
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা দেশের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন : বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে একথা বলেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। এও বলেছেন যে, দেশে কারিগরি শিক্ষা অবহেলিত। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হয় ট্রেড কোর্স বা মিস্ত্রি বানানোর কারখানা। এ ধরনের নেতিবাচক ধারণা ও মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে কাঠামোগত সংস্কার, সিলেবাসের আধুনিকায়নসহ যোগ্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক গড়ে তুলতে হবে। দেশে উচ্চশিক্ষিত অনেক বেকার রয়েছেন, যারা চাকরি পান না। এর বিকল্প হিসেবে জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়।
উল্লেখ্য, দেশে ১৫-২৯ বছর বয়সী যুব সমাজ রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। জনমীতির এই ইতিবাচক পরিবর্তনকে কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে জোর দিতে হবে মানসম্মত কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর। সরকার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তোলার ওপর। এর জন্য সবিশেষ জোর দেওয়া হবে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণসহ কর্মসংস্থানের ওপর। দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট যত দক্ষতা আছে, সেসব নিয়ে আসা হবে নতুন কারিকুলামে। যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষাগ্রহণসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানো হতে পারে।
তবে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবস্থা বেহাল। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সারাদেশে মোট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশেরই প্রায় চাল-চুলো নেই, নামেই কারিগরি শিক্ষা! বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা বাদ দিলেও অধিকাংশ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। একই অবস্থা অন্যান্য পলিটেকনিকেও। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পায় না। অথচ পলিটেকনিক ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নত ও মানসম্মত হলে শিক্ষার্থীরা এখানে স্বচ্ছন্দ্যে ভর্তি হতে পারে। বৈশ্বিক শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তবে এর জন্য অত্যাবশ্যক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা।
প্যানেল