ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মহামারিতে রূপ নিয়েছে চর্মরোগ

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১৬ মে ২০২৫

মহামারিতে রূপ নিয়েছে চর্মরোগ

একটি অদৃশ্য কিন্তু ভয়ংকর অসুখ দিনের পর দিন আমাদের সমাজের দরিদ্র, প্রান্তিক এবং স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকা মানুষগুলোর জীবনে যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নামটি খুবই পরিচিত স্ক্যাবিস। অতি সাধারণ এক ধরনের চর্মরোগ হলেও, আমাদের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে এটি একটি ঘরভর্তি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে নিমিষেই। স্ক্যাবিস মূলত একধরনের  ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা ঝধৎপড়ঢ়ঃবং ংপধনরবর নামক এক ক্ষুদ্র পরজীবীর কারণে হয়। এই পোকাটি মানুষের ত্বকের নিচে গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং চুলকানি ও র‌্যাশ সৃষ্টি করে। রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক, সহজে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত পরিবার বা হোস্টেলের মতো গাদাগাদি পরিবেশে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখো মানুষ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন, বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের জীবনযাত্রার মান নিচু। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে এই রোগটিকে এখনো ‘তুচ্ছ’ মনে করা হয়। ফলাফল হিসেবে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিয়ে বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা ভোগ করেন। অনেকে আবার লজ্জা বা কুসংস্কারের কারণে রোগটি গোপন রাখেন, যার ফলে আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায় রাত হলে, তীব্র চুলকানি ও লাল ফুসকুড়ি ও অনেক সময় চুলকানির স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি দিনভর ক্লান্তি বোধ করে। স্ক্যাবিসের ফলে শিশুদের পড়াশোনার যেমন ব্যাঘাত ঘটে, বড়দের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। স্ক্যাবিস কোনো নতুন রোগ নয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজন গণসচেতনতা, স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ এটিকে গরম পানি, সাবান বা ভেষজ তেল দিয়ে সারানোর চেষ্টা করেন। অথচ স্ক্যাবিস নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন পারমেথ্রিন বা আইভারমেকটিন-জাতীয় ওষুধ, যেটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। একটি সাধারণ চর্মরোগ যদি অবহেলার কারণে মহামারির রূপ নেয়, তাহলে সেটি কেবল একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়, বরং সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তাই সময় এসেছে স্ক্যাবিসকে আর অবহেলা না করার। স্কুল, মাদ্রাসা, হোস্টেল, গার্মেন্টস, শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্ক্যাবিস সম্পর্কে প্রচারণা চালানো, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা চর্চার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যদি চাই একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে, তবে আমাদের শুরু করতে হবে এই ছোট ছোট জায়গা থেকেই। স্ক্যাবিস ছোট রোগ হতে পারে, কিন্তু এর বার্তা বিশাল। স্বাস্থ্য সচেতনতা কোনো খামখেয়ালির বিষয় নয়।

তানজিনা আক্তার চৈতি
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম

প্যানেল

×