
.
বিদেশী ফলের বাজারেও পরিলক্ষিত হচ্ছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। বিগত রোজা থেকেই বিদেশী ফলের দামে উল্লম্ফন ঘটে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম। বাজেটে বাড়তি করারোপসহ নানা ইস্যু মিলিয়ে ওৎপেতে থাকা অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছে ফলের দাম।
বিদেশী সকল ফলই সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে। আপেল, মাল্টা ও ড্রাগনের দাম কিছুকাল আগেও ২’শ টাকার মধ্যে ছিল, যা এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪’শ টাকায়। এসব ফল বর্তমানে দেশেও কিছু উৎপাদন হচ্ছে। এরপরও দাম কমছে না। ফল ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দেশে শুষ্ক ফল বা ড্রাই ফুটস এবং তাজা ফল বা ফ্রেশ ফুডস-এ দুই ধরনের ফল আমদানি করা হয়। কাস্টমস হাউজের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মাল্টা, ১৪ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন আপেলের পাশাপাশি ১৯ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন অন্যান্য ফল আমদানি হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা। দেশে ২৫ থেকে ৩০ জাতের বিদেশী ফল আমদানি হয়। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় খেজুর, আপেল, মাল্টা, আঙুর, কমলা, আনার, নাশপাতি, ড্রাগন, কেনু, থাই পেয়ারা, থাই পেঁপে ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৬টি দেশ থেকে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর, নাশপাতি, ডালিমÑ এই ছয়টি ফল আমদানি হয়। এর মধ্যে ভারত, চীন, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটান, মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা অন্যতম। সুইট মিলান, এবাকাডোর মতো কিছু অপরিচিত দামি ফলও আমদানি করা হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে ফল আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে-বিদেশী ফল এসেছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন। ডলার সংকট হওয়ায় গত বছরের মে মাসে ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক আরোপ করে এনবিআর। বাংলাদেশ ব্যাংকও আমদানিতে ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে খুচরা ও পাইকারি বাজারে প্রায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে ফল বিক্রেতারা। অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দুর্নীতির জাল প্রতিটি খাদ্যপণ্যের ওপর ছড়িয়ে পড়ছে। এখন মাছ-মাংস থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী ফল সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। প্রশ্ন ওঠে, তবে দেশের ফলে কিসের প্রভাবে দাম বেড়ে যায়! ঋতুভিত্তিক ফলেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়। কয়েক মাস আগে তরমুজ কেজি হিসেবে বাড়তি দামে বিক্রি করে তরমুজ ব্যবসায়ীরা। ফলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জরিমানাও করে। দেশী ফলের উৎপাদন, বিপণন ও সংরক্ষণে মাঠপর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।
অন্যদিকে বিদেশী ফলের ক্ষেত্রে পিআইয়ের মাধ্যমে আলাদাভাবে প্রতিটি পণ্যের বিবরণ, মান, ব্র্যান্ড, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেজিং সংক্রান্ত তথ্য ও গ্রেড (যদি থাকে), যা দ্বারা পণ্যের গুণগত মান নির্ণয় করা যায়Ñ সেগুলোর ইউনিট প্রতি মূল্য ও পরিমাণ উল্লেখসহ ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।