
সুশীল সমাজ কি চান? মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, নাকি মুক্তিযুদ্ধের শত্রুর মিত্রতা
সুশীল সমাজ কি চান? তাদের যদি বেছে নিতে বলা হয়- মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এ দুটির মধ্যে, তাহলে কোন্টি তারা চাইবেন? মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, নাকি মুক্তিযুদ্ধের শত্রুর মিত্রতা- কোন্টি চাইবেন তারা? মানবাধিকার লঙ্ঘন কখন হয়? হেফাজতের সঙ্গে জামাত-বিএনপি’র গু-াদের তা-বে, হামলায় এবং পরে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়িয়ে বলা এবং শরিয়া রাষ্ট্র, নারী স্বাধীনতাবিরোধী হেফাজতের পক্ষে মিথ্যা প্রচারণা চালানো কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? ঐ সংস্থার কর্মকর্তাদের বিচারে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়? হোয়াইট হাউসে তা-ব চালানো ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের কেন বিচার হচ্ছে? এ বিচার কি মানবাধিকার লঙ্ঘন?
জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এবারের নির্বাচনের প্রতি বিদেশী রাষ্ট্র, সরকার এবং তাদের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূতদের অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কেন্দ্রে অবস্থান করা এর একটি কারণ। কিন্তু বাংলাদেশকে তার জন্মের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যেমন ঐতিহাসিক অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হবে, তেমনি অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য দেশের উন্নয়ন সহযোগী অন্য সব দেশের সঙ্গেও বন্ধুত্ব রাখতে হবে। এটিই বাংলাদেশের বাস্তবতা, যেটি সবচাইতে ভালোভাবে বুঝে সে লক্ষ্যে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একটি কথা বারংবার বিদেশী ও দেশী সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি-গোষ্ঠীর মুখে শোনা যাচ্ছে- তারা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এর মধ্যে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন। এতে সরকারেরও ভূমিকা আছে, বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও আন্তরিক আগ্রহ প্রয়োজন। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের তেমন ভূমিকা নেই। নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক সব দল। দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে নির্বাচনে যারা বা যে দল অংশগ্রহণ করবে, স্বাভাবিকভাবে তারাই নির্বাচিত হবে।
বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি এবং এর সঙ্গে পুরনো ও নতুন কয়েকটি দল জোটবদ্ধ হয়ে দাবি তুলেছেÑ তারা অত্যন্ত জনপ্রিয় শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকরের অধীনে নির্বাচন চায়। সরকারি দল ২০০৬-এর বিএনপিপন্থি লতিফুর রহমান সরকারের তত্ত্বাবধায়কের ‘দলীয় কত’Ñরূপ দেখেছে। সে নির্বাচনে ঐ তত্ত্বাবধায়ক, ঐ নির্বাচন কমিশনও বিদেশী শক্তির প্রভাবে বিএনপি জয় লাভ করে যে ভয়াবহ হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন চালিয়েছিল দেশব্যাপী, তা দেখে জনগণ তত্ত্বাবধায়ক বললেই সেই গা শিউড়ানো অকল্পনীয় নির্যাতনের চিত্রগুলো দেখতে পায়।
তখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি বিতর্কিত হয়। এরপর ২০০৬-এ খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কি¤ু¢ত অস্বাভাবিক পন্থাগুলো দেখে যখন আমরা রাস্তায় নেমেছি, তখন প্রেসিডেন্ট ইয়াজুুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার কা-টিও দেখেছি। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ চিহ্নটি ধ্বংস হলে আমরা এবং শত শত পেশাজীবী প্রতিদিন রাজপথে প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দীনের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানে মুখর ছিলাম। যার পরিণতি- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সুশীল সমাজকে মনে রাখতে হবে, সুষ্ঠূ ভোটের প্রধান শর্ত সঠিক ভোটার তালিকা। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে ভোটারের ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি হলে দেখা যায়, খালেদা-তারেক সোয়া এক কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল।
এগুলো সে সময় বাদ পড়ে। ভোটার তালিকা ছবিসহ তৈরি হচ্ছে বলে বর্তমান ভোটার তালিকা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করবে। দ্বিতীয়ত, ভোটকেন্দ্র বহিরাগত মুক্ত রাখতে নির্বাচন কমিশনকে সক্ষম হতে হবে।
সুশীল সমাজের প্রধান কাজটি হচ্ছেÑ ভিন্ন মতাবলম্বী সরকারি ও বিরোধী দলগুলোকে আলোচনা বা সংলাপে বসানোর আয়োজন করা। এ কাজটি বিদেশীদের কাজ নয়। বরং এটি আমাদের দেশের শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, রাজনীতিবোদ্ধা ব্যক্তিদের কর্তব্য। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেরা এই বিপরীতমুখী রাজনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কিছু ফর্মুলা উদ্ভাবন করে কিছু বর্জন, কিছু সংযোজন করে কয়েকটি ফর্মুলা চূড়ান্ত করতে পারেন। তবে ব্যক্তিগত ধারণা, বিএনপি দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
কিন্তু কিছু ব্যক্তি নির্বাচন করতে আগ্রহী হয়ে প্রার্থী হতে পারে। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে হবে- ২০০১ ও ২০০৬ -এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে গণতন্ত্রকে বিএনপিই ধ্বংস করেছিল। এখন আবার তারা সেই বিনষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর চাইতে পারে না। তারা আবার, ২০১৪-১৫তে খালেদা জিয়ার নির্বাচন হতে না দেওয়ার মতোই ঘোষণা দিচ্ছে, যেটি তাদের জন্য গণতন্ত্র বিরোধিতা ও অপরাধ। নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যদিও এটি গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। কিন্তু বিএনপি যে নির্বাচন হতে না দেওয়ার লক্ষ্যে আগুন-সন্ত্রাস, অবরোধ, বৃক্ষ, রাস্তাঘাট বিনষ্ট, স্কুল ঘর জ্বালানো, বাস-ট্রাক-লঞ্চ জ্বালানো, স্থানীয় নেতাকর্মীদের হত্যা ইত্যাদি অপরাধ সংঘটন করেছিল, তা খুব দূরবর্তী স্মৃতি নয়।
জনগণ নিশ্চয় পৈশাচিক ঐসব ঘটনা ভুলে যায়নি। বিএনপি যেন ‘নির্বাচন হতে না দেওয়ার’ অপরাধমূলক পথে না হাঁটে- সেটি নিশ্চিতে সুশীল সমাজ কাজ করলে জাতি উপকৃত হবে। এ অপরাধে বিএনপিপন্থি নেতাকর্মীদের মামলায় আসামি হতে হবে, যা কারও কাম্য নয়। উল্টো তাদের অগণতান্ত্রিক রাজনীতি নতুন করে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। সুশীল সমাজ বিএনপিকে দেশের স্বার্থে গঠনমূলক রাজনীতির চর্চা করতে সম্মত করাতে আলোচনা করতে পারে।
সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ’৭৫-এর বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যা, সেনা ও বিমান বাহিনীতে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যের বিচারহীন ফাঁসি, খালেদ মোশাররফসহ সেনাকর্মকর্তা হত্যা, ব্রি. জেনারেল মঞ্জুর হত্যা ও তেরোজন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি- বিশাল একটি কলঙ্কজনক কালো অধ্যায় তৈরি করেছে। এর ফল হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা স্লোগান এবং আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক ধর্ম-নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠনের আদর্শ মুছে ফেলা।
এর একুশ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান- জয়বাংলা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তাঁর ভাষণ, আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ ফিরে এসেছিল! পৃথিবীর কোনো জাতি ও দেশ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এভাবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের হাতে দখল হয়নি, যেমনটি বাংলাদেশে হয়েছিল। শত্রু পুনর্জীবিত হলে, শক্তিবান হলে, যা হওয়ার তাই হয়েছে। সুশীল সমাজের একটি কর্তব্য- বিদেশীদের অবহিত করা এসব সত্য ঘটনা এবং এর ফলে উদ্ভূত রাজনৈতিক বর্তমান অবস্থা। দেখা যাচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবাহী দলগুলোই এক অসমতল মাঠে দাঁড়িয়ে আছে এবং আবারও স্বাধীন বাংলাদেশের মূলনীতি রক্ষার লক্ষ্যে যে শত্রুদের বিচার ও নির্মূল হওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে এখনো লড়াই করতে হচ্ছে।
এর চেয়ে দুঃখের এবং কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করা আর কি হতে পারে! গ্রাম থেকে শহরের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো কতরকমের বাধা-বিঘেœর সম্মুখীন হয়েছে। রাজাকারদের ক্ষমতাবান হয়ে করা অন্যায়ের পর অন্যায় ঘটনার কাছে ক্ষমতাহীন হয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকা, জীবিকার লড়াই করতে বাধ্য হয়েছেÑ তা কি বিদেশীরা জানে? তাদেরকে এসব তথ্য জানানো সুশীল সমাজের কর্তব্য।
সুশীল সমাজ কি চান? তাদের যদি বেছে নিতে বলা হয়- মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দুটির মধ্যে, তাহলে কোন্টি তারা চাইবেন? মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, নাকি মুক্তিযুদ্ধের শত্রুর মিত্রতা- কোন্টি চাইবেন তারা? মানবাধিকার লঙ্ঘন কখন হয়? হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত বিএনপি’র গু-াদের তা-বে, হামলায় এবং পরে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়িয়ে বলা এবং শরিয়া রাষ্ট্র, নারী স্বাধীনতাবিরোধী হেফাজতের পক্ষে মিথ্যা প্রচারণা চালানো কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? ঐ সংস্থার কর্মকর্তাদের বিচারে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়? হোয়াইট হাউসে তা-ব চালানো ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের কেন বিচার হচ্ছে?
এ বিচার কি মানবাধিকার লঙ্ঘন? হেফাজতি তা-বের মিথ্যা প্রচারণাকারীদের বিচারের সময় চারজন বিদেশী দূতাবাস কর্মকর্তার উপস্থিতিই তো প্রমাণ করে, মিথ্যা প্রচারের পক্ষে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো অবস্থান নিয়েছে! নিশ্চয় তারা হেফাজতের তা-বের আসল ফুটেজ দেখেনি! না দেখলে ’৭১ টিভির ঐ রাতের ও পরের দিনের ফুটেজ দেখতে বলব। এত উদ্বিগ্ন কেন তারা? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এই সেদিন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখতে গিয়ে ১৫ আগস্টে একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে গিয়ে এতজন তরুণ পুত্র, শিশু পুত্র, পুত্রবধূ, স্ত্রী এবং অন্য স্বজনদের হত্যার ঘটনা জেনে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন। হওয়ারই কথা। কারণ, অন্যান্য সব দেশে যেখানে ক্যু হয়েছে বা প্রেসিডেন্টকে সরানো হয়েছে, সেখানে শুধু প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর কোনো স্বজন হত্যার শিকার হয়নি!
এসব নৃশংস হত্যা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? ২০১৪-১৫ সালের বিএনপির আগুন সন্ত্রাসে দুইশ’র মতো নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীর নিহত হওয়া কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? ’৭৫-এ জেলে নিহত চার নেতা, প্রায় তিন হাজার নিরপরাধ সেনা-বিমান বাহিনীর সদস্যের ফাঁসি, কর্নেল তাহেরের ফাঁসি- এগুলো কি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? মানবাধিকারের প্রবক্তারা এসব হত্যাকা-ে নীরব থাকেন কেন? ২০০৪-এ ইরাক, লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যা অজুহাতে বোমা হামলা করে দুটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশকে, জাতিকে, দেশের প্রেসিডেন্টদের হত্যা কি মানবাধিকার লঙ্খন ছিল না? কেন পশ্চিমা বিশ^ এসব বিষয়ে নীরব, নিশ্চুপ ছিল? এরকম শত শত উদাহরণ দেওয়া যাবে, যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব অদ্ভুতভাবে একটি পক্ষকে বেছে নিয়ে তাকে রক্ষায় তার বিপক্ষকে ধ্বংস করার কোনরকম সুযোগ ছাড়ে না!
তারা কখনোই নিরপেক্ষভাবে ন্যায়কারী-অন্যায়কারীর অপরাধ ও অপরাধের শিকার হওয়াকে বিবেচনায় নেয় না।
এসব আমাদের নিজের চোখে দেখা। বিদেশী পশ্চিমা বসদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে, ওরা যাদের মিত্র ও বন্ধু গণ্য করে, ওরা কোনোভাবেই তাদের কোনো বড় বড় অপরাধকে দেখতে পায় না। দেখেছিÑ ওরা যতই নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলুক না কেন, প্রকৃত নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে কিন্তু ওরা পছন্দ করে না! বরং প্রকৃত নিরপেক্ষ ব্যক্তির পদে পদে অসুবিধা ঘটাতে থাকে। দু’চারজন ব্যতিক্রম বাদ দিলে ওদেরকে এমনই দেখেছি। বর্তমানে বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা কমিয়ে নতুন করে আদালতকে বিতর্কিত ও দলীয় নামাঙ্কিত করার চেষ্টা শুরু করেছে। তাদের এসব বক্তব্য স্পষ্টত আদালত অবমাননা এবং সেজন্য তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা যায়।
সম্প্রতি জনগণ দেখেছে, হেফাজতের পক্ষে পুলিশের গুলিতে যে সংস্থা ৬১ ব্যক্তি মারা গেছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছিল, তারা সেসব ব্যক্তির নাম, ঠিকানা প্রদান করতে পারেনি। বরং ’৭১-এর ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি নিহত, আহতদের প্রকৃত নাম, ঠিকানা বের করে তাদের স্বজনদের একটি আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ করে বক্তব্য শোনে এবং অনেককে আর্থিক সহায়তা দেয়। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ১৩ পুলিশ মারা গিয়েছিল। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অনুযায়ী ৬ পুলিশ, ৩৯জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।
অথচ এই মিথ্যা প্রচারকের মাত্র দু’বছর জেলের রায় নিয়ে মহা উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন! এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেনের পুত্রের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য বিচার শুরু হয়েছে, যা প্রমাণিত হলে কয়েক বছরের জেল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের আদালত নিয়ে কোনো মন্তব্য অবশ্যই করবে না ইউরোপ! সুশীল সমাজকে বিদেশীদের এ ধরনের দ্বৈত নীতির প্রতি দৃষ্টি দিতে এবং বাংলাদেশের যথেষ্ট যোগ্য বিচারপতিদের দ্বারা পরিচালিত বিচার কাজ যে তথ্য উপাত্ত, প্রমাণ নির্ভর রায় প্রদান করে চলেছে- তার প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।
বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধী দল ও ব্যক্তির সঙ্গে জোট বাঁধাকে রাজনীতির পক্ষে একটি কলঙ্কজনক বাধা- এই বিষয়ে তাদেরকে বর্তমান অবস্থান থেকে সরে এসে সুস্থ, স্বাভাবিক, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক রাজনীতি চর্চায় নিয়োজিত হতে সুশীল সমাজ বাস্তব পরামর্শ দিতে পারে। কোনো দেশে যুদ্ধাপরাধী রাজনীতি করে- এ দৃশ্য কোনো দেশের সুশীল দেখেনি, জনগণও দেখেনি। তাছাড়াও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাকে চিরতরে বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করা দরকার। যেমনÑ কোনো দল দু’বারের বেশি নির্বাচন বর্জন করতে পারবে না। করলে তাদের নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে। বিদেশীদের প্রশ্ন করতে হবে, কেন আমাদের দুর্নীতিবাজদের পাচারকৃত অর্থ তারা তাদের ব্যাংকে রাখছে? মানিলন্ডারিংয়ে যে দেশ থেকে টাকা যাচ্ছে এবং যে দেশে যাচ্ছে তা উভয় দেশের ক্ষেত্রেই কি দুর্নীতি নয়?
লেখক : শিক্ষাবিদ