ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডেঙ্গু-করোনার সংক্রমণ

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ১২ জুন ২০২৫

ডেঙ্গু-করোনার সংক্রমণ

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে আবারও। বছরজুড়ে নানা প্রস্তুতির আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কার্যকর উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণের অনিয়ম এবং পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে সারাবছরই থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যাও। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা থাকেন বেশি ঝুঁকিতে। কেন প্রতিবছর একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা এখনো সীমিত ও অপর্যাপ্ত। নগর এলাকায় মশা নিধন কর্মসূচি অনেক সময়ই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। সময়মতো ফগিং না হওয়া, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর থাকা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ঘাটতি- সব মিলেই  ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।  নিয়মিত ফগিং ও লার্ভা ধ্বংস কার্যক্রম চালাতে হবে শুধু নগরের কেন্দ্রেই নয়, জেলা-উপজেলা পর্যন্ত। বাসাবাড়ি, অফিস ও নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে যাতে জমে থাকা পানি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে হবে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে। প্রয়োজনীয় ওষুধ, টেস্ট কিট ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মীর ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন ডেঙ্গুরোগী সামলাতে হিমশিম খেতে না হয়। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার চালানো যেতে পারে, যাতে জনগণ নিজ উদ্যোগে সচেতন হয়। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নগর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৯ জুন পর্যন্ত দেশে ৪ হাজার ৯৭৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৩ জন। চলতি বছর রাজধানীর চেয়ে বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ অনেক বেশি। দেশের মোট আক্রান্তের ২৫ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। বিভাগের হিসাব মতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৯৯৪ জন।
অন্যদিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে করোনাভাইরাসও। অতিক্রান্ত তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেওয়া এই ভাইরাস নতুন রূপে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশেও এখন করোনার একাধিক সাব-ভেরিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রনের এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ ও এনবি ১.৮.১ প্রকারগুলো দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত এসব ভেরিয়েন্টের মারাত্মক প্রাণঘাতী হওয়ার প্রমাণ মেলেনি, তবে এর উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে হঠাৎ করেই বেড়েছে করোনা বিষয়ক কলের সংখ্যা। সে অবস্থায় আবারও কঠোরভাবে কার্যকর করা উচিত গণপরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমপূর্ণ স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানার নিয়ম।
ডেঙ্গু বা করোনা যাই হোক না কেন, দীর্ঘমেয়াদি যে কোনো মহামারি থেকে মুক্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন সরকার, স্বাস্থ্য খাত এবং সাধারণ মানুষকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করতে দেখা যাবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু অথবা করোনার সংক্রমণ শুধু স্বাস্থ্য নয়, অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্যানেল

×