ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

জাতিসংঘ শান্তি মিশন কার্যক্রম ও বাংলাদেশ

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২০ জুন ২০২৫

জাতিসংঘ শান্তি মিশন কার্যক্রম ও বাংলাদেশ

.

জাতিসংঘের শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, যা সংঘাত-পরবর্তী সমাজ পুনর্গঠনকে সহজতর করছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ সংঘাত প্রতিরোধ, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, শান্তিচুক্তি বলবৎকরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন ও গঠনমূলক কর্মকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সফলভাবে সংগঠিত করেছেন। তাদের সক্রিয় ভূমিকা সংঘাতের পুনরুত্থান রোধ করেছে এবং স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করেছে। তাদের দক্ষতা ও সহনশীলতা যে কোনো পরিবর্তনশীল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করছে। জাতিসংঘ সনদের ৪৩ ও ৪৪নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠিত হয়। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি তদারকি ও কার্যকর করা, স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন পরিচালনা করা, বিবদমান পক্ষগুলোর মাঝে সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষর প্রভৃতি উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করা হয়। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি চূড়ান্ত অস্ত্র। বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যকার বিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের অধীনে বহুজাতিক বাহিনীর অংশগ্রহণকে সাধারণত শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বলে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে একটি নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির সূচনা ও তা বজায় রাখতে এবং যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে একটি বিরোধ নিবারক অঞ্চল বা ইঁভভবৎ তড়হব গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় অনুসন্ধানের পথ সহজতর করে।
বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন করে। ব্লু-হেলমেট এর অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতিসংঘের আকাশ-নীল পতাকার পাশে আমাদের শান্তিরক্ষীরা বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড্ডীন করেছে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বিগত ৩৬ বছর ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে আসছে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল ইরাক-ইরান শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগদানের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের পতাকাতলে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মোজাম্বিক ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বসনিয়া-হার্জগোভিনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে অস্থির বিশ্বে শান্তি গড়ে তোলা একটি সচেতন ও সাহসী কাজ। এটা মানবতার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। বর্তমানে যুদ্ধ-সংঘাতের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু সংকট জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করে, শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী বিরূপ মনোভাব আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করে। ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন এআই এর অপব্যবহার, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং মেরুকরণকে আরও বৃদ্ধি করে।
শান্তিরক্ষা মিশনের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। সম্প্রতি শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩টি হেলিকপটার ডিআর কঙ্গোতে মোতায়েন করেছে; যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য পেরুর সশস্ত্র বাহিনীকে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান প্রদান করা হয়েছে; যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন লেবাননে যোগদানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে ‘বানৌজ সংগ্রাম’ ভূমধ্যসাগরে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অংশ হিসেবে লেবাননে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদের অনুপ্রবেশ রোধ, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল কার্যক্রম পালনে নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি নৌ কন্টিনজেন্ট ২০১৫ সাল থেকে দক্ষিণ সুদানে ‘ইধহমষধফবংয ঋড়ৎপব গধৎরহব টহরঃ’ হিসেবে মোতায়েন রয়েছে। কন্টিজেন্টটি জাতিসংঘের নিত্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি, খাদ্য-সামগ্রী, ওষুধ ও মানবিক সাহায্য বহনকারী নৌযানসমূহের নদীপথে নিরাপদে চলাচলের নিশ্চয়তাসহ স্থানীয় জনগণকে জরুরি চিকিৎসা প্রদান, মিশনে নিয়োজিত সামরিক এবং অসামরিক সদস্যদের প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী পরিবহনে সহায়তা করে আসছে। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে কোনো স্থানে মোতায়েনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, কন্টিনজেন্ট এবং একটি বিশেষায়িত ইউনিটকে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রবর্তিত United Nations Peacekeeping capability Readiness System-এর আওতায় সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৩টি স্বতন্ত্র কন্টিনজেন্ট জাতিসংঘের দুটি অঞ্চলে নিয়োজিত রয়েছে। তন্মধ্যে ডিআর কঙ্গোতে এমআই সিরিজ হেলিকপ্টারসহ একটি ইউটিলিটি অ্যাভিয়েশন ইউনিট ও সি-১৩০ পরিবহন বিমানসহ একটি এয়ার ট্রান্সপোর্ট ইউনিট এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে এমআই সিরিজ হেলিকপ্টারসহ একটি বাংলাদেশ আর্মড মিলিটারি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার ইউনিট মোতায়েন রয়েছে। পেশাগত অবদান ছাড়াও সিভিল-মিলিটারি কো-অপারেশন কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর শান্তিরক্ষীগণ সংঘাতময় অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, দুস্থ জনগণকে কারিগরি দক্ষতা অর্জনে সহায়তা এবং চিকিৎসা ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে।
ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সব প্রকার বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বিশ্ব মানবতার সেবায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা নিজেদের উৎসর্গ করেছে। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও সুদানের দারফুরসহ বিশ্বের যেখানে সংঘাত হয়েছে, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সেখানে পদচিহ্ন রয়েছে। সার্ব যোদ্ধারা যখন যুগোস্লোভিয়ার পরিস্থিতিকে অত্যন্ত জটিল অবস্থায় নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়োজিত শান্তিরক্ষী বাহিনীকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়, সে সময় বিহাচে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিয়েরা লিওনে পরিচালিত জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সর্বাধিক সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সুনাম অর্জন করে। কয়েকটি দেশের সৈন্যদল মিশন এলাকা থেকে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে এ মিশন যখন ব্যর্থতার পর্যায়ে, তখন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি মিশনকে সফল করেছে। নিরস্ত্রীকরণ, ডিমবিলাইজেশন এবং পুনঃএকত্রীকরণ কার্যক্রম শেষে ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি লজিস্টিক সাপোর্ট কোম্পানি এবং একটি সামরিক পুলিশ ইউনিটের সদস্যরা এ মিশনে মোতায়েন ছিল। বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী দল কঙ্গোর সবচেয়ে গোলযোগপূর্ণ এলাকা বুনিয়ার দায়িত্ব নিয়ে গোলযোগপূর্ণ এলাকাকে নিয়ন্ত্রণে আনে। ১৯৯৫ সালে সোমালিয়ায় শান্তি মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করেন। ১৯৯৪ সালে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় গণহত্যার সময় বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা সাহসের সঙ্গে মিশন এলাকায় থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার প্রশ্নে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত গণভোট সফল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। আইভরিকোস্টের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী অ্যাঙ্গোলা, সুদান, মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া, লাইবেরিয়া, কসোভো, পূর্ব তিমুরসহ বিভিন্ন দেশে সংঘাত নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিকতার জন্য বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী মিশনের সদস্যরা বিশ্বের নিকট আজ অনন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। বসনিয়ার তীব্র শীত, সাহারা মরুভূমির দুঃসহনীয় গরম ও পূর্ব এশিয়ার ক্লান্তিকর আর্দ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে ১,৯৪,৮৫৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশ নিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৬,০৯২ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩,০৩৮ জন নারী শান্তিরক্ষী সদস্য সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে মোট ৪৯৩ জন নারী সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত রয়েছেন। তাছাড়া সংঘাতপূর্ণ এলাকায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশি জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ২৬৬ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের এ আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পাশাপাশি সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সমুজ্জ্বল করেছে। বিভিন্ন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো অর্জিত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই পদক্ষেপ না নিলে আগামী বছরগুলোতে ভূ-কৌশলগত সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সশস্ত্র সংঘাতের সংখ্যা বেড়ে যাবে।

গাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশের সক্ষমতা ও শক্তিশীলতা বৃদ্ধি এবং শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখবে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির তত্ত্বাবধান থেকে আরম্ভ করে, বর্তমানে বিশ্বের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী সর্বদা সক্রিয় রয়েছে। প্রাথমিকভাবে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের ওপর নিবন্ধ থাকলেও আধুনিক শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এখন বিস্তৃত পরিসরে কাজ করেন, যা সংঘাতের পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য এবং শান্তি বিনির্মাণে উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সৈন্য অবদানকারী এবং তাই, সমগ্র বিশ্বের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শান্তি ও নিরাপত্তা চ্যলেঞ্জের ক্রমবর্ধমান জটিলতার মোকাবিলা করতে জাতিসংঘ মহাসচিব ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ‘অ্যাকশন ফর পিসকিপিং’ কার্যক্রম চালু করেন। অ্যাকশন ফর পিসকিপিং+ ২০২১ সালের মার্চ থেকে চালু হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সদস্য দেশগুলোর উদ্যমী অংশগ্রহণ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যকারিতা, নিরাপত্তা এবং প্রভাব বাড়াতে সদস্য দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি পুনঃনবায়ন করা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলো যেমন নাগরিকদের সুরক্ষা শক্তিশালীকরণ, শান্তিরক্ষীদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি আচার-আচরণ মান বজায় রাখা, মোকাবিলা করা হয়।
সুশৃঙ্খল ও পেশাদারি মনোভাব, কার্যসম্পাদনে নিরপেক্ষতা, জাতিসংঘের নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ ও মোতায়েনকৃত দেশের জনসাধারণের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ প্রভৃতি গুণাবলির জন্য বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ ও বিবদমান উভয় পক্ষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করছে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে যে কোনো দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শান্তিরক্ষী সদস্যগণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের বীরত্বপূর্ণ সাহস দ্বারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন; একই সঙ্গে সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবেন। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সততা, কর্মদক্ষতা, আনুগত্য, সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার এই ধারা অব্যাহত রাখবেন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্যানেল

×