ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’

ড. আলা উদ্দিন

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২৫ জুন ২০২৪

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’

পেনশন হলো একটি অবসরকালীন সঞ্চয় পরিকল্পনা বা তহবিল

দেশের যে কোনো আইন, সুযোগ-সুবিধা সর্বজনীন করতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন এর থেকে সুবিধা পায়। তাহলে প্রতিদানস্বরূপ দেশও তার কাছ থেকে সেবা ও ভালোবাসা পাবে। ফলশ্রুতিতে দেশ ও দেশের মানুষ উভয়ই উপকৃত হবে। তবে কোনোকিছু যেমনি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, তেমনি কারও জন্য প্রযোজ্য, কোনো কোনো পেশা এর আওতামুক্ত- এ জাতীয় বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ কোনোভাবেই সমীচীন নয়। দেশের কোনো অংশকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে অন্য অনেক খাতকে কম গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়

পেনশন হলো একটি অবসরকালীন সঞ্চয় পরিকল্পনা বা তহবিল, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে নিয়মিতভাবে অর্থ সরবরাহ করে বা আয় প্রদান করে। বিদেশে এটি বিশেষভাবে সমাদৃত। বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও সম্মানজনক পদ্ধতি হলেও বাংলাদেশে এর প্রক্রিয়া ও তাৎপর্য ভিন্ন। দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার পেনশনের ওপর নির্ভর করে কোনোমতে জীবনের শেষ সময়টুকুতে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে আসছেন। তবে পেনশন গ্রহণ ও আদায় করার প্রক্রিয়া কখনোই সম্মানজনক ও সহজ ছিল না। 
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার অবসর জীবনকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যেতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন- ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’। শুরুতে সবাই উৎসুক থাকলেও এই পেনশন স্কিম ঘোষণার পর স্কিমে নিবন্ধনের হার প্রমাণ করে, যেভাবে শুরু হয়েছে সেভাবে এটি সর্বজনীন ও সবার জন্য সম্মানজনক প্রতীয়মান হয়ে উঠতে পারেনি। হতাশা, শঙ্কা ও বৈষম্যের গন্ধ রয়েছে এই উদ্যোগের মধ্যে। প্রথমে নাম নিয়েই কথা বলি, বলা হয়েছে ‘সর্বজনীন’। ‘সর্বজনীন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সবার জন্য।

আরেকটু বড় করে বললে বলা যায়, সবার মঙ্গলের জন্য নিহিত বা উদ্দিষ্ট। সর্বজনীন পেনশন বললে বোঝায় বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য। তবে এক্ষেত্রে বয়স-বিভাজন থাকতে পারে, সেটি যৌক্তিক বটে। যেমনÑ ১৮-৬০ বৎসর। কিন্তু বিভিন্ন পেশার মধ্যে বিভাজন এনে যেভাবে উঁচু-নিচু ক্রম সৃষ্টির কৃত্রিম প্রক্রিয়া পরিদৃষ্ট হয়েছে, তা কোনোভাবেই সর্বজনীন তো নয়ই, রীতিমতো বৈষম্যমূলক। তাই দেশজুড়ে প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের ডাক এসেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে।
ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি কর্মচারীদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণা করেছে। এটি জনবান্ধব কিনা, জনগণের আর্থিক সক্ষমতায় এটি কতটা যৌক্তিক ইত্যাদি ছাপিয়ে যে বিষয়টি সবাইকে হতাশ ও শঙ্কিত করেছে, তা হলো কার্যত এটি সর্বজনীন নয়।

বিশেষ করে আমলাসহ কয়েকটি সংস্থার জন্য এই স্কিম বাধ্যতামূলক না হওয়ায় (তাদের জন্য বিদ্যমান সুবিধাদি অক্ষুণœ রেখে আওতামুক্ত রাখা হয়) বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। অথচ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নতুন যুক্ত হওয়া প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী জুলাইয়ের পর স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে যারা যোগদান করবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিমে যুক্ত করা হবে।

কোনো কোনো পেশাকে এর আওতামুক্ত রাখা কোনোভাবেই সর্বজনীনতার পরিচায়ক নয়। কোনো পেশার মানুষকে এই স্কিমের আওতামুক্ত করার অর্থ হয় তাদের বঞ্চিত করা  কিংবা তাদের স্থান সবার ওপরে। তাই সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে তাদের এক কাতারে ফেলা অনুচিত। তারা কি আইভরি টাওয়ারের বাসিন্দা?
বাংলাদেশে প্রচলিত চর্চা অনুযায়ী সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগ ও আমলাতন্ত্রকে এই তথাকথিত ‘সর্বজনীন’ স্কিমের আওতামুক্ত রেখে যখন স্কিমটিকে সর্বজনীন নাম দেওয়া হয়, তখন এর আসল অর্থ, তাৎপর্য ও অন্য পেশাজীবীদের বৈষম্যের কথা কাগজে-কলমে লেখা না থাকলেও সহজেই তা অনুমেয়। সম্প্রতি সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না।

তাদের সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে বাধ্যতামূলকভাবে আওতাভুক্ত করা হবে। উল্লেখ্য, সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণার সময় কিন্তু ‘প্রত্যয়’ স্কিমের নাম শোনা যায়নি। এটি কোথা থেকে আমদানি হলো, কারা এর উদ্ভাবক এবং কাদের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমটি সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দুরভিসন্ধি নয় তো?
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ এই পেনশন স্কিমের কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে তাদের সঙ্গে একবার আলাপ করার প্রয়োজন বোধ না করারই বা কী কারণ তা বোধগম্য নয়। সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগ ও আমলাদের জন্য বিদ্যমান পেনশনসহ সুবিধাদি অপরিবর্তিত থাকবে। যদিও বাজেটে বলা হয়েছে, সবাইকে জুলাই ২০২৫ থেকে পেনশনের নতুন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাহলে এই বিভাজন কেন? অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন না করলে ভবিষ্যতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পেনশন সুবিধা বঞ্চিত হবেন। এমন দ্বৈত নীতিতে কোন্ নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত?
বৈষম্যমূলক ধারাটি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পেরে এই স্কিমটি ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক পরিবর্তিত (২০১৫ বেতন কাঠামো গঠনের প্রাক্কালে নানা অবজ্ঞাসূচক আলোচনায় পরিলক্ষিত) যে মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছে, তার পর এই বৈষম্য শিক্ষক সমাজকে চরমভাবে ব্যথিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ইতোমধ্যে সরকারকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে যে, এই বৈষম্যমূলক স্কিম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এর ফলে ভবিষ্যতে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় আকর্ষণ বোধ করবেন না।
এমনিতেই আমলানির্ভর সমাজ-সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার দৌরাত্ম্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আগের সেই জৌলুস-সম্মান ও মর্যাদা নেই। ফলে, আগে যেটা উল্টো দেখা যেত, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেও বিসিএসের চাকরিতে যোগদান করতে দেখা যায়। এই বৈষম্যমূলক ও বিশেষ মহল প্ররোচিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত স্কিম বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সরকারকে পুরো বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সরকার তো সবার জন্য, আর সর্বজনীন শব্দের অর্থও সবার জন্য।

আমলাসহ কোনো কোনো পেশার মানুষ কেন  ‘আইভরি টাওয়ারে’ অবস্থান করবেন? এমতাবস্থায় শিক্ষকতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বৃদ্ধির দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না করে, উল্টো তাদের ভবিষ্যৎকে হতাশাজনক ও অন্ধকারাচ্ছন্ন করার উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষক সমাজ আজ উদ্বিগ্ন। 
গুঞ্জন রয়েছে, আমলারা নাকি তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ও চান! হয়তো সেখানে উপাচার্যসহ নানা পদে আসীন হওয়ার জন্য অনেকে পিএইচডি ডিগ্রিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন।

তবে একটু যদি চিন্তা করি, আজ থেকে তিন দশক আগে যদি আমলাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় থাকত, এখন যারা আমলা তাদের কতজন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুযোগ পেতেন? কিংবা যদি অন্যভাবে বলি, তাদের কতজন আমলা হওয়ার সুযোগ পেতেন! আমলারা নিজেদের এমন পৃথক ভাবনা ও অবস্থানে নিয়ে প্রকারান্তরে নিজেদের সমূহ ক্ষতির ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন- তাদের স্বার্থে, দেশের প্রয়োজনে।

যাতে করে আমলাসহ সবার দেশের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে। আমলারা ভিন্নগ্রহ থেকে আসেননি। ভিন্নগ্রহে থাকেনও না। তারা তো আমাদের সমাজেরই মানুষ। আমাদের পরিবার-পরিজন। তবে কেন এই বিভাজন? আমলাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা যদি দাবি করেন, স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করতে হবে, তাহলে বাইরের কতজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে? জনগণের টাকায় পরিচালিত কোনো প্রতিষ্ঠানে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকা কাম্য নয়। তাই পেনশনের ক্ষেত্রেও অযৌক্তিক বিভাজন ও বৈষম্য দূর করা এখন সময়ের দাবি।    
শুরুতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হলেও আমলাপ্রীতি, অস্পষ্টতা, বৈষম্য ইত্যাদি কারণে পেনশন প্রকল্পটি শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ার দশায় পড়েছে। যেখানে ১০ কোটি মানুষ পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সেখানে প্রথম ১০ মাসে কেবল এক লাখের কিছু বেশি মানুষ পেনশন স্কিমে নাম নিবন্ধন করেছেন। কারণ, এটি যে সর্বজনীনতা পায়নি, দেশের মানুষ তা জানে।

আমলাসহ কয়েকটি খাতকে এর আওতামুক্ত রাখায় কেবল শিক্ষক সমাজ নন, জনমনে পেনশন স্কিম নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনার শুরুতে বলা হয়েছিল, এই স্কিমটি বাধ্যতামূলক নয়। আট-দশ বছর মানুষ যখন এর সুবিধা বুঝতে পারবেন, ধীরে ধীরে সবাই নিবন্ধন করবেন। কিন্তু এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক করার যুক্তিই বা ভিত্তি কী?  
মোটকথা হলো, দেশের যে কোনো আইন, সুযোগ-সুবিধা সর্বজনীন করতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন এর থেকে সুবিধা পায়। তাহলে প্রতিদানস্বরূপ দেশও তার কাছ থেকে সেবা ও ভালোবাসা পাবে। ফলশ্রুতিতে দেশ ও দেশের মানুষ উভয়ই উপকৃত হবে। তবে কোনোকিছু যেমনি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, তেমনি কারও জন্য প্রযোজ্য, কোনো কোনো পেশা এর আওতামুক্ত, এ জাতীয় বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ কোনোভাবেই সমীচীন নয়। দেশের কোনো অংশকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে অন্য অনেক খাতকে কম গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। আমলারা প্রশাসনে আছেন বলে সকল নিয়ম, নীতি ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে তাদের যদি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তা হবে বৈষম্যমূলক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো বৈষম্যমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেননি। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘সোনার বাংলা’র। বৈষম্যমূলক নীতি ও আচরণ দিয়ে ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়ন করা কোনোদিন সম্ভব হবে না। তাই সর্বজনীন নাম দিয়ে যে অ-সর্বজনীন ও বিভাজিত স্কিম ঘোষিত হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনাকরত প্রকৃতপক্ষে জনবান্ধব পেনশন স্কিম প্রবর্তন সময়ের দাবি। 
প্রসঙ্গত উল্লেখ না করলেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুগ্রহ নয়। জাতির প্রয়োজনেই তা বাস্তবায়নে সরকারকে  উদ্যোগী হতে হবেÑ আমলারা চান বা না চান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে জ্ঞাননির্ভর, গবেষণাকেন্দ্রিক শিক্ষাঙ্গনে পরিণত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হৃত সম্মান ও মর্যাদা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠমো, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেড  প্রদান ও অপরাপর সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি করাও এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, উপাচার্য নিয়োগ, শিক্ষকদের পদোন্নতি ইত্যাদি যেন নিয়মানুগভাবে হয়, তা নিশ্চিত করার প্রতিও সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে (বিশেষ করে চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্যগণের কর্মকা-ের  বাস্তবতায়) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপাচার্য, তার বলয়Ñ সকলকে স্বায়ত্তশাসনের মধ্যেও জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। 
একইভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মতো এমন মহতী উদ্যোগের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদাহানিকর ও পদাবনতিসূচক নীতি একেবারেই বেমানান। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকতার ধারা, চাকরির মেয়াদ, প্রতিশ্রুত বেতন স্কেল ও সুপারগ্রেড, গবেষণার সুযোগ-সুবিধা, পেনশন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ না করে পেনশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাঞ্ছনীয় নয়। সরকারের এই জনকল্যাণমূলক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

কিন্তু প্রশাসন ঘনিষ্ঠ কোনো বিশেষ মহলের প্ররোচনায় উদ্যোগটি যেন জনভোগান্তি, ভয়, শঙ্কা বা বৈষম্যসূচক নীতিতে পর্যবসিত না হয়Ñ সরকারকে সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কোনো মহল বা পেশাকে অত্যধিক গুরুত্ব না দিয়ে সবার জন্য সমতাভিত্তিক ও সম্মানজনক নীতি গ্রহণ আবশ্যক। বৈষম্যমূলক নিয়ম দ্রুত বন্ধ করে সবার জন্য সমতাভিত্তিক, মঙ্গলজনক ও সবার জন্য প্রযোজ্য (সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন) নীতি বাস্তবায়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।


লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

×