
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। গত রবিবার সচিবালয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এবারে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার প্রতিবর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে প্রতিবর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিবর্গফুট চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। বিনামূল্যে লবণ দেওয়া, প্রশিক্ষণ ও চামড়ায় লবণ লাগানোর পেছনে শ্রমব্যয়- এই তিন বিষয় চামড়ার দাম নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিটি গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ঢাকার বাইরে হবে ১ হাজার ১৫০ টাকা এবং ঢাকায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা।
এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, কোরবানির ১০ দিন বাইরে থেকে চামড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না ঢাকায়। এর বাইরে ৮৬ হাজার কসাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তদুপরি স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাত করার কাজটি শেখানোর চেষ্টা হিসেবে দুটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে, যা প্রদর্শিত হবে সারাদেশে। তিন মাসের জন্য কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট ব্লু (পশম ছাড়ানো) চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হবে এবারে। এর জন্য শিথিল করা হবে রপ্তানির শর্ত।
অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, প্রতিবছরই চামড়ার দাম নিয়ে নয়-ছয় হয়ে থাকে। কোরবানির চামড়ার একটি অংশ দেশের এতিমখানাগুলো পেলেও খোলাবাজারে চামড়ার দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। ফলে, হতাশ হতে হয় চামড়ার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের। মূলত চামড়ার বাজার প্রায় পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন ট্যানারির মালিকরা, সেহেতু এই বাজারের নিয়ন্ত্রণও থাকে তাদের হাতে। দেশে সারাবছর যে পরিমাণ চামড়া পাওয়া যায়, তার ৫৫ শতাংশ পাওয়া যায় কোরবানির ঈদে। এর জন্য কোরবানির ঈদ চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযুক্ত সময়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয় ১২২ কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে আসে ১০৪ কোটি ডলারে। সব ছাপিয়ে যে বিষয়টি উঠে আসে, তাহলো আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়া শিল্পের স্বীকৃতি না পাওয়া। মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় প্রক্রিয়াজাত চামড়াসহ পাদুকা শিল্পের বিশ্ববাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। যে কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য সব দেশে বাংলাদেশী চামড়ার ক্রেতা ও কদর নেই বললেই চলে। চামড়া শিল্প পোশাক খাতের মতো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক কমপ্লায়েন্স বা পরিবেশবান্ধব না হওয়ায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক কমপ্লায়েন্স অর্জনে দেশের চামড়া খাতে আরও বিনিয়োগসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনকে।
প্যানেল