ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শ্রমমজুরি

প্রকাশিত: ২০:১৮, ২৭ মে ২০২৫

শ্রমমজুরি

সরকারি দপ্তরে দৈনিকভিত্তিক সাময়িক শ্রমিকদের মজুরি আগামী ১ জুলাই থেকে বাড়ছে। মজুরি বাড়ছে ১৫০-২২৫ টাকা পর্যন্ত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সাময়িকভাবে দৈনিকভিত্তিতে শ্রমিকদের জন্য এই পরিপত্র প্রযোজ্য। ‘দৈনিকভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা ২০২৫’ অনুযায়ী, শুধু দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে সাময়িকভাবে এ ধরনের শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে। এজন্য কোনো ধরনের পদ সৃষ্টি করা যাবে না। এ ধরনের শ্রমিকদের মাসে ২২ দিনের বেশি নিয়োগ করাও যাবে না।
শুধু দৈনিক ভিত্তিতে নয়, সব ধরনের শ্রমিকেরই মজুরি বৃদ্ধি আবশ্যক। শ্রমিকদের স্বীকৃতি, বৈষম্য নিরসন, তিন বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজীকরণসহ ২৫ দফা সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। বাংলাদেশের অন্তত ২২টি খাত তাদের কর্মীদের মৌলিক মানবিক চাহিদা মেটাতে যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম বেতন দিচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালকের ভাষ্য-  ‘অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করেন, তারপরও সন্তানদের জন্য সঠিক শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একপর্যায়ে তাদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে।’
বলাবাহুল্য, মজুরিবৈষম্য সব খাতেই আছে। যেমন- সচিবালয়ের সব মন্ত্রণালয়ে আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছে। স্থায়ী শ্রমিক ও আউটসোর্সিং শ্রমিকের মধ্যে অনেক বৈষম্য। মন্ত্রণালয়ের একজন নারী কম্পিউটার অপারেটর কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, গর্ভধারণের পর দুই মাস ধরে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যে সন্তান রাখবেন, নাকি রাখবেন না। কারণ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন না। বিনা বেতনে দু-তিন মাসের জন্য ছুটি নিতে হবে। অথচ স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া নারী কর্মচারীরা বেতনসহ ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও বিশাল শ্রমগোষ্ঠীর কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। ব্যক্তি খাতের গাড়িচালক ২০ বছর কাজ করার পরও নিয়োগকর্তা যদি বলেন, কাল থেকে আসার দরকার নেই, তাহলে তার আর যাওয়ার জায়গা (প্রতিকার) থাকে না। আসলে সব শ্রমজীবী মানুষই আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার।
সস্তা শ্রম, সস্তা পণ্য ও সস্তা মূল্য- এই তিনটি থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। দেশে বছর বছর শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমছে। জীবনধারণের উপযোগী মজুরি নির্ধারণে লিভিং ওয়েজ একটা মানদণ্ড। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কিছু উপাদান রয়েছে, যা বিবেচনা করতে হয়। ন্যূনতম মজুরির চেয়ে লিভিং ওয়েজে সঞ্চয়, সন্তানদের শিক্ষা, পরিবার মর্যাদার দিকে যাতে যেতে পারে- সেসব বিষয় থাকতে হবে। বহু দেশেই লিভিং ওয়েজ আছে। সময় এসেছে বাংলাদেশে সব ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিকদের যুগোপযোগী মজুরি বৃদ্ধির, যাতে তারা মৌলিক মানবিক প্রয়োজন মিটিয়ে মর্যাদাবান জীবনযাপন করতে পারেন।

প্যানেল

×