেন আজও বলে উঠে, “আমি আর পানি দিই না, তবে ইতিহাসের তৃষ্ণা মেটাই।”
রাজু