.
নির্মাণাধীন ভবন থেকে নিচে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যুর খবর মাঝেমধ্যেই আসে গণমাধ্যমে। একজন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু মানে একটি পুরো পরিবারের বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়া। তাদের জীবন দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। তাই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হলে ওই পরিবার একেবারে পথে বসে যায়। বহুতল ভবনের নির্মাণের পসরা এখন প্রায় সবখানে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নির্মাণ শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি। প্রায়ই নির্মাণ শ্রমিকের নিহত-আহত হওয়ার খবর আসে। সেসব খবরে থাকে নির্মাণাধীন কোনো স্থাপনার ছাদ ধসে পড়ে কারও মৃত্যুর খবর, কেউ বা প্রাণ হারান অনেক উঁচুতে ঝুলন্ত অবস্থায় কোনো সেফটি গার্ড না থাকার কারণে দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যাওয়ায়, কিংবা নিচ থেকে মালামাল দড়ি দিয়ে বেঁধে ওপরে তুলতে গিয়ে দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে।
দেশে প্রতিবছর কী পরিমাণ নতুন ভবন তৈরি হয়, এ নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার হিসাব পাওয়া খুব কঠিন। তবে দেশের ক্রম উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে নির্মাণ শিল্প কলেবরে বড় হচ্ছে প্রতিদিনই। সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন মানুষ। বাড়ছে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যাও। নির্মাণকাজ সারাবিশ্ব আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে গেলেও আমাদের দেশে এটি এখনো অনেকাংশেই শ্রমিকনির্ভর। সস্তা শ্রম এবং বিভিন্ন দক্ষতার লোক নিয়োগের সুযোগ থাকায় মেশিনের চেয়ে নির্মাণ শ্রমিকের ওপরে নির্ভরতা নিকট ভবিষ্যতে কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। বাংলাদেশে নির্মাণ শ্রমিকদের জীবন সহজ নয়। নানা সমস্যায় নির্মাণ শিল্প এবং এর কারিগররা জর্জরিত। নির্মাণশিল্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। এখানে কাজ করতে হয় অসম্পূর্ণ ভবন ও ঝুঁকিপূর্ণ মেশিনারির মধ্যে। বাংলাদেশে নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার যে গাইডলাইন রয়েছে, তা মানা হয় না প্রায় কোথাও। শ্রমিকদের জন্য বেশিরভাগ সাইটেই দেখা যায় না কোনো ধরনের নিরাপত্তা পোশাক, হেলমেট এবং গামবুট। এর বাইরে ইট তোলা, রড বহন করাসহ বিভিন্ন ভারি উপকরণ ব্যবহারেও রয়েছে নিরাপত্তার ঘাটতি। সেই সঙ্গে অনেক সাইটেই সেফটি নেটও ব্যবহার করা হয় না। যেটার কারণে পড়ে গিয়েও অনেক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলেও কোনো ধরনের জীবনবীমা বা ওয়ার্ক ইন্স্যুরেন্সেরও ব্যবস্থা নেই। ঢাকায় বেশিরভাগ শ্রমিকরা নির্মাণ সাইটেই বসবাস করেন। স্বল্প ভাড়ায় আবাসনের সুযোগ ঢাকায় না থাকাই এর কারণ। ফাউন্ডেশনের সময় তারা থাকেন সেই খুঁড়তে থাকা মাটিতেই। ভবনের ফ্লোর ঢালাই হয়ে গেলে তারা ভবনে শিফট করেন। এসব ভবনে নিরাপদ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে শুরু করে, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই থাকে না। এসব কারণে তারা প্রায় মানবেতর জীবনযাপন করেন।
দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান, নারী নির্মাণ শ্রমিকদের সমমজুরি চালুসহ নির্মাণ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। নির্মীয়মান ভবনের ইট-সিমেন্ট-পাথরে নিহত শ্রমিকের নাম লেখা না থাকলেও ভবনটি সাক্ষী হয়ে থাকে শ্রমিক হত্যার। এক্ষেত্রে মানবিক ও বিবেচক হওয়ার আহ্বান জানানো আবশ্যক।
জোবায়ের আহমেদ