
বৃষ্টি ঝরছে, বজ্রপাত হচ্ছে- বাংলাদেশের আকাশে এখন নিয়মিত এই দৃশ্য। কিন্তু প্রকৃতির এই কান্নার ভেতরেই লুকিয়ে আছে আশার এক সুযোগ : বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়। এখনই সময়, যখন একটি দেশ তার অস্তিত্ব রক্ষায় গাছকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিতে পারে। বৃষ্টির প্রতিটি মুহূর্ত হোক একেকটি চারা রোপণের চুক্তি।
বর্তমানে আমরা বৃক্ষরোপণে কতটুকু সচেতন, প্রশ্ন থেকেই যায়। একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা উচিত পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য, কিন্তু বাংলাদেশে তা নেমে এসেছে মাত্র ১৭ শতাংশে। এর মধ্যে বেশির ভাগ অংশ দখল করে আছে সুন্দরবন, দেশের সবচেয়ে বড় বনভূমি। বনভূমি হারানোর এই হারে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন আরও প্রকট হবে, বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাবে।
গাছ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাছ শুদ্ধ অক্সিজেন দেয়, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা করে।
গাছপালা যখন আমাদের চারপাশ থেকে হারিয়ে যাবে, তখন বাতাসের শুদ্ধতা কমে যাবে, আর শীতল হাওয়া ধীরে ধীরে বিদায় নেবে। এর ফলে আমাদের প্রকৃতির মৃদু ছোঁয়া হারিয়ে যাবে এবং জলবায়ুর প্রতিকূলতা বাড়বে। এমন অবস্থায় কৃষিকাজ ব্যাহত হবে, ফলন কমে যাবে এবং তাতে অনিবার্যভাবে খাদ্যের সংকট দেখা দেবে। শুধু তাই নয়, গাছের অভাবে আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন বিপন্ন হবে, তেমনি মানসিক শান্তিও হারাবে।
এক সময় ছিল, যখন সকালে পাখির মিষ্টি কূজন শুনেই ঘুম ভাঙতো- কখনো কি ভেবেছি সেই গান আজ কতখানি ফুরিয়ে এসেছে? গাছের অভাবেই পাখিরা তাদের আবাস হারাচ্ছে, ধীরে ধীরে তারা আমাদের চারপাশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গাছ আমাদের শুধু ছায়া নয়, জীববৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র। পাখি, প্রাণী আর পোকামাকড়ের জন্য গাছই একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়।
অতএব, গাছপালা হারালে আমরা কেবল প্রকৃতিকে হারাই না, হারাই আমাদের জীবনের এক অমূল্য অংশ, এক হৃদয়স্পর্শী সুর।
তাই সুন্দরবন ছাড়াও আমাদের নিজ উদ্যোগে আশপাশে কিংবা বৃহৎ পরিসরে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার নতুন চর উত্থিত হয়। এই নতুন জমিতে নতুন গাছপালা রোপণ এবং বনভূমি সৃষ্টি করা সম্ভব। এখন সময় এসেছে, আমাদের অতীত ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করা।
কেবল সরকার বা পরিবেশবাদী সংগঠনের একার কাজ নয়, বরং এটি একটি জাতীয় আন্দোলন হতে হবে, যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করবে। বৃক্ষরোপণ করে কেবল আমরা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবো যাতে পশুপাখিসহ মানুষও একটা নিরাপদ আশ্রয় পায় এবং পৃথিবীকে একটি বাসযোগ্য স্থান হিসেবে রেখে যেতে পারব।
লেখক : শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট
প্যানেল